আমের দিনে তিনবেলাই আম চলতে পারে আমপ্রেমীদের। তবে বিশেষ দিনের উদযাপন বা এমনি এমনি মিষ্টিমুখ করতে আমপ্রেমীদের জন্য পুনিজ কিচেনের এই চোখ জুড়ানো আমের কেকগুলোর চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না।
আমের ভরা মৌসুম এখন। এমনই এক আমময় সন্ধ্যায় আমদুধের বাটি হাতে অন্তর্জালে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে চোখ আটকে গেল বৈচিত্র্যময় সব ডিজাইনের চোখ জুড়ানো আমের কেকের ওপর। এ বলে আমাকে দেখ, তো ও বলে আমাকে। নজরে পড়ল বেকিং উদ্যোগটির নাম। পুনিজ কিচেন। ঢাকার কেকপ্রেমীদের কাছে নামটি বেশ সমাদৃত। কিন্তু এই আমের কেকগুলো যেন একেবারেই অন্য মাত্রার।
আমাদের দেশে সাজসজ্জা করা কেক দিয়ে বিশেষ দিন উদযাপনের সংস্কৃতি খুব বেশিদিনের নয়। আগে জন্মদিন, বার্ষিকী বা যেকোন আনন্দ উপলক্ষে মিষ্টিমুখ করতে মিষ্টি বা পায়েসই খাওয়া হতো। তবে ষাটের দশক থেকে পূর্বাণী বা ইন্টারকন্টিনেন্টালের মতো বড় বড় তারকাখচিত হোটেলের বেকিং এক্সপার্টদের কল্যাণে ক্রিম দিয়ে সাজানো কেকের প্রচলন ঘটে সমাজের ওপরের তলার মানুষের মাঝে। সে সময় হোমবেকারদেরও যাত্রা শুরু হয় এদেশে। অনেকের ঘরে তখন দেশি প্রযুক্তিতে বানানো, বালি দিয়ে বেক করার ওভেন থাকতো। ক্বচিৎ কখনো ইলেকট্রিক ওভেনেরও দেখা মিলত। পশ্চিমা কায়দায় মোমবাতি জ্বালিয়ে কেক কেটে জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকী উদযাপনের চলটা স্বাধীনতার পরে আশির দশকে একেবারে ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। ততদিনে হোটেল গোল্ডেন গেট বা অধুনালুপ্ত জিজি, ইউসুফ বেকারি, আনন্দ বেকারিসহ অনেক জায়গায় ক্রিম দিয়ে সাজানো কেক পাওয়া যেত চাইলেই। তবে দেশের বেকিং জগতে অনলাইন উদ্যোগ আর হোম বেকাররা এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন কেক সংস্কৃতিকে আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করতে। এমনই এক গল্প জানা গেল ঢাকার সুপরিচিত বেকিং উদ্যোগ পুনিজ কিচেনের আদ্যোপান্ত জানতে গিয়ে।
২০১২ সালে বোনের জন্মদিনে কেক বানাতে গিয়ে এই উদ্যোগের প্রাণভোমরা উম্মে আকলিমা আলমের মাথায় বেকিং উদ্যোগের ভাবনা আসে। নিজের আদুরে ডাকনাম পুনি থেকে ২০১৩ সালে পুনিজ কিচেনের যাত্রা শুরু হয়। এখন শুধু কেক নয়, বিভিন্ন রকমের বেকড খাদ্যপণ্য তৈরি করা হয় পুনিজ কিচেনে। আর আকলিমার সঙ্গে এই উদ্যোগে রয়েছেন তাঁর জীবনসঙ্গী আবু হেনা মোস্তফা কামাল।
তাঁদের দুজনের পরম যত্নে গড়া এই পুনিজ কিচেনকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন আছে আকলিমা আর আবু হেনার। একদিন বিশ্বমানের বেকিং প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট তৈরি করবেন, আর একটি ছিমছাম ঘরোয়া ক্যাফে হবে- এমন সব স্বপ্নই এই বেকিং যুগলকে কাজের প্রেরণা যোগায়। ইতিমধ্যে পুনিজ কিচেন বেশ কিছু প্রশিক্ষণ, কর্মশালা আর ক্লাস নিচ্ছে বেকিং বিষয়ে। কাস্টোমাইজড কেক তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য। আর এই আমের কেকগুলো দেখলে আমপ্রেমীরা উদ্বেল হয়ে উঠবেন,এ কথা বলাই যায়।
আকলিমার কাছ থেকে জানা গেল, এই কেকগুলোর ভেতর-বাহির আমে ঠাসা, আর তা নানা রূপে। প্রথমেই শুরু করা হয় তুলতুলে ম্যাঙ্গো স্পঞ্জ কেক দিয়ে। এতে ফিলিং দেওয়া হয় ক্রিম চিজ আর কিউব করে কাটা আম দিয়ে। এর পর সিরাপ হিসাবে সেই আমের রসই ব্যবহার করা হয়।
ইতালিয়ান মেরাং বাটারক্রিমের চুড়ান্ত ফ্রস্টিং দিয়ে এরপর আবার অভিনব সব চোখ জুড়ানো ডিজাইনে আমের টুকরা দিয়ে সাজানো হয় কেকগুলো। আমের উদযাপনের এর চেয়ে ভালো উদাহরণ আর আছে কি? চাইলেই এই আমের কেকগুলো অর্ডার করা যাবে পুনিজ কিচেনের পেজ থেকে। পেজ লিংক https://www.facebook.com/PunizzKitchen
এবারে পুনিজ কিচেনের ম্যাঙ্গো কেকের কিছু নমুনা ডিজাইন দেখে নেওয়া যাক। এই ডিজাইনগুলোর বাইরেও কাস্টোমাইজ করে নেওয়া যাবে কেকের সাজসজ্জা।
ছবি: আবু হেনা মোস্তফা কামাল