কেমন হয় নিখুঁত প্লেটিংয়ের সায়েন্স ও আর্ট
শেয়ার করুন
ফলো করুন

খাবারের স্বাদ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ এর উপস্থাপনও। একটি সুসজ্জিত প্লেট কেবল খাবারের আকর্ষণ বাড়ায় না; বরং খাবারকে উপভোগ করার জন্য আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে সজাগ ও উদ্দীপ্ত করে। প্লেটিংকে তাই আর নিছক সৌন্দর্যের কোনো বিষয় হিসেবে দেখা হয় না; বরং এতে আমাদের সাইকোলজিক্যাল বিষয়গুলোও জড়িয়ে রয়েছে। রঙের সাইকোলজি, গঠনের ভারসাম্য এবং বিন্যাসের সঠিক ব্যবহারই এর মূল ভিত্তি। জেনে নিন, কীভাবে সায়েন্সের সঙ্গে সৃজনশীলতার মেলবন্ধনে তৈরি হয় নিখুঁত প্লেটিং।

বিজ্ঞাপন

খাবারের রং আমাদের মস্তিষ্কে কীভাবে প্রভাব ফেলে?

কখনো খেয়াল করে দেখেছেন, লাল বা কমলা রঙের সস সাদা প্লেটেই কেন এত আকর্ষণীয় দেখায়? এটি কিন্তু কোনো কাকতালীয় বিষয় নয়। রঙের সাইকোলজি বা মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী প্রতিটি রং আমাদের মস্তিষ্কে আলাদা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। লাল, কমলা, হলুদ রং ক্ষুধা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। নীল বা সবুজ রং মানসিক প্রশান্তি দেয়। তাই স্যুপ, সালাদ বা ডেজার্টের জন্য এই রঙের প্লেটিং বা গার্নিশিং জনপ্রিয়। সাদা প্লেটে গাঢ় রঙের সস বা ফলের টুকরা পরিবেশন করলে তা আরও উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় দেখায়। এটি আমাদের চোখে তীব্র ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট তৈরি করে।

বিজ্ঞাপন

গঠনের ভারসাম্য বা টেক্সচারের খেলা

খাবারের স্বাদ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ এর উপস্থাপনা
খাবারের স্বাদ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ এর উপস্থাপনা

টেক্সচার অর্থাৎ গঠন খাবারের স্বাদকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। তাই একটি নিখুঁত প্লেটিংয়ে বিভিন্ন ধরনের টেক্সচারের ভারসাম্য থাকা জরুরি। এর জন্য কনট্রাস্ট তৈরি করতে হবে। জানতে হবে, একটি প্লেটিংয়ে কোন কোন খাবার রাখলে নজর কাড়ে এবং খেতেও ভালো লাগে।
এ ছাড়া প্লেটিংয়ের সময় লেয়ারিংয়ের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্লেটে খাবার সমানভাবে ছড়িয়ে না রেখে কিছু আইটেম দিয়ে বেস তৈরি করুন। আর আনুষঙ্গিক পদগুলো দিয়ে লেয়ার তৈরি করুন। গার্নিশিংয়ের সাহায্যেও লেয়ার তৈরি করা যেতে পারে।

বিন্যাসের নান্দনিকতা

‘ফ্লেভার ম্যাপিং’ হলো খাবারে বিভিন্ন স্বাদের ভারসাম্য বজায় রাখার একটি কৌশল
‘ফ্লেভার ম্যাপিং’ হলো খাবারে বিভিন্ন স্বাদের ভারসাম্য বজায় রাখার একটি কৌশল

প্লেটিংয়ের ক্ষেত্রে ‘নেগেটিভ স্পেস’ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এতে প্লেটের কিছু অংশ ফাঁকা রেখে মূল খাবারকে হাইলাইট করা হয়, যা খাবারকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে। আবার প্লেটে সিমেট্রিক বা অ্যাসিমেট্রিকভাবেও খাবার সাজানো যায়। সিমেট্রিকভাবে খাবার পরিবেশনে খাওয়ার সময় একধরনের প্রশান্তি অনুভব হয়। অন্যদিকে অ্যাসিমেট্রিক বিন্যাস সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটায়। যখন যেটা প্রয়োজন, সে অনুযায়ী খাবার প্লেটিং করাই সবচেয়ে ভালো। এ ছাড়া কোন ধরনের প্লেটে কোন খাবার রাখবেন, সেটিও জানতে হবে। কারণ, এটা প্লেটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বৃত্তাকার প্লেটে পাস্তা এবং চৌকোনাকার প্লেটে সুশি আর গভীরতাবিশিষ্ট বোলে স্যুপের পরিবেশনা বেশি আকর্ষণীয় লাগে। ব্যাপারগুলো ছোট মনে হলেও এগুলো আপনার প্লেটিংয়ে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।

ফ্লেভার ম্যাপিং বা খাবারের স্বাদ মেলানোর কৌশল

‘ফ্লেভার ম্যাপিং’ হলো খাবারে বিভিন্ন স্বাদের ভারসাম্য বজায় রাখার একটি কৌশল। খাবারের মূলত পাঁচটি মৌলিক স্বাদ আছে—টক, ঝাল, মিষ্টি, লবণাক্ত ও তেতো। এ পাঁচটি স্বাদ ঠিকভাবে মিশিয়ে যখন খাবার পরিবেশন করা হয়, তখন সেটি খেতে যেমন সুস্বাদু হয়, তেমনি এর প্লেটিংও হয়ে ওঠে নিখুঁত।
ফ্লেভার ম্যাপিংয়ের পদ্ধতি মূলত দুটি—ফ্লেভার কনট্রাস্ট ও ফ্লেভার কমপ্লিমেন্টারি। কিছু স্বাদ আছে, যেগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে খুব ভালো যায়। যেমন ঝাল খাবারের সঙ্গে মিষ্টি। সঠিক ফ্লেভার ম্যাপিং আর প্লেটিংয়ের মাধ্যমে খাবার শুধু দেখতে সুন্দর হয় না, খেতেও হয় অসাধারণ। এটিই নিঃসন্দেহে সায়েন্স ও আর্টের মেলবন্ধনের অসাধারণ একটি উদাহরণ। খাবার পরিবেশন থেকে শুরু করে খাওয়া পর্যন্ত পুরোটায় আছে এই দুইয়ের মেলবন্ধন।

ছবি: আকিজ টেবিলওয়্যার

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪: ০০
বিজ্ঞাপন