হিম হিম ঠান্ডায় ধোঁয়া ওঠা হাঁসের মাংস আর রুটি
শেয়ার করুন
ফলো করুন

এই সবকিছু একসঙ্গে পেতে চাইলে আপনি দল বেঁধে চলে আসতে পারেন রাজধানীর ৩০০ ফিটের জয় বাংলা চত্বর, ময়েজউদ্দিন চত্বর ও নীলা মার্কেট এলাকায়। এখানে বিভিন্ন দোকান আছে প্রায় ১০০টি। যার বেশির ভাগেই হাঁস বিক্রি হয়। মাটির চুলায় রান্না করা এসব হাঁসের মাংসের বাটি ২৫০ টাকা। এতে ৫ টুকরা মাংস থাকে। ৩টি ফ্রেশ টুকরা, ১টি লেগ, ১টি হাড়ের টুকরা। ঝোল নেওয়া যাবে ইচ্ছেমতো।

হাঁসের সঙ্গে যা খায়: রুমালি রুটি ৩০ টাকা। চাপ্টি রুটি ২০ টাকা, চিতই ২০ টাকা। চালের রুটি ৩০ টাকা। আছে পার্সেল নেওয়ার ব্যবস্থা। দোকানো দোকানে আছে ওয়ানটাইম পাত্র। সেখানে বক্সও আছে। পার্সেল নেওয়া যাবে। আলাদা দাম রাখা হয় না।

যেসব জায়গার হাঁস: ময়মনসিংহ, শেরপুর, সিলেট ও কিশোরগঞ্জের হাঁস আসে এখানে। প্রতিটি বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। হাঁস চাইলে পরিষ্কার করে নেওয়া যাবে। সে জন্য প্রতিটি হাঁসের পরিষ্কার করতে খরচ হবে ৫০ টাকা।

এ ছাড়া যেসব খাবার: মুরগি দেশি বা লেয়ার ভুনা। গরুর কালোভুনা।

ভর্তা: ধনিয়া, শর্ষে, শুঁটকি, চিংড়ির মাথা, টাকি, আলু, পটোলভর্তা পাওয়া যাবে।

মিষ্টি: এখানে প্রায় ২০–২৫টি মিষ্টির দোকান আছে। ৩০০ থেকে শুরু করে ৮০০ টাকা কেজির গরম–গরম মিষ্টি এখানে বিক্রি হয়। এটাই এখানের প্রধান আকর্ষণ।

ভালো হাঁস চিনবেন কীভাবে: গিয়াস উদ্দিন জামাই–বউ পিঠাঘরের স্বত্বাধিকারী। ভাতিজা সেলিম মিয়া, ভাই পেয়ার আলী, শেলিনা আক্তারকে নিয়ে তাঁর ব্যবসা। তিনি জানান, শীতে হাঁসের তেল বেড়ে যায়। খেতেও ভালো হয়। তবে দেশি হাঁসের মজা বেশি। এখন যে চাষের হাঁস বা ফার্মের হাঁস, তা মজা কম। হাঁসের মাংসে গন্ধ থাকে, তাই আদা আর রসুন বাড়িয়ে দিতে হয়। তাহলে গন্ধ হয় না। এক থেকে দেড় ঘণ্টা কষাতে হয়। এতে হাঁসের মাংসের স্বাদ বেড়ে যায়।

সপ্তাহের সব দিনই খোলা থাকে। সন্ধ্যার পর মানুষের সমাগম হয় বেশি।

কীভাবে যাবেন: রাজধানীর যেকোনো জায়গায় থেকে প্রথমে কুড়িল-বিশ্বরোড যেতে হবে। কুড়িল-বিশ্বরোড নেমে রিকশা বা অটোরিকশা আছে, তাতে চড়ে সরাসরি যেতে পারেন।

আরও যা দেখার আছে: নীলা মার্কেটের আশপাশে এখনো সেভাবে নগরায়ণ শুরু হয়নি বলে খোলা জায়গা অনেক। এখানে অনেকটা সময় কাটিয়ে আসতে পারেন। বিকেলে গেলে সড়কের পাশে লেকের ধারে বসতে পারেন। এ ছাড়া নানা পাখির কিচিরমিচির, সবুজ গাছ দেখে ভালো লাগবে। আছে নানা চায়ের দোকান। মাটির ভাড়ের চা ৫০ টাকা থেকে শুরু।

বিজ্ঞাপন

গরম–গরম মিষ্টি: নীলা মার্কেটে ছোট ছোট ছাউনির নিচে কিছু দূর পরপরই দেখা মেলে গরম মিষ্টির দোকানের। চমচম, রসগোল্লা, বালিশ মিষ্টি, মালাইচপ, সন্দেশ, লেংচা, রাজভোগ—সবকিছুই আছে। দেড় কেজির বালিশ মিষ্টিও পাবেন এখানে। পূর্বাচল মিষ্টান্ন ভান্ডারে সুকুমার বাবু জানান, এখানকার মিষ্টিগুলো টাটকা আর গরম–গরম। নিজের চোখেই দেখে নেওয়া যাবে মিষ্টি বানানো। এখানে অনেকেই শুধু মিষ্টি খেতেই আসেন।

পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান বলেন, একসঙ্গে হাঁসের মাংস বেশি খাওয়া যাবে না। হাঁসের মাংসে প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এ ছাড়া সেলেনিয়াম, আয়রন, নিয়াসিনসহ আরও অনেক খনিজ পদার্থ আছে। হাঁসের মাংসে মাংসপেশির কর্মক্ষমতা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়া রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে। এই মাংস ত্বক ও চুল ভালো রাখে। স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। একসঙ্গে বেশি হাঁসের মাংস খেলে সমস্যা হতে পারে। হাঁসের মাংস চর্বিসমৃদ্ধ। এতে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেতে পারে। যে কারণে আপনার হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই হাঁসের মাংস পরিমাণ মেনেই খেতে হবে।

অনলাইনে হাঁস

রিভার ফিশ প্রতিবছর শীতের মৌসুমে হাঁসের আয়োজন করে। গ্রামে গৃহস্থবাড়িতে পালা দেশি পাতিহাঁস, রাজহাঁস, চীনাহাঁস আনানো হয় এই সময়ে। হাঁস সংগ্রহ করা হয় বাগেরহাটের মোংলার গ্রামাঞ্চল, রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহয়ের গ্রামাঞ্চল থেকে।

ছবি: রিভার ফিশ
ছবি: রিভার ফিশ

রিভার ফিশের উদ্যোক্তা ফারজানা বলেন, ‘হাঁসের পশম গরম পানিতে দিয়ে হাতে বেছে পরিষ্কার করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কারণ, ঢাকার ব্যস্ত জীবনে হাঁস বাছার ঝামেলায় অনেকেই শীতে হাঁসের মাংস খেতে পারেন না। তাই আমরা বেছে পরিষ্কার করে পুড়িয়েও দিই। ঢাকা সিটির ভেতরে ক্যাশ অন ডেলিভারি। ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের যেকোনো স্থানে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হয়। দেশি পাতিহাঁস আফটার প্রসেসিং প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। আর রাজহাঁস, চীনাহাঁস পিস হিসেবে দাম নির্ধারণ হয়। এ ক্ষেত্রে হাঁসের ওজন অনুযায়ী দাম ঠিক করা হয়।

অর্ডারের জন্য রিভার ফিশের আছে ওয়েবসাইট ও ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/123riverfish)।

ছবি: লেখক

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ৫৩
বিজ্ঞাপন