সাগুফতায় আনিস ভাইয়ের নাগা শিঙাড়া: প্রতিদিন বিক্রি হয় ১২ হাজার
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বিকেলের পর থেকেই জমে ওঠে মিরপুরের সাগুফতার ফুড জোন। স্ট্রিটফুডের ভিড়ে সবার চোখ গিয়ে থামে একটি দোকানে। নাগা মরিচের ঝাঁজ আর মচমচে শিঙাড়ার গন্ধেই এখানে প্রতিদিনই ক্রেতার ভিড় জমে ওঠে।

ভাজা হচ্ছে
ভাজা হচ্ছে

ডিওএইচএস হোস্টেলের পাশে, মিরপুরের সাগুফতায় অবস্থিত এই ছোট্ট দোকান। আড্ডার ফাঁকে, চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে অনেকেই আসেন এই দোকানে। মূলত নাগা মরিচের শিঙাড়ার ঝাঁজই তাঁদের টানে। দোকানটি বড় না হলেও এখানে সমৃদ্ধি ও স্বাদের মধ্যে এক বিশাল গল্প লুকানো আছে।

বিজ্ঞাপন

এই দোকানের শিঙাড়ার স্বাদ একেবারেই অনন্য। ভেতরে রয়েছে সুগন্ধি মসলাদার আলুর পুর, যা ঝাল ও মসলার সঠিক সমন্বয়ে তৈরি। বাইরে খাস্তা খামির, যেটি প্রথম কামড়েই মুখে দিলে মুচমুচে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়। এর পরেই আসে নাগা মরিচের ঝাঁজ। আস্তে আস্তে স্বাদকোরকে আবেশ ধরায়। এই কম্বিনেশনই শিঙাড়ার স্বাদকে আরও গুরত্বপূর্ণ আর আকর্ষণীয় করে তোলে।

ব্যস্ত কর্মীরা শিঙাড়া তৈরিতে
ব্যস্ত কর্মীরা শিঙাড়া তৈরিতে

দোকানের পেছনের রান্নাঘরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ব্যস্ততা। ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয় এখানের কর্মীদের কাজ। প্রথমে বড় বড় পাত্রে আলু সেদ্ধ করা হয়। সেদ্ধ আলুর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় মসলার সঠিক সমন্বয়, যাতে প্রতিটি শিঙাড়ায় থাকে ঝাল ও নোনতার নিখুঁত স্বাদ আর মনকাড়া নাগার সুবাসের ভারসাম্য। এরপর শুরু হয় খামির তৈরির প্রক্রিয়া। আটা মাখা, ময়দা ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে নরম ও মচমচে হওয়ার মতো করে খামির তৈরি করা হয়। এরপর আলুর পুর ভরা হয় এবং এটিকে ছোট ছোট শিঙাড়ার আকৃতি দেওয়া হয়। ভাজা হওয়া পর্যন্ত সবকিছু নজরদারির সঙ্গে চলতে থাকে। একেকজন কর্মীর হাতে থাকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব। কেউ খামির তৈরি করেন, কেউ পুর ভরেন, কেউ শিঙাড়ার আকার দেন, কেউবা ভাজেন এবং কেউ কেউ সাজিয়ে ক্রেতার হাতে তুলে দেন। এই প্রক্রিয়া দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টা চলে। এখানে কর্মীরা যত্নের সঙ্গে প্রতিটি শিঙাড়া তৈরি করেন, যাতে ক্রেতারা প্রতিটি কামড়ে পান একই মানের স্বাদ ও খাস্তা টেক্সচার।

বিজ্ঞাপন

প্রতিদিন এই দোকানের সামনে ক্রেতাদের লাইন এতটাই লম্বা থাকে যে, প্রায়ই এখানে কোনো জায়গা ফাঁকা থাকে না। দীর্ঘ অপেক্ষা, উত্তেজনা ও কৌতূহল স্পষ্ট করে এই শিঙাড়ার জনপ্রিয়তা। কেউ এখানে বন্ধুদের সঙ্গে আসেন, কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসেন, কেউ আবার শুধু একাই বসে এই শিঙাড়ার স্বাদ উপভোগ করেন তারিয়ে তারিয়ে। ধানমন্ডি, উত্তরা, পুরান ঢাকা মায় শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে শুধু এই শিঙাড়ার স্বাদ নেওয়ার জন্য। বিকেলের পর থেকে সন্ধ্যার শুরু পর্যন্ত ক্রেতার ভিড় যেন কখনো কমে না এখানে।

আনিস ভাইয়ের এই দোকান এখন ভাইরাল
আনিস ভাইয়ের এই দোকান এখন ভাইরাল

এই দোকানে প্রতিদিন তৈরি হয় প্রায় ১২ হাজার শিঙাড়া। এত সংখ্যক শিঙাড়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয় প্রায় ৭০ কেজি আলু ও ৮০ কেজি আটা। প্রতিটি শিঙাড়ার দাম মাত্র তিন টাকা। বিক্রি থেকে আসা মাসিক আয় সাত–আট লাখ টাকা। এর একটি বড় অংশ চলে যায় এখানে কাজ করা ১৭ জন কর্মচারীর বেতনে।

দোকান মালিক মো. আনিস বলেন, 'প্রথমে শুধু স্বপ্ন ছিল ছোট একটি দোকান খোলার। আজ এই দোকান থেকে ১৭ জনের পরিবার চলে, আর আমি নিজেও স্বনির্ভর। প্রতিদিন ক্রেতাদের হাসি ও সন্তুষ্টি পাই। এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া।'

নাগা শিঙাড়ার এই ছোট্ট দোকান- জীবন্ত গল্প
নাগা শিঙাড়ার এই ছোট্ট দোকান- জীবন্ত গল্প

নাগা শিঙাড়ার এই ছোট্ট দোকান শুধু খাওয়াদাওয়ার জায়গা নয়, এটি এক জীবন্ত গল্প, যেখানে মালিক আর কর্মচারীদের পরিশ্রম আর ক্রেতাদের পরিতৃপ্তি একাকার হয়ে প্রতিদিন বুনে চলে স্বাদকোরক উদ্বেল করা অনন্য গল্প।
ছবি: লেখক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ০০
বিজ্ঞাপন