পদ্মাপারের ৬টি পথখাবারের উপভোগ্য স্বাদ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পদ্মা নদীর তীরঘেঁষা সুন্দর ও ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী এখন দেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহর। বর্তমানে ভ্রমণের পাশাপাশি কোথাও গেলে সেখানকার বিখ্যাত খাবার নিয়ে সবার আগ্রহ থাকে। তাই আজ আমরা রাজশাহীর কয়েকটি বিখ্যাত খাবার নিয়ে আলোচনা করব। পদ্মা নদীর সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি রাজশাহী ঘুরতে এলে কিছু খাবার চেখে দেখতে যেন ভুল না হয়।

বিজ্ঞাপন

কালাই রুটি

রাজশাহীতে গিয়ে কালাই রুটি খাওয়া হবে না সেটা কি হয়?
রাজশাহীতে গিয়ে কালাই রুটি খাওয়া হবে না সেটা কি হয়?

রাজশাহীর বিখ্যাত বা ঐতিহ্যবাহী খাবার যা-ই বলি না কেন শুরুতেই আসবে কালাই রুটির কথা। এটি মূলত মাষকলাইয়ের গুঁড়া ও আতপ চালের আটা বা ময়দা, লবণ ও পানি দিয়ে তৈরি করা হয়। এই রুটির আসল স্বাদ উপভোগ করার জন্য কয়েক পদের ভর্তা ও হাঁসের মাংস খুবই উপযোগী। স্থানীয় লোকজন এই রুটি মরিচের ভর্তা দিয়ে খেয়ে থাকে। রাজশাহীর বাইরে থেকে কেউ এসে এভাবে স্থানীয় উপায়ে রুটি খেতে পারেন না। তাঁদের জন্য হাঁসের মাংস হতে পারে সবচেয়ে ভালো সঙ্গী।

রাজশাহীর মোড়ে মোড়েই মিলবে কালাই রুটির দোকান
রাজশাহীর মোড়ে মোড়েই মিলবে কালাই রুটির দোকান

রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কালাই রুটির দোকান গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন চটকদার সব নাম দোকানের, যেমন কালাইঘর, কালাইবাড়ী, হাঁরঘে কালাই, চাঁপাইয়া কালাই হাউজ ইত্যাদি। এসব দোকান দুপুর থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকে। দোকানভেদে কালাই রুটির দাম পড়বে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। অন্য সব বিভিন্ন ভর্তা ১০-২০ টাকা এবং হাঁসের মাংস প্রতি বাটি ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় পেয়ে যাবেন।

বিজ্ঞাপন

বাটার মোড়ের জিলাপি

ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে এখানকার জিলাপি
ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে এখানকার জিলাপি

দেশের প্রায় সব শহরে জিলাপি পাওয়া যায়। তবে রাজশাহী শহরের এই ঐতিহ্যবাহী জিলাপি অন্য যেকোনো শহরের তুলনায় আপনাকে কিছুটা ভিন্ন স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ করে দেবে। দোকানে কোনো ধরনের সাইনবোর্ড বা নাম ছাড়া প্রতিদিন কয়েক মণ জিলাপি বিক্রি হয় এখান থেকে। এই জিলাপির দোকান প্রায় ৭০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছে। রসে টইটম্বুর এই জিলাপি প্রতি কেজি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। শুধু রাজশাহীবাসীই নয় আশপাশের জেলার মানুষের কাছে এই জিলাপি বেশ জনপ্রিয়।
রাজশাহী নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে ২৫০ গজ দূরে বাটা শোরুমের পাশেই এই দোকান।

কালাভুনা

গরুর মাংসের কালাভুনা এখন জনপ্রিয় রাজশাহীতে
গরুর মাংসের কালাভুনা এখন জনপ্রিয় রাজশাহীতে

রাজশাহীর জনপ্রিয় আরও একটি পদ হলো গরুর মাংসের কালাভুনা। শহরের বিভিন্ন জায়গায় কালাভুনা পাওয়া গেলেও রাজশাহী শহর থেকে একটু দূরে কাটাখালীর কালাভুনা সবচেয়ে বিখ্যাত ও সুস্বাদু। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ শহর থেকে এখানে কালাভুনা খেতে আসেন। এ ছাড়া সিটি হাট, নওহাটা বাজার ও নগরীর বিভিন্ন হোটেলে কালাভুনা পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো কাটাখালীর ‘একতা’ ও ‘ইব্রাহিমের হোটেল’। কাটাখালীসহ জায়গাভেদে এক বাটি মাংস ১২০-১৬০ টাকায় পেয়ে যাবেন রাজশাহীর সবচেয়ে সুস্বাদু এই মাংস।

বর্ণালীর চা

বর্ণালী মোড়ের ছা ছাড়া যেন রাজশাহীবাসীর আড্ডা জমে না
বর্ণালী মোড়ের ছা ছাড়া যেন রাজশাহীবাসীর আড্ডা জমে না

প্রতিটি শহরের চা-প্রেমীরা একটা নির্দিষ্ট এলাকায় আড্ডা দেন। সেদিক থেকে রাজশাহীর চা-প্রেমীদের আড্ডার প্রিয় জায়গা হলো বর্ণালী মোড়। এই মোড় বিখ্যাত হয়ে উঠেছে কয়েকটি চায়ের দোকানের কারণে। মোড় থেকে উপশহর যাওয়ার রাস্তার হাতের ডানে ও বাঁয়ে রয়েছে চায়ের দোকানগুলো। এর মধ্যে শরীফ টি গার্ডেন, রকি টি স্টল বেশি বিখ্যাত। শহরের অন্য যেকোনো চায়ের দোকানের চেয়ে এখানে চায়ের দাম কিছুটা বেশি হলেও স্বাদে সেটা পুষিয়ে যায়। তাই নগরীর একঘেয়েমি কাটাতে একটু ফুরসত পেলেই সবাই এখানে চা খেতে আসেন।

সিঅ্যান্ডবি মোড়ের গরম মিষ্টি

 এই মিষ্টির সঙ্গে সাধারণ স্থানীয় লোকজন পুরি খেয়ে থাকেন
এই মিষ্টির সঙ্গে সাধারণ স্থানীয় লোকজন পুরি খেয়ে থাকেন

রাজশাহী শহরের বিভিন্ন অভিজাত মিষ্টির দোকান থাকলেও স্থানীয় ও ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দ হলো সিঅ্যান্ডবি মোড়ের গরম মিষ্টি। রানার মিষ্টি ঘর নামের এই বিখ্যাত দোকান প্রায় ৩০ বছর ধরে গরম মিষ্টি বিক্রি করে আসছে। এই মিষ্টির সঙ্গে সাধারণ স্থানীয় লোকজন পুরি খেয়ে থাকেন। এ ছাড়া এই মিষ্টি অন্য যেকোনো ধরনের মিষ্টির চেয়ে কিছুটা আলাদা স্বাদের হয়ে থাকে। রানার মিষ্টিঘর ছাড়াও কয়েকটি দোকান বর্তমানে গড়ে উড়েছে। দোকানভেদে প্রতি পিস মিষ্টির দাম ২০ টাকা এবং প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা দরে  বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া রাজশাহী মিষ্টান্ন ভান্ডার, রসমেলা, বেলিফুল, নবরূপ—নানা ধরনের ও স্বাদের মিষ্টি বিক্রি করে থাকে।

তালাইমারির বট–পরোটা

তালাইমারির বট–পরোটা রাজশাহীর বিখ্যাত পথখাবার
তালাইমারির বট–পরোটা রাজশাহীর বিখ্যাত পথখাবার

রাজশাহীর বিখ্যাত পথখাবারের তালিকায় তালাইমারির বট-পরোটা থাকবেই। সববয়সীদের কাছে সমান জনপ্রিয় এই খাবার। বিকেল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোজনরসিকরা আসতে থাকেন এই মোড়ে। তবে ছুটির দিন কিংবা শুক্রবারে থাকে সবচেয়ে বেশি ভিড়। তালাইমারি মোড়ের শুভ হোটেলসহ বেশ কিছু হোটেল ও ভদ্রা এলাকায় বট-পরোটা পাওয়া যায়। বেশির ভাগ জায়গায় প্রতি বাটি বটের দাম ১২০ টাকা এবং হাফবাটি ৬০ টাকা। বট-পরোটার সঙ্গে ডাল–সবজিও পাওয়া যায়।

এই পথখাবারগুলোর স্বাদ নেওয়ার পর সময় পেলে ফুলতলার চটপটি আর আলুপট্টি মোড়ের ফুচকা চেখে দেখা যেতে পারে।

ছবি: লেখক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬: ০০
বিজ্ঞাপন