বাঙালি বরাবরই ভোজনরসিক হিসেবে পরিচিত। ইতিহাস ঘাঁটলেই পাওয়া যায় বাঙালির ভোজনপ্রিয়তার কথা। পুরান ঢাকা এমন একটি জায়গা, যা এখানকার স্থানীয় ডেলিকেসিগুলোর মাধ্যমে খাবারের ঐতিহ্য ও আভিজাত্য ধরে রেখেছে ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে।
পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড ধরে কিছু দূর এগোলেই পাবেন নাজিরাবাজার চৌরাস্তা। এই চৌরাস্তার চারপাশে রয়েছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সব খাবারের দোকান। এখানে দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ এসে জড়ো হন ঐতিহ্যবাহী খাবার ও পানীয়গুলো চোখে দেখতে। চলুন, আজ জেনে নিই পুরান ঢাকার বিখ্যাত কিছু খাবারের দোকান আর সেখানকার আলোচিত কিছু পদ সম্পর্কে।
ফজরের পর কাকডাকা ভোরেই গলি দিয়ে ঢুকলে আপনার নাকে এসে পৌঁছাবে জিবে জল আনা বিরিয়ানির ঘ্রাণ। নাজিরাবাজারে রয়েছে শর্ষের তেল দিয়ে বানানো ঢাকার বিখ্যাত হাজীর বিরিয়ানি। ৮৩ বছর ধরে ভোজনরসিকদের মুগ্ধ করছে এই বিরিয়ানি, যাকে আসলে রন্ধনপ্রণালি অনুযায়ী তেহারি বলা যায়। বিখ্যাত এই বিরিয়ানির রেসিপি আজও গোপন। প্রতি প্লেট বিরিয়ানির দাম ২২০ টাকা।
নিয়ে যেতে চাইলে বেঁধেছেদে দেওয়া হয় ঐতিহ্যবাহী কাঁঠালপাতার ঝুড়িতে। হাজীর বিরিয়ানি ছাড়াও পুরান ঢাকায় আরও কিছু জায়গায় অত্যন্ত উপাদেয় ঢাকাইয়া তেহারি মিলবে। এই তালিকায় রয়েছে হানিফ বিরিয়ানি, মামুন বিরিয়ানি ও বোখারী বিরিয়ানি।
ভোজনরসিকেরা এক নামে চিনবেন পুরান ঢাকার বিসমিল্লাহ কাবাব ঘর। ১৯৮৭ সালে যাত্রা শুরু করে দোকানটি। বিসমিল্লাহ কাবাব ঘরে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন ধরনের চাপ, কাবাব ও মগজ ভুনা। খাবারগুলো পরোটার সঙ্গে খেতে লাগে অসাধারণ। বিশেষ ধরনের মসলার ব্যবহারের মুনশিয়ানায় তাদের কাবাবগুলো নরম ও রসাল হয়ে থাকে।
তবে এই খাবারগুলোর স্বাদ আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয় তাদের বিশেষ টক-ঝাল-মিষ্টি সালাদ। ১৩০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে মিলবে এখানকার কাবাবের পদগুলো। আর প্রতি পিস পরোটার দাম ১২ টাকা।
নাজিরাবাজার এলাকার অন্যতম সিগনেচার এই বিউটি লাচ্ছি। যুগ যুগ ধরে মানুষের তৃষ্ণা মেটানো এই লাচ্ছি স্বাদ ও মানে আজও অতুলনীয়। এই গরমে আপনার ক্লান্তি দূর করবে প্রাণজুড়ানো এই পানীয়। লাচ্ছি ছাড়াও তাদের স্পেশাল ফালুদা বেশ সুস্বাদু।
খেজুর, কিশমিশ, ডালিম, আপেল, সাবুদানা, আইসক্রিমসহ নানা উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় মজাদার এই ফালুদা। লাচ্ছি ও ফালুদার দাম ৫০ ও ১১০ টাকা। বিউটি লাচ্ছির লেবুর শরবতও অতুলনীয়। দেখা গেল, এতে চিনির বদলে পাতলা শিরা ব্যবহার করা হয়।
নাজিরাবাজারের আরেক অসাধারণ খাবার চিকেন ভেজিটেবল তাওয়া চাপ। দেখা মিলবে বোখারী রোস্তারাঁয়। চিকেন তাওয়া চাপের সঙ্গে আলুভাজা ও ক্যাপসিকাম দিয়ে বানানো হয় খাবারটি। সঙ্গে থাকে মেয়োনিজ। আর পরিবেশন করা হয় গরম পরোটা দিয়ে।
সব মিলিয়ে খেতে দারুণ লাগে একটু অন্যরকম এই খাবার। ক্রেতাদের মতে, দাম হিসেবে পরিমাণে বেশ ভালো এই চাপ। চিকেন ভেজিটেবল তাওয়া চাপের দাম পড়বে ২১০ টাকা আর পরোটার দাম ৫০ টাকা।
পুরান ঢাকার বাহারি খাবারগুলোর মধ্যে চমক জাগানো একটি পদ এই আগুন পান। পানের ওপর নারকেলের চিড়া, কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, চকলেটসহ নানা উপকরণ দেওয়া হয়। তারপর তাতে আগুন জ্বালিয়ে ক্রেতার মুখে তুলে দেন দোকানি।
পান মুখে নেওয়ার পরই আগুন নিভে যায়, যা পানে এক ব্যতিক্রমী স্বাদের সৃষ্টি করে। বৈচিত্র্যময় এই পানের দাম ৫০ টাকা।