স্টার্ট-আপ ধারণাটির সঙ্গে এদেশের তরুণ প্রজন্মের প্রায় সকলেই বহুল পরিচিত। বন্ধুদের চায়ের আড্ডায় যে স্টার্টআপের জন্ম, তাই যদি জমিয়ে তোলে চায়ের আসর, তবে কেমন হয়? এই পরিকল্পনারই বাস্তব রূপ পাওয়া গেল এই অনলাইন উদ্যোগের কার্যক্রমে। চায়ের সঙ্গে টা-এর এই অভিনব উদ্যোগ ওপেন-টি-বায়োস্কোপ (Open Tea Bioscope)-এর স্বপ্নদ্রষ্টা হচ্ছেন পুরান ঢাকার ছেলে সামার ইসলাম আর তাঁর দুই স্বপ্নচারী বন্ধু বাবু ও ইশমাম।
'নাইন টেন টেস্কোপ
সুলতানা বিবিয়ানা
সাহেব বাবুর বৈঠকখানা
নিকেতনে আছে
চা সিঙ্গারা খেতে
সসের সাথে মরিচবাটা
সিংগারাতে নাগা মাখা
ক্লাউড চা সিঙ্গারাওয়ালা
রিভিউতে দিয়েন মুক্তার মালা!'
আমাদের শৈশবের প্রিয় ওপেন-টি-বায়োস্কোপ ছড়াটির এমন একটি চমৎকার 'চা' সংস্করণ দেখতে পাওয়া যায়, উদ্যোগটির ফেসবুক পেজে ঢুকতেই। যেহেতু, চায়ের উদ্যোগ, তাই এখানে টি শব্দের অর্থ দাঁড়াচ্ছে চা। সামার জানান, অফিসের কাজের ফাঁকে প্রায়ই চা তেষ্টা পেলে শুধু অফিসের নিচের টং দোকানগুলোর ওপরই নির্ভর করতে হতো তাঁদের। টঙের চায়ের আড্ডা আরাধ্য হলেও অনেক সময়ই ঠিক স্বাস্থ্যস্মত উপায়ে চা বানানো হয় না এখানে। তখনই এই পরিকল্পনার কথা মাথায় আসে তাঁদের।
তবে এরপর পড়তে হয় আরেক বিড়ম্বনায়।
চা অনলাইনে অর্ডার করলে তো জায়গামতো পৌঁছে দিতে দিতে তা ঠান্ডা শরবত হয়ে যাবে! তাই তাঁরা নিয়ে আসেন অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ও কার্ডবোর্ডের তৈরি এক অভিনব প্যাকেজিং। যা পরিবেশবান্ধব ও চা গরম রাখবে দেড় ঘন্টা অবধি।
চায়ের যোগান শেষেই আসে 'টা'- এর প্রশ্ন। যত যা ই হোক চা-পাগল বাঙালি 'টা' ছাড়া চা পান করে মন কিংবা পেট কোনোটাই ভরাতে পারে না। একে একে ওপেন-টি-বায়োস্কোপ তাই নিয়ে আসে চায়ের সঙ্গে ক্ল্যাসিক আলুর শিঙাড়া, কলিজা শিঙারা, নাগা শিঙাড়া ইত্যাদি।
পুরান ঢাকার ছেলে সামারের খাদ্যরসিক ঢাকাইয়া মন থেমে নেই এখানেই। তিনি এই তালিকায় জুড়ে দেন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি এবং সেই সঙ্গে ফিরনি, যা তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তবে ওপেন টি বায়োস্কোপের দেখা আপাতত মিলছে শুধু সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রামের পাতায়। এই বৃষ্টি কাঁদার দিনে জল ডিঙিয়ে বাইরে না গিয়ে ঘরে বসে গরম গরম চা আর টা পাওয়া গেলে ক্ষতি কী! তবে নতুন উদ্যোগ বলে এখনও পুরো ঢাকায় ডাল-পালা মেলতে পারেনি এ অভিনব উদ্যোগটি। আপাতত শুধু গুলশান, বনানী, নিকেতন ও তেজগাঁওয়ের চাপ্রেমীদের হাতের নাগালে আছে এ সুযোগ। তবে একটু গুছিয়ে নিয়েই পুরো ঢাকার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবেন বলে আশ্বাস দেন সামার। আষাঢ় মাসের ঝুম বৃষ্টির দিনে আপনিও কিন্তু চা আর টা এর খোঁজে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন ওপেন টি বায়োস্কোপের ডিজিটাল চায়ের দোকানে!
ছবি: ওপেন-টি-বায়োস্কোপ