বুক ক্যাফে ধারণাটির সঙ্গে আমরা এখন কমবেশি পরিচিত। হাতে গোনা কয়েকটি আছে এই শহরে। তবে বিদেশে বুক ক্যাফে ধারণাটি খুবই জনপ্রিয়। সমুদ্রপাড়ে একদিন একটি ছোট্ট বাড়ি হবে, সঙ্গে থাকবে একটি ছোট্ট বইয়ের দোকান এবং কফিশপ। এ রকম স্বপ্ন আমরা অনেকেই দেখি। এ স্বপ্নেরই শহুরে সংযোজন হলো ঋদ্ধি বুক ক্যাফে।
ক্যাফেটির সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রাজীব উল্লাহ জানান, করোনা–পূর্ববর্তী সময় থেকে এই বুক ক্যাফে করার পরিকল্পনা চলছিল। তবে এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় এ বছরের মার্চ মাসে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন।
তিনটি তলাজুড়ে বিস্তৃত এই বুক ক্যাফে। ঢুকতেই চোখে পড়বে ছিমছাম একটি রিডিং কর্নার। এর পাশেই রয়েছে চা ও পেটপূজার ব্যবস্থা। ফুড কর্নারের ম্যানেজার নুরুল ইসলামের কাছে জানা যায়, সময় হিসাব করে এখানে খাবার রাখেন তাঁরা।
সকালের নাশতায় তাই থাকে রুটি-পরোটা-সবজি। দুপুরে রয়েছে কিছুটা ভারী খাবারের ব্যবস্থা এবং বিকেলের দিকে হালকা পেট ভরাতে আছে চা-শিঙাড়া, রোল ও চাওমিনের মতো খাবার। দাম সাধ্যের মধ্যেই।
মজার ব্যাপার হলো, পাশেই কাচের বয়ামে বিক্রি করা হচ্ছে নানা স্বাদের মুখরোচক সব আচার।
দ্বিতীয় তলাটির পুরোটা জুড়েই শুধু বই আর বই। আছে লাইব্রেরি ও আর্কাইভ কর্নার। লাইব্রেরিতে বসে আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা একান্তে বই পড়তে পারবেন। চাইলে কিনেও নিয়ে যেতে পারেন। আর্কাইভ কর্নারটি এ জায়গার বিশেষ আকর্ষণ। মোহাম্মদ রাজীব উল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া গেল চমকপ্রদ সব তথ্য।
আর্কাইভ কর্নারটিতে নাকি আছে ১০০ বছরের পুরোনো ও দুর্লভ কিছু বই! এখন আর ছাপানো হয় না, এমন কিছু বইয়ের কপিও পেয়ে যাবেন এখানে। তবে আর্কাইভ কর্নারের এসব বহুমূল্যের বই কিন্তু বিক্রির জন্য নয়। ছাত্র ও গবেষকেরা চাইলে এখানে বসে পড়ে নিতে পারেন বইগুলো।
এককোণে চোখে পড়ে সুন্দর একটি ‘কিডস জোন’। শিশুদের বাবা-মায়েরা তাদের এখানে খেলতে নিয়ে আসেন। শুধু তা–ই নয়, শুক্রবারে বিকেল থেকেই এখানে ঠাকুমা খুলে বসেন তাঁর গল্পের ঝুলি।
মানে ছুটির দিনের বিকেল পাঁচটা থেকে শিশুদের জন্য এখানে বসে গল্পের আসর। তাদের কথা মাথায় রেখে ছোট্ট একটি স্টেশনারি কর্নারও খোলা হয়েছে দোতলায়। শিগগিরই একটি আঁকার স্কুল খোলার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। এখানে পাওয়া যাচ্ছে রংপেনসিল, আঁকার খাতা, রঙিন সব পুতুল ও চাবির রিং।
তিনতলার পুরোটা জুড়ে করা হয়েছে মোটামুটি বড় আকৃতির একটি হল। যেকোনো উৎসব-অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে এই হল ভাড়া দেওয়া হয়। তবে শিগগিরই নাকি এখানে করা হবে মঞ্চনাটক দেখানোর ব্যবস্থা। ক্যাফেটির দোরের কাছে আছে ছোট্ট একটি সবুজে ঘেরা নার্সারি। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অভিনব সব ক্যাকটাসের সংগ্রহ। এ ছাড়াও নজর কাড়ে বিভিন্ন ধরনের ইনডোর প্ল্যান্টস।
ঋদ্ধি বুক ক্যাফের স্বত্বাধিকারী মাহবুবুল হাসান ফয়সাল নিজের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বইয়ের সংগ্রহ দিয়ে প্রথম এই ক্যাফে শুরু করেন। তবে অনেকের সহযোগিতায় এখন উদ্যোগটি মেলেছে ডালপালা। অনেকেই এখন এখানে বই ডোনেট করে থাকেন। চাইলে আপনার সংগ্রহের কিছু বইও এখানে ডোনেট করতে পারেন।
প্লট-২, রোড নম্বর–৯, ব্লক-ডি, সেকশন–১১, পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬। কোনো এক অবসর সময়ে মিরপুর–১১ মেট্রোস্টেশনের গলির এই ছিমছাম বুক ক্যাফেতে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন আপনিও। এটি সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
ছবি: লেখক