ঘরের শিল-নোড়ায় বাটা নানা ধরনের ভর্তা থেকে শুরু করে রাস্তার ধারের ফুচকা, ঝালমুড়ি আর ভেলপুরির মতো ঝাল খাবারের প্রতি বাঙালির ভালোবাসা বরাবরই একটুখানি বেশি। পাতে ভাতের সঙ্গে একটা কাঁচা মরিচ বা চিতই পিঠার সঙ্গে একটু মরিচভর্তা ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায় খাওয়া। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ঝালের আছে নানা গুণ।
হৃদ্রোগের প্রধান দুটি কারণ হচ্ছে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল। ২০২২ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ঝাল খাবার বা মরিচ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ২০১৭ সালের এক গবেষণায় উঠে আসে, যারা সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ঝাল খাবার খান, তাদের রক্তে উল্লেখযোগ্য হারে ‘হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন’ উপকারী কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় এবং ‘লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন’ বা অপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস পায়। এ ছাড়া নিয়মিত ঝালজাতীয় খাবার খেলে অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস কমে আসে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে ঝাল খাবার রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই একটি নির্দিষ্ট মাত্রায়, সীমিত পরিমাণে ঝাল খাবার খাওয়া উচিত।
যদিও অনেকেই ঝাল খাবার খেলে পেটে অস্বস্তি বোধ করেন, সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে ঝাল বরং হজমে সাহায্য করতে পারে। মরিচ, ক্যাপসিকাম ইত্যাদিতে উপস্থিত ‘ক্যাপসাইসিন’ অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। এটি একদিকে যেমন খাবার হজমে সাহায্য করে, অপর দিকে অন্ত্রের রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনে।
২০২১ সালে পর্যবেক্ষণমূলক এক গবেষণায় জানা যায় যে খাবারে ক্যাপসাইসিন–জাতীয় মসলা থাকলে ৬৩ শতাংশ মানুষ খাবার খেয়ে বেশি তৃপ্তি পান। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে করা বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা যায় যে ঝালজাতীয় খাবার ক্ষুধা কমাতে এবং চর্বি গলাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া খাবার হজমে সাহায্য করে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে মরিচ৷ ঝাল খাদ্য গ্রহণ করায় অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। ফলে এ ধরনের খাবার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে ঝালজাতীয় খাবারটি হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত। যেমন শাকসবজি, মাছ, মাংস এবং তা গ্রহণ করতে হবে পরিমিত পরিমাণে।
ক্যাপসাইসিনে উপস্থিত অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদান শরীরকে সুস্থ রাখে। ২০২১ সালে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা চালিয়ে দেখা যায় যে যাঁরা নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে তাঁদের প্রতিদিনের খাবারে ঝাল খাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের কারণে মৃত্যুহার প্রায় ১২ শতাংশ কম। বিশেষত ক্যানসার, হৃদ্রোগ ও শ্বাসযন্ত্রের রোগ কম হয় তাঁদের। তাই দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারেন প্রতিদিনের খাবারে পরিমিত পরিমাণে মরিচ ও ক্যাপসিকাম যোগ করে।
পুষ্টিবিদেরা বলেন, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি ও দেহে তাপ উৎপন্ন করার মাধ্যমে দেহের মেটাবলিক রেট বা বিপাকের হার বৃদ্ধি করে ঝাল খাবার। ফলে আমাদের পাকস্থলীতে থাকা খাদ্যগুলো খুব দ্রুত শক্তিতে পরিণত হয়। এতে শরীরের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি পায় ও ওজন কমানো সহজ হয়। মরিচ, ক্যাপসিকাম ইত্যাদিতে উপস্থিত ক্যাপসাইসিন দিনে অতিরিক্ত ৫০ ক্যালরি ক্ষয় করে বলে কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে।
তবে জেনে রাখা ভালো, স্বাস্থ্যের ওপর ঝালজাতীয় খাবারের প্রভাব–সম্পর্কিত বেশির ভাগ গবেষণাই পর্যবেক্ষণমূলক। আরও আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গবেষণা করা সম্ভব হলে হয়তো ঝাল খাবারের আরও উপকারিতা আমাদের সামনে আসতে পারে। আর কারও যদি গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পাকস্থলী ও অন্ত্রের কোন রোগ থেকে থাকে, তবে ঝাল খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন
ছবি: সেলিনা শিল্পী ও শাহীনুর আক্তার