মালয়েশিয়ার পর্যটনশিল্পের একটি বহুল প্রচলিত স্লোগান ‘মালয়েশিয়া: ট্রুলি এশিয়া’। মালয়, ভারতীয়, চীনা, ফিলিপিনো ইত্যাদি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের বসবাসের কারণে মালয়েশিয়ার খাবারও বৈচিত্র্যপূর্ণ। মালয়েশিয়া ভ্রমণগন্তব্য হিসেবে সারা বিশ্বে সমাদৃত; এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এখানকার বৈচিত্র্যময় খাবার। মালয়েশিয়ায় অঞ্চলভেদে খাবারের স্বাদ বদলে যায়। দক্ষিণে গেলে আপনি পাবেন নারকেল দুধের ‘নাসি লেমাক’, মধ্যাঞ্চলে ‘সাতায়’ নামে ঝলসানো মুরগি, ভারতীয়–অধ্যুষিত এলাকায় রোটি চানাই, তেহ তারিক চা, মাংসের কারি ‘রেন্দা’, নাসি বিরিয়ানির মতো পদ।
মালয়েশিয়ান খাবার বললে নাসি গোরেং নামটাই মাথায় আসে আমাদের; কিন্তু অথেনটিক মালয়েশিয়ান পদ আরও অনেক আছে। সেসব খাবারের সঙ্গে ঢাকাবাসীকে পরিচয় করিয়ে দিতে রেনেসান্স ঢাকায় ১৭ এপ্রিল শুরু হয়েছে মালয়েশিয়ান খাবারের উৎসব ‘সিতা রাসা মালয়েশিয়া’।
এই ফুড ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে ‘বাহার রেস্তোরাঁ’ সাজানো হয়েছে মালয়েশিয়ার প্রথাগত নকশায়। রেস্তোরাঁর কর্মী পরেছেন মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাক। রেস্তোরাঁয় বেজে চলেছে মালেশিয়ার পপ সংগীত। দৃষ্টি এড়ায় না মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের উপস্থিতিও।
রেস্তোরাঁর বিভিন্ন কর্নারে সাজানো ছিল নানা ধরনের মালয়েশিয়ান খাবার। ‘রোজার’ নামের কর্নারে মসলাদার পিনাট বাটার সসের সঙ্গে সেদ্ধ ডিম, স্কুইড, অক্টোপাস, প্রন, ফিশ কেক, কলমি শাক, গাজর ও শসা দিয়ে ছোট ছোট সার্ভিং বোলে পরিবেশন করা হচ্ছিল। মসলাদার পিনাট বাটার সসে সি ফুডের সমন্বয় ছিল দারুণ। লাইভ সি ফুড কর্নারে যেকোনো মাছ, কাঁকড়ার সঙ্গে বিশেষ মালয়েশিয়ান সস দিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছিল। স্টার্টার কর্নারে ছিল ভেজিটেবল টেম্পুরা, মালয়েশিয়ান স্টাইলের স্টাফড চিকেন, মালেশিয়ান স্টাইলে রোস্টেড মাছ, দেখতে ও স্বাদে চমৎকার।
মেইন কোর্স সেকশনে ছিল ডিচা (বিশেষ ধরনের সবজি–ডাল), ভেজিটেবল, স্পাইসি স্টাফড ফিশ, গ্রিন মাটন বারলাডো, রোস্টেড চিকেন পারচেড, স্টার ফ্রায়েড রাইস নুডলস উইথ সি ফুড। স্পাইসি স্টাফড ফিশ দেখতে আর খেতে বেশ লেগেছ। স্টার ফ্রায়েড রাইস নুডলস উইথ সি ফুডে স্বাদকে এগিয়ে রাখাই যায়। পাশাপাশি বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি ঝুড়িতে পরিবেশন করা হয়েছে মালয়েশিয়ার বিশেষ সুগন্ধি চালের ভাত, যার গন্ধে মাতোয়ারা ছিল মেইন কোর্স কর্নার।
পাশেই ছিল শেফ সাইদুলের স্পেশাল লাইভ স্টেশন; যেখানে আমাদের দেশের পাকোড়ার মতো মালয়েশিয়ার জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড ‘অ্যান্টোনিস ফ্রিটার’ ডুবো তেলে ভাজা হচ্ছিল। এতে সবজিসহযোগে বিশেষ ধরনের চিংড়ি শুঁটকি ব্যবহার করা হয়, মুখে লেগে থাকার মতো স্বাদ এই ফ্রিটারের। মালয়েশিয়ার বিশেষ ধরনের নারকেলের প্যানকেক ল্যাম্পেঞ্জ, ব্রাউন সুগার আর নারকেল কোরা দিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছিল।
কথা হয় মালয়েশিয়ার শেফ শাহ রিজালের সঙ্গে। তিনি জানান, মালয়েশিয়ার খাবারের বিশেষত্ব হচ্ছে নারকেলের দুধ, তাজা সবজি, বিভিন্ন সস, শুঁটকি ও নানা রকম মসলা।
ডেজার্ট সেকশনে ছিল মালেশিয়ান পুডিং, পেগাট পিসাং, স্ট্রবেরি কার্ডের মতো সব মালয় মিষ্টি। এ ছাড়া বুফেতে আরও আছে সুশি কর্নার, তাজা ফল, ব্রেড, নানা ধরনের সালাদ।
মেইন কোর্সে মালয়েশিয়ান খাবারের পাশাপাশশি ছিল ডাল, ভাত, সবজি, বিরিয়ানি, পালক–পনির, গরুর মাংস ও মাছ। ১০ দিনের উৎসবে নির্দিষ্ট ব্যাংক কার্ডে থাকছে ‘বাই ওয়ান গেট টু’ অফার।
১৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত মুহাম্মাদ সুহাদা ওথম্যান এই ফুড ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করেন। পরে রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের অন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজন ঘুরে দেখেন।
উদ্বোধনীতে রেনেসান্সের হেড অব সেলস ওয়াদুদ শামীম বলেন, ‘আমরা কেবল দেশীয় খাবার, কন্টিনেন্টাল ও আন্তর্জাতিক কুজিন পরিবেশন করি না, অঞ্চলভেদে অথেনটিক খাবারের স্বাদের সঙ্গে বাংলাদেশেরে ভোজনরসিকদের পরিচিত করাতেও চাই।
রেনেসান্স ঢাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, হোটেল ম্যারিয়টের অন্তর্ভুক্ত রেনেসান্স মালয়েশিয়া থেকে মাস্টারশেফ শাহ রিজালকে আনা হয়েছে মালয়েশিয়ান খাবারের অথেনটিক স্বাদ সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এটা ম্যারিয়ট গ্রুপের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের আওতায় হচ্ছে। এরপর বাংলাদেশের একজন শেফ মালয়েশিয়ায় যাবেন বাংলাদেশি খাবারের উৎসবে বাংলাদেশের খাবার পরিবেশনের জন্য।
শেফ শাহ রিজাল বাংলাদেশে এসে খুবই উচ্ছ্বসিত। অথেনটিক মালয়েশিয়ান খাবার পরিবেশন করতে পারাটা তাঁর জন্য ভীষণ আনন্দের বলে জানান তিনি।
ছবি: হাল ফ্যাশন