রংপুরের ঐতিহ্যবাহী পদ শোলকার আয়োজনে সবুজের ভরপুর উদযাপন

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামীণ হেঁশেলে লুকিয়ে আছে নানা মজাদার পদ। রংপুরের শোলকা তেমনই একটি রত্ন। জনপ্রিয় এ পদটি মূলত শাক দিয়ে তৈরি। কয়েক প্রকার শাক মিলিয়ে এটি রান্না করা হয়। এর সঙ্গে গরম সাদা ভাত ও আলু ভর্তা এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এক খাবার।

এখনও এ অঞ্চলের গ্রামীণ নারীদের হাত ধরে এ পদটি টিকে রয়েছে। তবে নতুনদের অনেকেরই মাঝেই আবার শোলকা অচেনা। এর মাঝেই আবার অনেকেই নতুন করে এই ঐতিহ্যবাহী পদটি নিয়ে আগ্রহী ও আবেগী হয়ে উঠছেন। আমার সবসময় খুব ইচ্ছা ছিল সামনে থেকে রংপুরের এই পদে সবুজের ভরপুর উদযাপন নিজের চোখে দেখব৷ এবার ঈদের ছুটিতে প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় মেরী খালার কল্যাণে সেই সুযোগ এসে গেল। এখানে থাকছে তাঁর মমতায় ভরা দক্ষ হাতে তৈরি, রংপুরের ঐতিহ্যবাহী এই শোলকার আয়োজনের গল্প। মেরী খালার কাছ থেকেই জেনে নেওয়া গেল এতে কী কী লাগে।

পাট শাক ১ কাপ (মিহি কুচি করে কেটে নেওয়া)

কচু শাক ১ কাপ (মিহি কুচি করে কেটে নেওয়া)

সজনে পাতা ১/২ কাপ (মিহি কুচি করে কেটে নেওয়া)

রসুন কুচি ২ চা-চামচ

লবণ ১ চা চামচ (স্বাদ অনুযায়ী)

কাঁচামরিচ ৩ টি

খাবার সোডা সিকি চা-চামচ

এতে তেল-মসলার বালাই নেই কোনো। পেঁয়াজও দেওয়া হয় না৷ চোখজুড়ানো এই সবুজ পদটি দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমনি অবাক করা সুস্বাদু। সাধারণের মাঝেই যে অসাধারণ লুকিয়ে থাকে, শোলকাই তার প্রমাণ। এবার চলুন জেনে নিই কীভাবে শোলকা বানাতে হয়।

শোলকা রান্নার জন্য নানা পদের শাক নিতে পারেন। তবে সজনে পাতা, পাটশাক ও কচুশাক এর প্রধান উপকরণ। এর সঙ্গে মিলিয়ে আরও কয়েক প্রকার শাক নিতে পারেন। এখানে মেরী খালা পাট শাক, কচু শাক আর সজনে পাতা ব্যবহার করেছেন। তাঁর সুচারু হাতের কাজ মন দিয়ে দেখছিলাম আমি। প্রথমেই শাকগুলো পানিতে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া শাকগুলো যতটা সম্ভব মিহি কুচি করে কেটে নিতে হবে। এই কুচোনোর মুনশিয়ানার ওপরেই নির্ভর করে শোলকার আসল স্বাদ ও টেক্সচার।

কাঁচামরিচগুলো মাঝখান দিয়ে কেটে দুই ফালি করে নিতে হবে। আর রসুন কাটতে হবে কুচি করে।

এবার মেরী খালার রেসিপি অনুযায়ী একটি হাঁড়িতে পরিমাণমতো বেশ খানিকটা পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। পানির মধ্যে কেটে রাখা কাঁচামরিচ, রসুন কুচি, পরিমাণ মতো লবণ আর খাবার সোডা দিন। শোলকা রান্নায় খাবার সোডা বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এটি শাকের মিশ্রণে মসৃণ ও ঘন ভাব আনতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত খাবার সোডা স্বাদে ও ফ্লেভারে কিছুটা বিকৃতি ও তেতোভাব আনতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।

সব উপকরণ মেশানো পানি ফুটতে শুরু করলে কুচি করে রাখা শাকপাতাগুলো দিয়ে দিতে হবে। তারপর ঢাকনা দিয়ে হাড়িটি ঢেকে দিন। এভাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রান্না করতে হবে। মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে উল্টেপাল্টে নেড়ে দিন। ১০/১৫ মিনিট পর এটি চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। রান্নার সময় আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে বললেন মেরী খালা। যেমন শোলকা রান্নায় তেল একেবারেই ব্যবহার হয় না, তাই একটু বাড়তি রসুন শোলকার স্বাদ বাড়িয়ে দেয়। হলুদের দাগ আছে এমন পাত্র এড়িয়ে চলুন এই পদ রাঁধতে। এতে শোলকার উজ্জ্বল সবুজ রঙ নষ্ট হয়।

সাদা ভাত ও আলু ভর্তার সঙ্গে শোলকা পরিবেশন করুন। শোলকা, সাদা ভাত আর আলু ভর্তা মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলের কমফোর্ট ফুড এই মজাদার ঐতিহ্যবাহী পদটি শোভা পেতে পারে আপনার খাবার টেবিলে। কোরবানির ঈদে মাংসের বাড়াবাড়ির পর শোলকা সত্যিই আরাম দেবে চোখে, স্বাদকোরকে আর মনেও।

আয়োজন ও রেসিপি: মেরী খালা

ছবি: তাসনীম ওয়াজেদ অহনা