শীতের পিঠাপুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় আর সর্বজনীন পিঠা হচ্ছে হাতে কাটা সেমাই। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি চুই পিঠা, সেমাই পিঠা, চুষি পিঠা, ছেই পিঠা ইত্যাদি নামে পরিচিত। চালের গুঁড়ার খামির লম্বা করে গড়ে নিয়ে পিঁড়িতে রেখে আঙুলে ডলে তৈরি করা হয় এই সেমাই। তবে অঞ্চলভেদে এর রন্ধনপ্রক্রিয়ায় বৈচিত্র্য দেখা যায় বেশ। ঢাকায় যেমন পাতলা দুধে এই সেমাই সেদ্ধ করে এতে ঘন দুধ যোগ করে জ্বাল দিয়ে গুড়ের সিরা মিশিয়ে রান্না করা হয়।
কুচি করা ও কোরানো নারকেল দেওয়া হয় সঙ্গে। নোয়াখালী অঞ্চলে ঘন রস বা ‘রাব’–এ আস্ত গরমমসলা ফেলে তাতে সেদ্ধ করা হয় সেমাই। দরাজ হাতে নারকেল কোরা পড়ে এতে। কেউ কেউ বেটে দেন নারকেল। এদিকে খুলনা বিভাগে হাতে কাটা সেমাই রান্না করা হয় নারকেলের দুধ আর খেজুরের রসের মিশ্রণে। তাতে নারকেলও দেওয়া হয়। পাক-প্রণালি যা–ই হোক, এতে আসলে জাদু মিশে যায় মায়াময় হাতের ছোঁয়ায়।
চালের গুঁড়া ২ কাপ
তরল দুধ ২ লিটার
খেজুরের গুড় আধা কাপ
এলাচিগুঁড়া ১ চা-চামচ
নারকেল কোরা ১ কাপ
লবণ সামান্য
পানি পরিমাণমতো
সাজানোর জন্য
কিশমিশ, নারকেল কোরা পরিমাণমতো
পরিমাণমতো পানি ফুটিয়ে চালের গুঁড়া দিয়ে মধ্যম আঁচে ভালোভাবে সেদ্ধ করে কাঁই তৈরি করে নিতে হবে। পানিতে এক চিমটি লবণ দেওয়া যায়। চুলা থেকে নামিয়ে কিছুটা ঠান্ডা করে বেশ ভালোভাবে পিঠার কাঁই মথে নিতে হবে। এরপর অল্প করে নিয়ে লেচি কেটে লম্বা করে গড়ে নিয়ে পিঁড়িতে রেখে সেমাই বানিয়ে নিতে হবে।
এভাবে সব সেমাই বানানো হলে চুলায় একটি ভারী তলাবিশিষ্ট পাত্রে দুধ জ্বাল দিতে হবে। দুধ ফুটে উঠলে এক কাপ দুধ উঠিয়ে রাখতে হবে। এই এক কাপ দুধ একটু ঠান্ডা করে তাতে গুড় গলিয়ে মিশিয়ে ছেঁকে রাখতে হবে।
তরল দুধে এলাচিগুঁড়া দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। এ পর্যায়ে অল্প অল্প করে আগে থেকে তৈরি করে রাখা সেমাই মিশিয়ে নিতে হবে। সেমাই সেদ্ধ হয়ে পছন্দমতো ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিতে হবে। তবে বেশি ঘন করে নামালে ঠান্ডা হওয়ার পর জমে আঠালো হয়ে যাবে এবং খেতে ভালো লাগবে না। সেমাই কুসুম গরম থাকতে গুড়-দুধের মিশ্রণ মিশিয়ে নিতে হবে। এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে গুড়ের প্রভাবে দুধ ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে ঐতিহ্যগতভাবে খাঁটি গুড় দেওয়া দুধেই সেমাই রান্না করা হয়৷ সেমাই ঠান্ডা হলে কিশমিশ ও নারকেল কোরা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা যায়।