পেস্তা বাদামের কুনাফা চকলেটের পরে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছে দুবাইয়ের আরেকটি ব্যতিক্রমী ডেজার্ট। এতে সাধারণ পাউরুটি রুটি ভিজিয়ে তৈরি করা হয়েছে এক অসাধারণ স্বাদের মিষ্টান্ন। দুধ, চা ও রুটির এই অদ্ভুত অথচ লোভনীয় মিশ্রণ নিয়ে যেমন আলোচনা চলছে খাদ্যবোদ্ধাদের মাঝে, তেমনি এটি হয়ে উঠেছে ভ্লগারদের জন্য নতুন সেনসেশন।
এই ভাইরাল ডেজার্টটির মূল উপকরণ তিনটি। দুধ,রুটি ও চা। শুনতে সাধারণ মনে হলেও, এই সাধারণ উপাদানগুলোকেই পরিবেশনের জাদুতে হয়ে উঠছে অনন্য। তাছাড়া চিরচেনা চা-পাউরুটির স্বাদ নতুন করে পাচ্ছে এতে সবাই।
এটি তৈরি করা খুবই সহজ। প্রথমে ঘন করে চা বানাতে হয়। যেখানে দারুচিনি, এলাচ, দুধ ও চা একসাথে ফুটিয়ে কড়া লিকারের দুধ চা বানানো হয়। ভারতে ডাকা হয় কড়ক! এরপর সেই গরম চা ঢেলে মাখন বা ক্রিম মাখানো পাউরুটি ভিজিয়ে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে চা রুটির মধ্যে মিশে গিয়ে তা হয়ে ওঠে নরম ও কোমল। এরপর সেটিকে ছোট ছোট টুকরো করে উপরে ঘন কনডেন্সড মিল্ক , পেস্তা কুচি ও গোলাপজল ছিটিয়ে পরিবেশন করা হয়।
তবে এই ডেজার্ট বাংলাদেশে এসে কিন্তু পেয়েছে নতুন রূপ। ভিন্নতা আছে পাশের দেশ ভারত ও নেপালেও। গরুর দুধের ঘন চায়ে ভেজানো হচ্ছে পাউরুটি। দু'পিস পাউরুটির মধ্যে কেউবা লাগাচ্ছেন মালাই বা মাখন। খানিকটা শাহী টুকরার মতো খেতে এই খাবারটি যেন অমৃত! দুবাইয়ের অনেক রেস্টুরেন্ট ও স্ট্রিট ফুড কার্টে এই নতুন ট্রেন্ডের ডেজার্ট পাওয়া যাচ্ছে। ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে হাজার হাজার ভিডিওতে এটি তৈরি ও পরিবেশনের আরো নানা রূপ দেখা যাচ্ছে।
রুটি ভেজানো এই 'চা-ডেজার্ট' নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন অনেক ফুড ব্লগার ও ইউটিউবারও। এই ডেজার্টটি শুধু এর জিবে জল আনা স্বাদই অতুলনীয় করে তুলেছে এমন একেবারেই নয়। বরং ,এক্স ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি। অনেক প্রবাসী দর্শকের মতে, এটি তাঁদের শৈশবের সকালে মায়ের হাতে বানানো দুধ-চায়ে রুটি ভেজানোর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। শৈশবে যা ছিল রোজনামচায়, এখন সেই সাধারণ অভ্যাসটিই এখন হয়ে উঠেছে একটি বিলাসী ডেজার্ট। সাধারণ খাবার হলে কী হবে, এর দাম কিন্তু বেশ চড়া! স্বল্প খরচে তৈরি হলেও চমৎকার উপস্থাপন ও অভিনব কনসেপ্টের কারণে রেস্টুরেন্টগুলোতে এটি পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৪০ দিরহাম দামে। তাতে অবশ্য বিশেষ অসুবিধা নেই অনেকের। টাকার চেয়ে বড় কথা হলো , অনেকেই এটিকে 'কমফোর্ট ফুড' বলে দাবী করছেন।
চায়ের সঙ্গে ডেজার্ট—এই দ্বৈত আনন্দ অনেকের রাতের খাবারের পরের 'ফুড স্যাডনেস' ঘোচানোর ওষুধ হয়ে উঠেছে।এই ডেজার্টের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে, খাবার কেবল পেট ভরায় না ,একজন মানুষের স্মৃতি মুড়িয়ে থাকে একটি খাবারে। খাবার বয়ে নিয়ে যায় ইতিহাস ও সংস্কৃতি। দু'টি দেশের সীমারেখা মিলিয়ে দিতে পারে একটি খাবার।দুবাইয়ের এই ভাইরাল রুটি-চা ডেজার্ট তাই এখন শুধু মধ্যপ্রাচ্যের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এখন বৈশ্বিক এক ফুড ট্রেন্ড হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও দেশীয় উপাদান ও স্বাদের সঙ্গে মিশে এটি আরও নতুন রূপ পাবে। তবে আপাতত, এই দুধ-চায়ের রুটি ডেজার্ট আমাদের যেন শিখিয়ে দিয়ে গেল 'স্মৃতির স্বাদ' সর্বজনীন এবং বরাবরই খুব মিঠে। আপনিও তবে চটজলদি বানিয়ে ফেলুন। স্মৃতির স্বাদ চেখে দেখতে ক্ষতি কী!
সূত্র ও ছবি: ইন্সটাগ্রাম