বিস্ময় সবজি শজনে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

ফাহমিদা শিকদার

এখন শজনে ডাঁটায় ভরে গেছে শজনেগাছ। বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজির মধ্যে এটি। নানা রকমের সুস্বাদু পদ বানানো হয় এই সবজি দিয়ে। শজনেগাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘মরিঙ্গা ওলেইফেরা’। কয়েক হাজার বছর আগে ভারতে এ গাছ জন্মাত। শজনে গাছের ফল, ফুল, পাতা, শিকড় খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার পাশাপাশি এর কাঠ দিয়ে ঘরবাড়ি বানানো হতো। আয়ুর্বেদ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী ইউনানি চিকিৎসাব্যবস্থায় এর ব্যবহার হতো। এই উদ্ভিদ খরাসহিষ্ণু ও গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে বেশি জন্মে। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ানের মতো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ছাড়াও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার কিছু দেশে শজনেগাছ পাওয়া যায়। আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হয়।

পুষ্টি উপাদান

শজনে ডাঁটায় আছে ফাইবার, প্রোটিন ও অনেক খনিজ উপাদান। ১০০ গ্রাম ডাঁটায় শক্তির পরিমাণ মাত্র ৬৪ কিলোক্যালরি। আর আছে কার্বোহাইড্রেট ৮ দশমিক ২৮ গ্রাম, ডায়াটেরি ফাইবার ২ গ্রাম, ফ্যাট ১ দশমিক ৪০ গ্রাম, প্রোটিন ৯ দশমিক ৪০ গ্রাম, ভিটামিন ‘এ’ ৩৭৮ মাইক্রোগ্রাম, থায়ামিন দশমিক ২৫৭ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন দশমিক ৬৬০ মিলিগ্রাম, নায়াসিন ২ দশমিক ২২০ মিলিগ্রাম, ফোলেট ৪০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন ‘সি’ ৫১ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া আছে ক্যালসিয়াম ১৮৫ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ১৪৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১১২ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৩৭ মিলিগ্রাম।

হাড়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়

শজনে ডাঁটা প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাসে ভরপুর। এই খনিজ উপাদান শিশুদের মজবুত হাড় গঠনে সহায়তা করে। বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতিদিনের ডায়েটে শজনে ডাঁটা রাখা উচিত। কারণ, এটি হাড়ের ঘনত্ব পুনরুদ্ধার করে ও অস্টিওপরোসিসের লক্ষণগুলো কমিয়ে থাকে। শজনে ডাঁটার অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান বাতের চিকিৎসা ও হাড়ের ছোটখাটো ক্ষত নিরাময়ের ক্ষমতা রাখে।

বিজ্ঞাপন

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে

এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এগুলো সাধারণ ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, ফ্লুর জীবাণুর সংক্রমণের বিরুদ্ধের লড়াই করে। শজনে ডাঁটা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হাঁপানি, কাশি ও অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। সাধারণ কাশি, জ্বর বা অন্যান্য অসুস্থতায় শজনে ডাঁটার তরকারি বা স্যুপ খেলে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।

অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায়

শজনে ডাঁটা নায়াসিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন ও ভিটামিন বি১২–এর মতো শক্তিশালী ভিটামিন ‘বি’তে সমৃদ্ধ। এরা পরিপাকতন্ত্র থেকে পাচক রস নিঃসৃত করে পরিপাক ক্রিয়াকে সহজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ডায়াটেরি ফাইবার, যা অন্ত্রের গতিবিধি নিয়মিত করে এর স্বাস্থ্য বজায় রাখে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের মতো সমস্যা আছে, তাঁরা নিয়মিত শজনে ডাঁটা খেলে উপকৃত হবেন।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে

এতে রয়েছে নায়াজিমিনিন ও আইসোথিয়োকায়ান্টের মতো বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ। এই যৌগ দুটি ধমনিগুলোকে প্রসারিত করে উচ্চ রক্তচাপ বিকাশের সম্ভাবনা হ্রাসে বিশেষভাবে সহায়তা করে। এ ছাড়া এর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হৃদ্‌যন্ত্রের রক্ত ও পুষ্টির সংবহনকে উন্নত করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শজনে ডাঁটা খেলে কিডনি ও মূত্রাশয়ে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে আসে। এর ভালো পরিমাণের অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের উপস্থিতি কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন দূর করতে সহায়তা করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

গর্ভবতী মায়েদের জন্য

শজনে ডাঁটায় রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ এবং ‘কে’ আর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফোলেটের মতো খনিজ উপাদান। এসব উপাদান গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। নিয়মিত শজনে ডাঁটা খেলে গর্ভবতী মায়েদের মর্নিং সিকনেসের মতো সমস্যা কম দেখা দেয়। এটি তাঁদের শরীরে বাড়তি শক্তি জোগায়। একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে এতে অতিমাত্রায় ফোলেট থাকার কারণে এটি খেলে স্পিনা বিফিডার ঝুঁকি সহজেই এড়ানো সম্ভব। স্পিনা বিফিডার হলে নবজাতকের মারাত্মক জন্মগত ত্রুটি হতে পারে।

এ ছাড়া চোখের সমস্যা সারাতে ও দৃষ্টি বাড়াতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাসে ও যকৃতের সুস্থতায় শজনে ডাঁটা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

সংরক্ষণ

শজনে ডাঁটা মৌসুমি সবজি। গরমের পর আমাদের দেশে এর দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। তাই চাইলেই কাঁচা, হালকা ভাপে বা সেদ্ধ করে ডিপ ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন।

ছবি: সেলিনা শিল্পী

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৯: ০০
বিজ্ঞাপন