তপ্ত বৈশাখে চারিদিকে যখন উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে, তখন ভারী খাবার যেন আরও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সকালে হালকা কিছু খাওয়ার ইচ্ছেটা একটু বেশিই কাজ করে। এমন সময় যদি মেলে দই আর চিড়া—শরীরও শান্ত থাকে, সঙ্গে মনও।ঠিক এমনই এক অভিজ্ঞতার জন্য কুমিল্লার পুনিল ঘোষ কেবিন হয়ে উঠেছে অনেকের পছন্দের জায়গা। শহরের চেনা হোটেলগুলোতে যেখানে সকালের নাস্তায় পরোটা, মাংস, ডিম ভাজি বা খিচুড়ি পাওয়া যায়, সেখানে পুনিল ঘোষ কেবিনের ভিন্ন ঘরানার খাবার মন কাড়ছে অনেকেরই।
কুমিল্লা রেলস্টেশনের ঠিক পাশেই দেখা মিলবে ভিন্নধর্মী এই খাবারের দোকানের। দোকানে ঢুকেই মালিক পুনিল ঘোষের সঙ্গে দেখা। বয়সের ছাপ পড়েছে শরীরে। তাঁর হাসিমাখা মুখ আর আন্তরিক আচরণ মন ভালো করে দেয়। কথা বলতে বলতেই জানালেন, প্রায় ৪২ বছর ধরে তিনি একাই এই দোকান চালাচ্ছেন, একটানা। দোকানটা বেশ ছোট। ১০ থেকে ১৫ জন একসাথে বসতে পারবে। তবে বেশ সাজানো-গোছানো আর পরিচ্ছন্ন।
বসে পড়তেই হাতে চলে আসে খাবারের মেন্যু। এখানে মূলত দুটো প্যাকেজে পরিবেশন করা হয় দুধ-চিড়ার মিশ্রণ। সঙ্গে আছে আরও কিছু মজাদার আইটেম—আলাদা করে রসমালাই, হাতে বানানো দই, টক দই আর ক্ষীর দইও পাওয়া যায়।
প্যাকেজ ১-এ থাকছে এক বাটি চিড়া, হাতে বানানো দই, নারিকেল, গুড়, কাঁচাগোল্লা, ছানা আর পাউডার দুধের মিশ্রণ। একেবারে ঘরোয়া স্বাদের খাবার। দাম ১১০ টাকা। আর যদি একটু বেশি মিষ্টি চান, তাহলে আছে প্যাকেজ ২। এতে প্যাকেজ ১-এর সবকিছুর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাই। এর মূল্য ১৫০ টাকা। দুটো প্যাকেজই পার্সেল নিতে হলে ১০ টাকা করে বেশি দিতে হবে।
প্রথমে সবগুলো আইটেম একসঙ্গে ভালো মতো মেখে নিয়েই খাওয়া শুরু করতে হবে। চিড়া, দুধ আর টাটকা দই একবার খেলে স্বাদ মুখে লেগে থাকতে বাধ্য। এক প্লেট খেলেই পেট বেশ ভালোভাবে ভরে যাবে। এর দাম যেমন হাতের নাগালে, স্বাদও তেমনি সহজে ভোলার নয়।
পুনিল ঘোষের সঙ্গে গল্প করতে করতেই জানা গেল, গরমের সময় তার দোকানে ভিড় একটু বেশিই হয়। শীতে যদিও বিক্রি কিছুটা কমে আসে, তবে গরমের দিনে দুধ-চিড়া-দইয়ের মিশ্রণ শরীরের জন্য আরামদায়ক বলেই বেশিরভাগ মানুষ এখানে আসেন।
মূলত সকালে নাশতার জন্য ভালো হলেও, বিকালেও খাদ্যরসিক ও স্থানীয় মানুষেরা এখানে ভিড় করেন। ৪২ বছরে অনেক নিয়মিত ক্রেতা তিনি পেয়েছেন যারা নিয়ম করে এই সুস্বাদ্য খাবার খেতে আসেন। এখন ইন্টারনেটের কল্যানে দেশের নানান প্রান্ত থেকে খাদ্যরসিকরা ছুটে আসেন তার দই-দুধ-চিড়া খেতে।সকালের নাস্তায় পরোটা আর ডিমভাজি তো কতই খেলেন, এবার না হয় একটু ভিন্ন কিছুর স্বাদ নিতে চলে যান কুমিল্লার পুনিল ঘোষ কেবিনে—যেখানে এক বাটি দুধ-চিড়া-দই মেশানো সাধাসিধে খাবারেও মেলে একরাশ তৃপ্তি।
ছবি: লেখক