আনন্দ আয়োজনে ডমিনিকের রান্নার ক্লাস
শেয়ার করুন
ফলো করুন

নাদিমা জাহান

মিশেলিন স্টার ব্রিটিশ শেফ ডমিনিক চ্যাপম্যানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে তাঁর তিন–তিনটি প্রিয় পদ রান্না করলেন একঝাঁক রন্ধনপ্রেমী। ২৬ অক্টোবর বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার ক্রিস্টাল রুমে সিটিব্যাংকের প্রায়োরিটি ব্যাংকিং সিটিজেমের বিশিষ্ট ক্লায়েন্টদের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে এই অনন্য আনন্দ আয়োজন। ‘অ্যান আফটারনুন উইথ মিশেলিন স্টার শেফ ডমিনিক চ্যাপম্যান’ শিরোনামের এ অনুষ্ঠানের পুরো সময়জুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ।

রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ বা টপ শেফের মতো পরিপাটি কুকিং স্টেশন
রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ বা টপ শেফের মতো পরিপাটি কুকিং স্টেশন
ছবি: সাইফুল ইসলাম

অনুষ্ঠানের আগেই নজর কেড়েছে দারুণ পরিপাটি আর রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ বা টপ শেফের মতো কুকিং স্টেশনগুলো। ইন্ডাকশন কুকার, চপিং বোর্ড আর সব প্রয়োজনীয় উপকরণ আগে থেকেই সাজানো ছিল সেখানে। চারটি কুকিং স্টেশনে মোট ১৬ জন এই রান্নার ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন।

বিজ্ঞাপন

ডমিনিক চ্যাপম্যান মঞ্চে এসেই স্বভাবসুলভ হাসি আর কথায় মাতিয়ে তোলেন সবাইকে। জানান নিজের সম্পর্কে নানা তথ্য। কিংবদন্তি শেফ হেস্টন ব্লুমেনথালের শিষ্য হিসেবে লম্বা সময় ধরে কাজ করে পরে সম্পূর্ণ স্বকীয় স্টাইলে সদর্পে এগিয়ে যাচ্ছেন এই বিখ্যাত শেফ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসার অকুণ্ঠ প্রকাশ করলেন। তাঁর রান্নার অভিযাত্রা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে কালিনারি জার্নির মাধ্যমে। ব্রিটেনে ফিরে চার প্রজন্ম ধরে পাকাপোক্ত অবস্থানে থাকা পৈতৃক হোটেল ক্যাসেলে নিশ্চিত জীবন এড়িয়ে কঠোর সাধনা করেছেন নিজের অবস্থান গড়তে। বর্তমানে দুটি গ্যাস্ট্রো-পাব ধাঁচের রেস্তোরাঁর মালিক ডমিনিকের এই জীবনকথা শুনছিলেন উপস্থিত সবাই, মন্ত্রমুগ্ধের মতো। জানালেন ভারতীয় উপমহাদেশের খাবার ও খাদ্যসংস্কৃতির প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা।

অংশগ্রহণকারীরা অভিনন্দিত করছেন ডমিনিককে
অংশগ্রহণকারীরা অভিনন্দিত করছেন ডমিনিককে
ছবি: সাইফুল ইসলাম

অবশ্য ব্রিটেনের কালিনারি ম্যাগাজিন ‘কারি লাইফ’-এর উদ্যোগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যালে’ তাঁর যোগ দিতে আসা সে কথাই বলে। সঙ্গে এসেছেন পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনজন স্বনামধন্য ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শেফও। কথা প্রসঙ্গে ডমিনিক জানালেন মজার তথ্য। আগের দিন সাতসকালে গিয়েছিলেন মাছের বাজারে। জানা গেল, নিজে পছন্দ করে কিনেছেন চিংড়ি, রুই মাছ আর গুলশা। অ্যাপ্রোন পরে একেবারে তৈরি হয়ে থাকা অংশগ্রহণকারীদের অভয় দিয়ে রান্নার তোড়জোড় শুরু করেন ডমিনিক।

বিজ্ঞাপন

ডমিনিকের পছন্দের তিনটি পদ রান্না করা হয় এই মজার রান্নার ক্লাসে। কুমড়ার স্যুপ, মাশরুম রিসোত্তো আর চেরি টমেটো দিয়ে পেস্তো লিঙ্গুইন। ভিডিও স্ক্রিনে তাঁর প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করে ও তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী সবাই সোৎসাহে কাটাকুটি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইন্টারকন্টিনেন্টালের দক্ষ শেফরা তো বটেই, ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যালে যোগ দিতে আসা বিখ্যাত শেফরাও মাঠে নেমে পড়েন। সব রকম সাহায্য করার ফাঁকে তাঁরা অংশগ্রহণকারীদের আর দারুণ সব টিপসও দিচ্ছিলেন।

দেখিয়ে দিচ্ছেন ডমিনিক
দেখিয়ে দিচ্ছেন ডমিনিক
ছবি: সাইফুল ইসলাম

খুবই আনন্দঘন পরিবেশে হাসি আর কথায় মেতে কুমড়া, পেঁয়াজ, মাশরুম স্লাইস আর ডাইস করা হলো। শেফের নির্দেশনা মেনে রিসোত্তোর মতো জটিল ডিশও দারুণ রাঁধলেন সবাই। শেফ ডমিনিক মাঝেমধ্যেই মঞ্চ থেকে নেমে সবার সঙ্গে কথা বলছিলেন, চেখেও দেখছিলেন সবার ডিশ। পাস্তার পদটি তৈরির পর অংশগ্রহণকারীরা মঞ্চে গিয়ে নিজেদের বানানো ও পরিবেশিত খাবারের প্লেটসহ ছবি তুললেন শেফের সঙ্গে। সাদা অ্যাপ্রোন পরে হাস্যোজ্জ্বল সবাইকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, কতটা উপভোগ্য হয়েছে পুরো আয়োজন। শেফ ডমিনিক চ্যাপম্যান তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে প্রথমেই বললেন, ব্রিলিয়ান্ট এক্সপেরিয়েন্স। সামনে আবার বাংলাদেশে এসে এমন আয়োজনে অংশ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেন। মিশেলিন স্টারপ্রাপ্ত কোনো শেফের আগমনে এমন আয়োজন আসলেও আগে কখনো হয়নি বাংলাদেশে।

অংশগ্রহণকারী সবাই তাঁদের উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানালেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিটিজেম বনানীর অ্যাসোসিয়েট ম্যানেজার তনুজা মুবাশ্বিরা। নিজেরই রয়েছে মেঘ-হেঁশেল। রন্ধনপ্রেমী তনুজা বললেন, মিশেলিন স্টার শেফের সঙ্গে এমন রান্নার অভিজ্ঞতা সত্যিই অভূতপূর্ব।

সাহায্য করেছেন অন্য শেফরাও
সাহায্য করেছেন অন্য শেফরাও
ছবি: সাইফুল ইসলাম

পুরো অনুষ্ঠানের সবকিছু দেখভাল করছিলেন সিটিজেমের সার্বিক দায়িত্বে থাকা সিটিব্যাংকের হেড অব প্রায়োরিটি ব্যাংকিং ফাহরিয়া হক। এমন একজন শেফের সঙ্গে এ রকম একটি আনন্দ আয়োজন করতে পেরে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদও জানালেন তিনি। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, সব সময় এ রকম ব্যতিক্রমী আর ট্রেন্ডসেটিং কিছু করার লক্ষ্য থাকে তাঁদের। সুর মেলালেন সিটিব্যাংকের ব্র্যান্ড ও কমিউনিকেশনসের প্রধান শাহরিয়ার জামিল খানও।

আর এই পুরো আয়োজনের উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার মার্কেটিং ও বিজনেস প্রমোশন ডিরেক্টর শহিদুস সাদিক। ব্রিটিশ কারি ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে বাংলাদেশে আগত বিখ্যাত শেফ ডমিনিক চ্যাপম্যানকে সঙ্গে করে এত উপভোগ্য একটি বিকেল সবাইকে উপহার দিতে পেরে তিনি নিজেও অত্যন্ত সন্তুষ্টি বোধ করছেন বলেই জানালেন।

চেরি টমেটো দিয়ে পেস্তো লিঙ্গুইন
চেরি টমেটো দিয়ে পেস্তো লিঙ্গুইন
ছবি: সাইফুল ইসলাম

এ অনুষ্ঠানে শুরু থেকেই উপস্থিত ছিল কারি লাইফ টিম। ছিলেন প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, সম্পাদক সৈয়দ বেলাল আহমেদ, উপদেষ্টা এমদাদুল হক টিপু ও শামসুল ইসলাম। প্রত্যেকেই উপভোগ করেন ব্যতিক্রমী এ আয়োজন। টিম কারি লাইফ খুশি। বিশেষত, এ উদ্যোগের প্রশংসা করে নাহাস পাশা বললেন, তাঁদের আয়োজন ব্রিটিশ কারি ফেস্টে আসা একজন উঁচু মানের শেফের অভিজ্ঞতা অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হলো।

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২২, ০৮: ২৫
বিজ্ঞাপন