খেয়ে ফেলা যায় চা-কফির কাপ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

এই শীতে পথ চলতে গিয়ে ধূমায়িত এক কাপ চায়ের জন্য প্রাণ আনচান করতেই পারে। বন্ধুদের আড্ডায়, সহকর্মীদের সঙ্গে দৈনিক পানীয়-বিরতিতে কফিও পিছিয়ে নেই এখন দেশের খাদ্যসংস্কৃতির নিরিখে। কিন্তু চা-কফি পান করার পর কাপটি আলতো হাতে নির্ধারিত জায়গা অথবা বহু ক্ষেত্রে যত্রতত্র ফেলে দেওয়ার বদলে কুড়মুড় করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারলে কেমন হয়!

পরিবেশ বাঁচাতে সারা বিশ্বেই ডিস্পোজেবল বা ওয়ানটাইম ইউজ তৈজসের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। বছরের পর বছর ধরে ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া অপচনশীল প্লাস্টিক বা স্টাইরোফোমের তৈরি এসব কাপ, প্লেট, চামচ আর তরল পানীয় পান করার স্ট্র যে কত উঁচু পাহাড় গড়তে পারে, তা আন্দাজ করতে পরিসংখ্যান দেখার প্রয়োজন নেই, সাধারণ বোধই যথেষ্ট। খেজুরগাছের খোল, কাঠের চিপস, রিসাইকেল করা কাগজ—যুগ যুগ ধরে স্টাইরোফোম বা প্লাস্টিকের তৈজস এড়াতে কত কিছুই না প্রচলনের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বল্প পরিসরে সে চেষ্টা সফল হলেও প্লাস্টিকনির্ভর একবার ব্যবহার্য সামগ্রীই ব্যবহারের সুবিধার দিক থেকে বেশি উপযোগী বলে বিবেচিত হচ্ছে। কাগজের কাপের ব্যাপারেও সেই টেকসই উৎস কি না, বর্জ্য বাড়াচ্ছে কি না, এসব সমস্যা রয়েই গেছে। আর এ ক্ষেত্রে চা-কফির কাপের তাপসহনীয় আর পানীয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ফ্লেভার ঢুকে গেল কি না, সে ব্যাপারও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব দিক বিবেচনায় এডিবল বা ভক্ষণযোগ্য কফির কাপ নিয়ে এসেছে যুগান্তকারী সম্ভাবনা। দেশে দেশে সর্বস্তরের মানুষ লুফে নিচ্ছে এই খাদ্যোপযোগী কাপ। আমাদের দেশেও এখন বেশ কিছু অনলাইন শপে পাওয়া যাচ্ছে এটি।

বিজ্ঞাপন

এডিবল তৈজস এখনো অপেক্ষাকৃত নতুন ধারণা হলেও বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পরিবেশবান্ধব বলে টেকসই উন্নয়নে এর ভূমিকা হতে পারে অত্যন্ত কার্যকর। ঠান্ডা–গরম পানীয় বা ডেজার্ট পরিবেশনে নতুন মাত্রা এনে দিতে পারে এডিবল কাপ। এমনিতেও বিভিন্ন সমীক্ষা বলে, সারা পৃথিবীতেই নতুন প্রজন্ম পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু বিপর্যয় ঠেকানোতে ভূমিকা রাখতে দুপয়সা বেশি খরচ করতে দ্বিধাবোধ করে না।

আবার চা-কফি খেয়ে ওয়েফার দিয়ে বানানো কাপটি খেয়ে ফেলার মজাই আলাদা।
এই এডিবল কাপে কোন কৃত্রিম রং, প্রিজারভেটিভ বা সুইটেনার দেওয়া হয় না। কাপফি, ইয়ামি কাপ নাইনটি, ওয়েরিস ইত্যাদি কোম্পানির বানানো বিস্কুটজাতীয় কাপের প্রতি আগ্রহ এখন দারুণ বেড়েছে। প্রাণিজ ফ্যাটের ব্যবহার করা হয় না এগুলোর কোনোটিতেই; তাই ধর্মীয় বিধিবিধানের দিক থেকেও শঙ্কামুক্ত হয়ে খেতে পারেন সবাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পদার্থবিদ্যার সূত্র মেনে এটি দ্রুত তাপ পরিবহন করে হাতে ধরার জন্য অসহনীয় হয়ে ওঠে না। তবে এক কাপ চা-কফি হাতে ৩০ মিনিটের বেশি আড্ডা দিলে মিইয়ে যাওয়া শুরু করবে কাপ। কোন কোন কোম্পানি দিচ্ছে ৬০ মিনিট ধরে না ভিজে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি। কিন্তু অত ঠান্ডা করে কেইবা চা খায়! কোনো কোনো কাপে ভেতরের দিকে চকলেট, ক্যারামেল বা হোয়াইট গ্লেজ কোটিং থাকে। কিন্তু সেটিও ২০ মিনিট পর্যন্ত সলিড থাকে বলে চা-কফির স্বাদ বদলে যায় না; বরং কাপ চিবোতে গিয়ে চকলেট ফ্লেভার পাওয়া যায় বোনাস হিসেবে। তবে এই কাপে চা-কফি ঢেলে ধাতব চামচে নাড়াচাড়া না করাই ভালো।

কখনো কখনো আমাদের ছোট ছোট সম্মিলিত পদক্ষেপ পৃথিবী বাঁচাতে রাখতে পারে শক্তিশালী ভূমিকা। পথের ধারে, মোড়ের দোকানে অথবা ফুডকার্টে এডিবল কাপের প্রচলন করতে পারে এমনই এক বিপ্লবের সূচনা। আর এমন একটি যুগোপযোগী বিষয়ের পথিকৃৎ হতে পারি আমরা অনায়াসে।

ছবি: সংগ্রহ

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯: ২৮
বিজ্ঞাপন