নাদিমা জাহান
‘ঝড় এলো এলো ঝড়
আম পড় আম পড়
কাঁচা আম ডাঁসা আম
টক টক মিষ্টি
এই যা…
এলো বুঝি বৃষ্টি।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ছড়াগান আমাদের সবাইকেই শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। ঝড়ের দিনে আম কুড়ানোর স্মৃতি নেই, এমন মানুষ এ দেশে খুঁজে পাওয়া ভার। আর কাঁচা আম দেখলে ছেলে-বুড়ো সবারই জিবে আসে জল। ঝিনুকের খোলের ঘষায় অথবা এমনি দাঁতের কামড়ে কাঁচা আম ছিলে নুন-মরিচসহযোগে খাওয়ার স্মৃতি বর্ষীয়ানদের স্মৃতিমেদুর করে। শুধু গ্রাম নয়, শহর অঞ্চলেও আমগাছ দেখা যেত কয়দিন আগেও এখানে-সেখানে। এখন নগরে গাছ কাটার হিড়িক পড়েছে। উঠছে বহুতল দালান। কাটা পড়ছে প্রাচীন–নবীন সব আমগাছ। তবে সব সময় আম পেড়ে না খেতে পারলেও বাজারে কাঁচা আম উঠেছে এখন খুব। বিচিত্র সব পদের আমের আচার দেওয়ার দারুণ সময় এখন।
পাতলা ডালে দিয়ে, চাটনি-অম্বল করে বা ছোট মাছের সঙ্গে ‘চুকাসালুন’ বানিয়ে কাঁচা আম খাওয়া হয় এ দেশে ঘরে ঘরে। ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড আর লাতিন আমেরিকায় সালাদসহ বিভিন্ন পদে কাঁচা আমের ব্যবহার রয়েছে। কাঁচা আম পুড়িয়ে শরবত হয়। হতে পারে কাঁচা আমের জ্যাম-জেলিও। এদিকে আমসত্ত্ব আর আমচুরের কথাও ভুললে চলবে না। তবে এসব পদের তালিকার শীর্ষস্থানটি আমমাখা বা আমভর্তার জন্য রাখা উচিত—এ কথা সবাই মানবেন।
‘তার চেয়ে চল যাই
করি কিছু খাটনি,
নুন-ঝাল-তেল মেখে
করে নিই চাটনি।’
আমভর্তা যেন এক আবেগের নাম। জিব আর হৃদয় দুই-ই সিক্ত হয় কাঁচা আমের এই অনবদ্য পদটি দেখলে। এর কোনো নির্দিষ্ট রেসিপি নেই। তবে কাসুন্দির এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে এর ফ্লেভারে। চিনি, লবণ, মরিচের সমন্বয়টি এমন হতে হবে, তা যেন কাঁচা আমের টক স্বাদ আর চনমনে সুবাসকে ছাপিয়ে না যায়। কাঁচা মরিচও দেওয়া যায় এতে। কেউ কেউ বিটলবণ দেন আমভর্তা করতে। কুরিয়ে, মিহি ঝুরি করে নাকি পাতলা স্লাইস করে কাটা হবে, তা সম্পূর্ণই নিজস্ব পছন্দের বিষয়। সবকিছু মিশিয়ে একটু কচলে নিলেই হয়ে গেল। এরপর শুধু স্বাদকোরকে বৈশাখী ঝড় আর রসনার বৃষ্টি।
‘কি যে মজা চাটনিতে
টক-ঝাল-মিষ্টি,
দেখলেই জিভ পুরে
আসে পানি বৃষ্টি,
আহা কি যে মিষ্টি মিষ্টি
এই যা…
এলো বুঝি বৃষ্টি।’
শুধু মজা নয়, পুষ্টিতেও ঠাসা এই কাঁচা আম। ভিটামিন সি আছে এতে প্রচুর। তবে তার জন্য কাঁচাই খাওয়া চাই কাঁচা আম। আবার শুধু জিবে জলই আনে না, কাঁচা আম পাকস্থলী ও অন্ত্রেও হজম রসের নিঃসরণ বাড়ায়। এতে থাকা নিয়াসিন কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রাখে, হৃদ্যন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে। এর পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামও এ ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখে৷
সূত্র: হেলথলাইন