ঈদুল আজহা মানেই কোরবানির আয়োজন। সকাল থেকেই কাজের আর কোনো শেষ থাকে না এদিন। কোরবানির মূল প্রক্রিয়া আর তারপর মাংস কাটা, রান্না আর সংরক্ষণের কাজগুলো করতে করতে ক্লান্তি চলে আসে। তবে সহজ কিছু টিপস অনুসরণ করলে কোরবানির ঈদের দিনটিতে অনেক বেশি নিশ্চিন্ত থাকা যায়। আসলে কাজ শুধু হাত-পা দিয়ে করলেই হয় না, বরং এ জন্য মাথা খাটাতে হয়। তাহলেই গুছিয়ে আর সহজে করা যায় সবকিছু।
আমাদের নানি-দাদিদের সময় ফ্রিজ আর এমন অনেক কিছুই ছিল না। আবার ঈদের দিন দক্ষ হাতে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় বিশাল পরিবারের জন্য মাংসের পদসহযোগে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করতেন তাঁরা। মাংস ফ্রেশ রাখতে, কলিজার গন্ধ দূর করতে, মাংস তাড়াতাড়ি রান্না করতে এই হেঁশেল সম্রাজ্ঞীরা অবলম্বন করতেন নানা টোটকা। এবারের কোরবানির ঈদের সময়টুকু সহজ করতে এমনই ৬টি টিপস দেখে নেওয়া যাক তাহলে—
১. কেটে রাখা মাংস ফ্রেশ রাখতে
দক্ষ পেশাদার কসাই হোক আর পরিবারের শৌখিন এক দিনের কসাই—তারা তো মাংস কেটেই সারা। এরপর সেগুলো সঠিকভাবে ভাগ করে প্যাকেটে করে ফ্রিজে রাখা, মাংস বিতরণ করা, সবার জন্য রান্না করা—প্রচুর কাজ থাকে। এই ভ্যাপসা গরমে মাংস ফ্রেশ রাখা এক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়। সে জন্য ফ্রিজে রাখার আগপর্যন্ত ভেজা কাপড়ে জড়িয়ে রাখা যায় বড় টুকরা হলে। আর লবণে জড়িয়ে রাখলেও ফ্রেশ থাকে মাংস। রান্না করার আগে ধুয়ে নিতে হবে তা অবশ্যই। আর এভাবে রাখতে হলে মাংসের টুকরা বড় হতে হবে।
২. মাংস দ্রুত নরম করতে
মাংস কেটে ধুয়ে চুলায় চাপাতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায় কোরবানির ঈদের দিন। আর এদিকে দুপুরে খাওয়ার সময় গড়িয়ে যেতে থাকে। রান্নাঘরে বাড়তে থাকে টেনশন। কাবাবের আয়োজন করা হলে খোসাসুদ্ধ কাঁচা পেঁপে বাটা মাখিয়ে বিশ মিনিট রেখে দিলে মাংসের রোয়া নরম হবে। লবণ-লেবু, আনারস ইত্যাদিও ব্যবহার করা যায়। পেঁয়াজবাটা, আদাবাটা ইত্যাদি মসলায় মাংস নরম করার উপাদান থাকে। তাই মাংস ম্যারিনেট করতে এগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করলে ভালো। খোসাসমেত পেঁপে টুকরা করে রান্নার সময় দেওয়া যায়। পরিবেশন করতে তুলে ফেললেই হবে। ছেঁচে নিলেও কাবাব জাতীয় পদ দ্রুত রান্না হয়।
৩. মাংসে যদি গন্ধ থাকে
কখনো কখনো মাংসে, বিশেষ করে খাসির মাংসে একধরনের গন্ধ থাকে, যা অনেকের জন্য অস্বস্তিকর। সিরকা আর লেবুর রস মাখিয়ে ঘণ্টাখানেক রাখলে এই গন্ধ অনেকটাই চলে যায়। কেউ কেউ গমের আটা মাখিয়ে ধুয়ে নেন মাংস। আবার রান্না করতে কাঁচা মরিচ আর সুগন্ধি মসলা ব্যবহার করলেও এ ক্ষেত্রে ভালো ফল মেলে। বিশেষ করে শেষে টালা জিরার গুঁড়া আর গরম মসলার গুঁড়া ছড়িয়ে নামিয়ে নিতে হয় মাংস এমন হলে।
৪. নলি ও খুর পরিষ্কার করতে
নলি, হাঁটু আর খুরের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে খুবই বেগ পেতে হয়। সহজে উল্টে চামড়া খুলে আনতে চাইলে ভুসি মাখিয়ে কাজটি করতে হবে। এতে দ্রুত চামড়া উঠে আসবে। খালি হাত পিছলে গেলে ছোট তোয়ালে বা ফেসক্লথ ব্যবহার করা যায়।
৫. কলিজার গন্ধ দূর করতে
কলিজাভুনা খেতে দারুণ সুস্বাদু। কিন্তু অনেক সময় কলিজায় কেমন একটা গন্ধ রয়ে যায়। সিরকা ও লেবুর রসে ভিজিয়ে রাখলে এই গন্ধ চলে যায়। লবণ-হলুদ দেওয়া ফুটন্ত পানিতে কলিজার টুকরাগুলো দিয়ে পাঁচ মিনিট ফুটিয়ে পানি ঝরিয়ে রান্না করা যায়। এতে আর গন্ধ থাকে না। এদিকে মার্কিন মুলুকে লিভার-কাবাব বা কলিজার এমন ঝটপট গ্রিলড/ভাজা পদ বানানোর আগে দুধে ভিজিয়ে রাখা হয় বিশ মিনিট। উদ্দেশ্য সেই গন্ধ দূর করা।
৬. সহজে ভুঁড়ি পরিষ্কার করতে
গরুর ভুঁড়িভুনা কোরবানির ঈদের এক বিশেষ আকর্ষণ। তবে ভুঁড়ি পরিষ্কার করা এক বিশাল ঝক্কির ব্যাপার। প্রবহমান পানির ধারার নিচে বা হোসপাইপ দিয়ে ভেতরটা পরিষ্কার করা সহজ হবে। আবার পানি ভেতরে ভরে আধা ঘণ্টা রেখে দিলে ভেতরের অর্ধপাচিত খাবার আলগা হয়ে বের হয়ে আসবে সহজে। পাকস্থলীর খাঁজযুক্ত অংশ পরিষ্কার করতে নরম ব্রিসলের ব্রাশ ব্যবহার করলে তাড়াতাড়ি ভালোভাবে পরিষ্কার হবে।
ছবি: পেকজেলসডটকম ও হাল ফ্যাশন