মাইলস্টোন স্কুলের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহতদের অনেকেই এখন চিকিৎসাধীন। পোড়া ক্ষতের রোগীদের জন্য সঠিক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সে অনুযায়ীই তার প্রাত্যহিক ডায়েট ঠিক করতে হবে৷ প্রতিটি রোগীকে বয়স, শারীরিক অবস্থা, পূর্বের ক্রনিক যেকোনো রোগের ইতিহাস অনুযায়ীই খাবার দিতে হবে৷ সেজন্য প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া ভালো৷ কারণ পুড়ে যাওয়া রোগীর দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্যে যথাযথ পরিমাণে সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে হয়। এখানে একটা সাধারণ গাইডলাইন দেওয়া হলো পোড়া ক্ষতের জন্য উপকারী ডায়েট প্রসঙ্গে।
কেন এক্ষেত্রে পুষ্টি এত গুরুত্বপূর্ণ
পোড়ার কারণে শরীর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এই টিস্যু পুনর্গঠন এবং নতুন কোষ তৈরিতে প্রচুর শক্তি ও পুষ্টি প্রয়োজন হয়, যা খাবারের মাধ্যমেই নিশ্চিত করতে হয়।
পোড়া ক্ষতের রোগীর পুষ্টির চাহিদা
উচ্চ ক্যালরি
বয়স আর বার্নের মাত্রা ও বিস্তৃতি ভেদে ৪,০০০–৫,০০০ কিলোক্যালরি পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে।
উচ্চ প্রোটিন
প্রতিদিন প্রতি কেজি ওজনে ২–২.৫ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন।
উৎস: ডিম, মাছ, মুরগি, ডাল, দুধ, দই, পনির।
শর্করা
এটিই আমাদেরকে শক্তি দেয়।
উৎস: গোটা শস্য যেমন চাল, গম ইত্যাদি,,আলু, কলা, আপেল, আম, খেজুর (হজম ক্ষমতা অনুযায়ী)।
স্বাস্থ্যকর চর্বি
ত্বকের অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ এর ফ্যাট লেয়ার।
উৎস: অলিভ অয়েল, কোকোনাট অয়েল, বাদাম, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড।
ভিটামিন সি
ত্বক মেরামত ও কোলাজেন তৈরিতে সহায়ক।
উৎস: আমলকি, পেয়ারা, লেবু, কমলা, কাঁচামরিচ
ভিটামিন এ
ত্বকের পুনর্গঠনে সহায়ক।
উৎস: গাজর, সবুজ শাক, মিষ্টি আলু, ডিমের কুসুম।
জিঙ্ক
ক্ষত নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ।
উৎস: মাংস, ডিম, ডাল, বাদাম।
আয়রন
রক্ত তৈরিতে সহায়ক।
উৎস: লাল মাংস, কলিজা, গাঢ় সবুজ শাক
ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম
হাড় ও ইমিউন ফাংশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
উৎস: রোদে সময় কাটালে ভিটামিন ডি পাবেন। দুধ, ছোট মাছ ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম আছে।
প্রচুর তরল গ্রহণ জরুরি
পোড়া রোগীর শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায়, তাই পর্যাপ্ত তরল পান করা অত্যন্ত জরুরী। এক্ষেত্রে নিচের পানীয়গুলো রাখতে পারেন হাতের কাছে৷
•বিশুদ্ধ পানি
•খাবার স্যালাইন (ডাক্তারের পরামর্শে)
•চিনি ছাড়া ফলের রস
•ডাবের পানি
•মুরগি/সবজির স্যুপ ইত্যাদি ধরনের তরল জাতীয় পানীয় রোগীকে দেয়া যেতে পারে।
বর্জনযোগ্য কিছু খাবার
•অতিরিক্ত চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার
•ভাজাভুজি ও চর্বিযুক্ত খাবার
•বেশি সোডিয়ামযুক্ত খাবার
•রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট
•প্রক্রিয়াজাত মাংস
•ক্যাফেইন, কৃত্রিম মিষ্টি, মশলাদার খাবার
শরীর পুড়ে যাওয়া ব্যাপারটা যেমন শারীরিকভাবে যন্ত্রণাদায়ক, ঠিক তেমনি মানসিকভাবেও রোগীকে দুর্বল করে দেয়। তাই তার পাশে থাকুন এবং তার মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়তা করুন।
লেখক: অনারারি নিউট্রিশনিস্ট, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা