আমাদের সকাল শুরু হয় এক কাপ চা দিয়ে। ক্লান্ত দুপুরেও চাই চা, সন্ধ্যার আড্ডার তো অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী! কিন্তু আপনি কি জানেন, শুধু স্বাদ নয়—চা আমাদের শরীর ও মনের জন্য হতে পারে এক দারুণ সহচর? তবে শর্ত একটাই—ঠিক চা, ঠিক উপায়ে, ঠিক সময়ে পান করতে হবে। আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবস।বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ঘরেই সকাল শুরু হয় এক কাপ চা দিয়ে। তবে আপনি কি জানেন, চা শুধু জাগিয়ে তোলার জাদু নয়, শরীর ও মনের যত্নেও এক অসাধারণ সঙ্গী?
চায়ের বিভিন্ন ধরন এবং সেগুলোর স্বাস্থ্যগুণ জানলে চায়ের প্রতি ভালোবাসা যেন আরও একটু বাড়বে!
গ্রিন টি
সবচেয়ে জনপ্রিয় স্বাস্থ্যবান্ধব চা। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই চা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।গ্রিন টি মূলত অক্সিডাইজড না হওয়া চা পাতা থেকে তৈরি। এতে থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার মধ্যে অন্যতম ক্যাটেচিন।
উপকারিতা
ওজন কমাতে সাহায্য করে
হজমে সহায়ক
ত্বক ভালো রাখে
কখন পান করবেন
খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর, দিনে ২-৩ কাপ পর্যন্ত
যেভাবে পান করবেন
৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গরম পানিতে ২-৩ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। চা ফুটাবেন না, এতে গুণ নষ্ট হয়।দিনে দুই থেকে তিন কাপের বেশি পান করবেন না। ভারী খাবার খাওয়ার পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর এই চা পান করলে তা হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
হোয়াইট টি
গবেষকরা এই চাকে সবচেয়ে হালকা ও সবচেয়ে পরিশুদ্ধ চা হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। সাদা রঙের কচি পাতা থেকে তৈরি হোয়াইট টি সবচেয়ে কম প্রসেসড হওয়ায় এর পুষ্টিগুণ সবচেয়ে বেশি।
উপকারিতা
ত্বকে বার্ধক্য রোধ করে
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
যেভাবে পান করবেন
৭৫–৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম পানিতে ৪-৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। হালকা সুগন্ধ আর মৃদু স্বাদই এর বিশেষত্ব।
উলং টি
একে আপনি মাঝামাঝি স্বাদের চা বলতে পারেন । গ্রিন ও ব্ল্যাক চায়ের মাঝখানে অবস্থান এই চায়ের। স্বাদে ভিন্নতা ও স্বাস্থ্যগুণে দারুণ।
উপকারিতা
মেটাবলিজম বাড়ায়
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
ওজন কমাতে সহায়ক
মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক
কখন পান করবেন
সকালের দিকে বা ব্যায়ামের পর।
যেভাবে পান করবেন
৮৫–৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম পানিতে ৩-৫ মিনিট রেখে দিন। ফুটিয়ে খেলে স্বাদ ও গুণ দুটোই কমে যায়।
রং চা
সবার প্রিয় ঘরোয়া চা। আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী এই ব্ল্যাক টি। উপকারিতা থাকলেও পরিমিত পান করাই শ্রেয়।
উপকারিতা
মনোযোগ ও সতর্কতা বাড়ায়
হজমে সহায়ক
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে
যেভাবে পান করবেন
চা পাতা ফুটিয়ে পরে ছেঁকে খান। চাইলে লেবু বা মধু যোগ করুন।আদা ,লবঙ্গ সহযোগে এই চা হয়ে ওঠে আরও দারুণ
দুধ চা
স্বাদে রাজা, স্বাস্থ্যেও কিছুটা উপকারী। সকালবেলা এক কাপ দুধ চা থাকে অনেকের সকালের নাস্তায়। কারো কারো তো দুধ চা ছাড়া দিন শুরুই হয়না।
উপকারিতা
আরাম দেয়, স্ট্রেস কমায়
আদা বা মশলা যুক্ত থাকলে ঠান্ডা-কাশি প্রতিরোধে ভালো
কারো কারো তো দুধ চা ছাড়া দিন শুরুই হয়না
যেভাবে পান করবেন
চা ও দুধ একসাথে ফুটিয়ে বানান। তবে চিনির মাত্রা কম রাখাই ভালো।
ফুটাব, না কি ভিজিয়ে রাখব
চা ফুটানো মানেই বেশি উপকার নয়। বিশেষ করে গ্রিন, হোয়াইট বা উলং টি-তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অতিরিক্ত তাপে নষ্ট হয়ে যায়। তাই, এসব চা স্টিপিং পদ্ধতিতে গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পান করাই সবচেয়ে ভালো। আর ব্ল্যাক টি বা দুধ চা ফুটিয়ে খাওয়াই ঠিক।
এক কাপ চায়ে সুস্থ জীবন। কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন।
খালি পেটে চা নয়—অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ায়
ঘুমের আগে চা নয়—ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে
দিনে ৩-৪ কাপের বেশি নয়
বেশি চিনি নয়—স্বাদে হালকা চা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
আজ বিশ্ব চা দিবস-এ নিজের পছন্দের এক কাপ চা হাতে তুলে নিন—শুধু স্বাদের জন্য নয়, নিজের সুস্থতার জন্যও!