বেতের তৈরি ঘর সাজানোর আসবাব তো সবার পছন্দ। সেই গাছের থোকায় থোকায় যে টক-টক স্বাদের বেতফল হয়, তার সঙ্গে পরিচয় নতুন প্রজন্মের নেই বললেই চলে। বেতফলের শক্ত আবরণ ছিড়ে ভেতরের নরম রসালো অংশটুকুর স্বাদ শৈশবকে সুন্দর করেছে একসময় অনেকেরই। খোসা, রসালো অংশ ও বীজ তিনটি অংশই নন-টক্সিক, অর্থাৎ বিষক্রিয়া মুক্ত।
বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর মাসে আর ফল পাকে মার্চ-এপ্রিল মাসে। বাংলায় হিসেব করলে চৈত্র, বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে বেতফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। তার মানে এখনই বেতফল খাওয়ার উপযুক্ত সময়। বেতফল বেত্তুন, বেথুন, বেথুল, বেতগুলা, বেতগুটি, বেত্তুইন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। অর্থকারী এই বেতগাছের ফলের গুণাগুণও চমকপ্রদ।
ফাইটোকেমিক্যাল
বেত গাছের ফলে ফাইটোকেমিক্যাল আছে৷ ফাইটোকেমিক্যাল হলো উদ্ভিজ রাসায়নিক উপাদান, যা ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ফলে এটি এন্টিব্যাক্টেরিয়াল ও বায়োঅ্যাকটিভ একটি ফল।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
বেতফলে আছে ফ্ল্যাভেনয়েডস। ফ্ল্যাভোনয়েডস একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা দেহকে প্রতিদিনের বিষক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া, বেতফলে আছে ট্যানিন। এটি অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান। এই ফাইটোকেমিক্যালটি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে স্থায়ী করে। এতে থাকা ট্রিটারপেনয়েডস নামক উপাদানটি স্নায়ুতন্ত্র, হৃদযন্ত্র ও লিভারের যত্নে অপরিহার্য একটি উপাদান। তাছাড়া এই ফলের খোসা বা চামড়া র খাওয়ার উপযুক্ত না হলেও, এগুলোতে থাকা পুষ্টিগুণ, ফলের পুষ্টির শোষণ ত্বরান্বিত করে।
অন্যান্য ঔষধিগুণ
বেতফলের টকমিষ্টি স্বাদ খাবারের অরুচি দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যালের সঙ্গে বেতফলে আছে ভিটামিন সিও। ফলে দাঁতের গোড়া শক্ত করতে এর কার্যকারিতা চমৎকার। এই ফলে আরও থাকে স্বল্পমাত্রার প্রোটিন, পটাসিয়াম ও পেকটিন। গ্রামাঞ্চলে এই ফল বিভিন্ন রোগের নিদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাশয় রোগের চিকিৎসা করতে ব্যবহার করা হয় এই ছোট ফলগুলো। আবার শুক্রাণু বৃদ্ধিতেও বেতফলের জুড়ি নেই।
তবে এখনকার সময়ে আশংকাজনক হারে কমছে বেতগাছ। ফলে শহরে তো নেই-ই, গ্রামাঞ্চলেও বেতফলের দেখা পাওয়া ভার। বিলুপ্ত হওয়ার আগে এই খাট্টামিঠা স্বাদের ফলের গাছগুলোর প্রতি আমাদের যত্নশীল হওয়ার এখনই সময়৷
সূত্র: চিকিৎস ডট কম, ইজি আয়ুরভেদা, অনলি মাই হেলথ ডট কম