এমন দিনে প্রায়শই জলাশয় কিংবা পুকুরের দিকে তাকালে চোখে পড়ে লাল বা সবুজ রঙের এই ফল। পানিতে জন্মে বলেই মূলত এই ফলটির নাম পানি ফল। আবার দেখতে কিছুটা শিঙাড়ার মতো হওয়ায় এটি এই নামেও পরিচিত। স্বাদ পানসে হলেও বিভিন্ন গুণে ভরপুর এই পানি ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন, ভিটামিন বি, ভিটামিন এ সহ বিভিন্ন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। শুধু স্বাস্থ্য নয়, ত্বক ও চুল ভালো রাখতেও এই ফলের কোনো জুড়ি নেই। পানি ফল কাঁচা, সালাদ কিংবা সবজি হিসেবেও খেতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, পানি ফলের ৯টি উপকারিতা।
১. ওজন কমাতে সাহায্য করে
যাঁরা ওজন কমাতে চান,এই দিনে তাঁদের জন্য পানি ফলের কোনো বিকল্প নেই। এই ফলটিতে ক্যালরির মাত্রা থাকে খুবই কম। সেই সঙ্গে এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার। ফাইবার দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ক্ষুধা ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই অস্বাস্থ্যকর কোনো স্ন্যাকস না খেয়ে খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন পানি ফল। এটি খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরিও জমা হয় না, পাশাপাশি ঘন ঘন ক্ষুধাও লাগে না, যা ওজন কমাতে বেশ কার্যকর।
২. হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
পানি ফল প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়ামে ভরপুর। এই খনিজটি হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করার জন্য খুব জরুরি। পানিফল রক্তে সোডিয়ামসহ অন্যান্য খনিজের ভারসাম্য ঠিক রাখে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
৩. ত্বক ভালো রাখে
ত্বক ভালো রাখতে এই ফলের কোনো জুড়ি নেই। কারণ এতে রয়েছে ভিটামি বি ও ভিটামিন ই, যা ত্বককে রাখে লাবণ্যময়ী। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এটি ত্বকে কোলাজেনের উৎপাদন বাড়াতেও সাহায্য করে। যার ফলে খুব সহজে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না। ত্বকের তারুণ্য বজায় থাকে।
৪. রক্তে শর্করার মান নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে এই ফল খুব ভালো। পানি ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে বাধা দেয়। সেই সঙ্গে পানি ফলে রয়েছে ফাইবার। এটি শরীরে শর্করার শোষণ ধীর করে। রক্তে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
পানি ফলে উপস্থিত ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। শরীরকে বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচায়। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরকে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও রক্ষা করে। এছাড়া শীতকালে সাধারণ ঠাণ্ডা, সর্দি এবং কাশির মতো সমস্যা দূর করতে এই ফল বেশ কার্যকর।
৬.হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে
যাঁদের হজমের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য পানি ফল হতে পারে একটি প্রাকৃতিক সমাধান। এতে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার খাবার হজমের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। এছাড়া পানি ফল কোষ্ঠকাঠিন্য জাতীয় সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে।
৭.হাড় মজবুত রাখতে সহায়তা করে
পানি ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম,যা হাড়কে মজবুত রাখে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া, পানি ফলে থাকা ভিটামিন ডি ও ফসফরাস হাড়ের গঠন ও পুনর্গঠনে সাহায্য করে, যা হাড়ের ঘনত্ব ঠিক রাখে এবং হাড়কে ক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচায়।
৮. মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে
পানি ফলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর। এটি স্নায়ু শিথিল করে এবং হ্যাপি হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। স্ট্রেস বা হতাশা থেকে মুক্তি পেতেও খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন এই ফল।
৯. কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত করে
পানি ফল প্রাকৃতিক ডাইইউরেটিক হিসেবে কাজ করে। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ এবং টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। খাবারের তালিকায় পানি ফল রাখলে কিডনি সুস্থ থাকে এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
সূত্র: হেলথ শটস