শীতের সঙ্গে গুড়ের রয়েছে এক নিগূঢ় সম্পর্ক। বারো মাসে তেরো পার্বণের এই বাংলায় এমন দিনে জমে ওঠে পিঠা-পুলির উৎসব। বর্তমানে গুড় নেই এমন ঘর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ধোঁয়া ওঠা গরম গরম ভাপা পিঠার ভেতরে ভাপে গলে যাওয়া গুড় যেন অমৃত। নলেন গুড়ের পায়েস যে একবার খেয়েছে, সেই স্বাদ ভোলেনি কোনোদিন। যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যগতভাবেই এদেশে ব্যবহৃত এই গুড়ের আছে নানা গুণ। এমনকি এক সময় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা উপকরণগুলোর মধ্যেও সামনের সারিতে জায়গা ছিল গুড়ের। আখ, খেজুর ও তালগাছের রস ঘন করে পাক দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। গুড় প্রধানত তিন প্রকার। ঝোলাগুড়, পাটালিগুড় ও চিটাগুড়। এবার গুড়ের যত অজানা গুণের কথা জেনে নিই।
আখের গুড়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি ও শর্করা থাকে। ডায়রিয়ার রোগীকে গুড়ের স্যালাইন খাওয়ানো হয়।
তালের গুড় খেলে তা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করার মাধ্যমে লিভার পরিষ্কার করে।
যাঁরা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তাঁরা খেজুরের গুড় খেলে উপকার পাবেন। কেননা, এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম।
ঋতুস্রাবের সময় নারীদের জন্য আয়রনসমৃদ্ধ এই গুড় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি লোহিত রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিন গঠনে সাহায্য করে এবং রক্তের ক্ষয় পূরণ করে।
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের উপস্থিতি রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে মসৃণ প্রবাহ হয়। আর বেদনাদায়ক ক্র্যাম্প হয় না।
হাড় ও বাতের ব্যথা কমাতে খেজুরের গুড় বেশ উপকারী।
খেজুরের গুড় খেলে বাড়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা।
গুড় ব্রণ থেকে মুক্তি দিতে এবং ত্বকের বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলো স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বল ত্বক প্রদানের পাশাপাশি ব্রণ এবং পিম্পলের দাগের দ্রুত নিরাময় করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি শুধু গোড়া থেকে চুলের ফলিকলগুলোকে শক্তিশালী করে না; বরং চুলের নিষ্প্রাণ হওয়া প্রতিরোধ করে এবং অকালে চুল পাকা কমায়।
খেজুরের গুড়ে থাকে নানা ধরনের খনিজ পদার্থ, প্রোটিন আর ভিটামিন। ফলে এই গুড় নিয়ম করে খেলে শীতকালে কাজের শক্তি বাড়ে।
গুড়ে হজমের সমস্যা দূর হয় আর কমে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও।
গুড়ের গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকায় অগ্ন্যাশয় কোষ থেকে রক্তের প্রবাহে নির্গত ইনসুলিনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গুড় রক্তে অতিরিক্ত চর্বি ও লিপিড জমায় বাধা দেয়।
গুড় পলিফেনল আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খনি।
এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, গুড়ের নির্যাস যখন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যোগ করা হয়, তখন তা ক্যালরি সীমিত করে এবং ওজন কমানো শুরু করে শরীরের চর্বি কমিয়ে।
গুড় শিশু-কিশোরদের আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে। বি ভিটামিনগুলো ছাড়াও এটি ফোলেটের একটি ভালো উৎস, একটি খনিজ যা লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করে; তাই মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার প্রতিরোধে সহায়তা করে।iji
গুড়ে ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজের মতো হার্ট প্রতিরক্ষাকারী পুষ্টি উপাদান।
এগুলো শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে, রক্তচাপ কমাতে, রক্ত জমাট বাঁধতে এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের প্রদাহ প্রতিরোধে কার্যকরভাবে সাহায্য করে।
প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় গুড় অ্যারিথমিয়া বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ব্লক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
সূত্র: ইজি আয়ুর্বেদ, ইন্ডিয়া টাইমস