দেশি শাকের যত অবাক করা পুষ্টিগুণ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পুঁইশাক

প্রবাদ আছে, ‘মাছের মধ্যে রুই, শাকের মধ্যে পুঁই’। অতিপরিচিত, পুষ্টিগুণে ভরা, সহজলভ্য, সারা বছর পাওয়া যায় এবং সুস্বাদু শাকের মধ্যে পুঁইশাকের তুলনা নেই। পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ। পাশাপাশি রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। পুঁইশাক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি, ত্বকের সুস্থতা বাড়াতে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় বেশ উপকারী। নিয়মিত পুঁইশাক খেলে পাইলস, ফিস্টুলা ও হেমোরয়েড হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

পুঁইশাক আমাদের শরীর থেকে সঠিকভাবে বর্জ্য নিষ্কাশন করে বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটিসহ নানা সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া পুঁইশাকের আছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ। শরীরের কোনো অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফুলে গেলে পুঁইশাকের শিকড় বেটে ওই স্থানে লাগালে উপশম পাওয়া যায়। মুখের ব্রণের সমস্যা দূর করতেও পুঁইশাকের কার্যকারিতা রয়েছে। খোসপাঁচড়া ও ফোড়ার সংক্রমণ রোধ করতেও পুঁইশাকের জুড়ি নেই।

পালংশাক

বর্তমানে অনেকে পালংশাককে সুপারফুডও বলেন। এতেই বোঝা যায়, এই শাকে কী পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে। পালংশাকে থাকে প্রচুর ভিটামিন এ। এটি মানুষের ত্বক ও শ্লেষ্মা ঝিল্লি থেকে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহায়তা করে। পালংশাককে বলা হয়, ভিটামিন সির আধার। আর ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় তা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন রাখে না। পালংশাক ভিটামিন কের বড় উৎস। এ ছাড়া পালংশাকে রয়েছে ভিটামিন ডি, আঁশ, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। এসবই হাড়ের গঠন ও মজবুত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়।

এর উপকারিতার তালিকাও বেশ বড়। যেমন এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে; বিভিন্ন সংক্রমিত রোগ থেকে রক্ষা করে এবং হৃদ্‌যন্ত্র সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ত্বকের বাইরের স্তরের আর্দ্রতা বজায় রাখে। এ ছাড়া ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।

বিজ্ঞাপন

পাটশাক

সোনালি আঁশ হিসেবে পরিগণিত অর্থকরী ফসল পাট। কিন্তু এর পাতা বা পাটশাকেরও গুরুত্ব কম নয়। অধিকাংশ মানুষের পছন্দের দেশি বিভিন্ন শাকের তালিকায় প্রথম দিকেই থাকবে পাটশাক। পাটশাক খেতে হালকা তিতা স্বাদের হলেও তোষা বা বগী পাটশাক খেতে দারুণ। পুষ্টিগুণ বিবেচনায়ও রয়েছে এর গুরুত্ব। পাটশাকে রয়েছে প্রচুর ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি। এ ছাড়া রয়েছে শর্করা, আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি–সহ প্রচুর খাদ্যশক্তি। দৈনিক একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কমপক্ষে ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম এবং শিশুদের ২৫০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ প্রয়োজন, যা অনায়াসেই পাটশাক থেকে পাওয়া সম্ভব। নানান উপাদান মিশিয়ে পাটশাক ভাজি করে যেমন খাওয়া যায়, তেমনি ছোট মাছ দিয়ে রান্না করলেও এর স্বাদ থাকে অটুট।

কচুশাক

আমাদের দেশের অতিপরিচিত ও জনপ্রিয় একটি শাকের নাম কচুশাক। গ্রামাঞ্চলে পতিত জমিতেই দেখতে পাওয়া যায় এই গাছ। কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি ও ভিটামিন এ। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও আয়রন। সংগত কারণেই আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণে কচুশাক হতে পারে প্রকৃতির অনন্য উপহার। ভিটামিন এ–র অন্যতম উৎস হিসেবে রাতকানা রোগসহ এই ভিটামিনের অভাবে বিভিন্ন রোগ থেকেও মুক্তি দিতে পারে কচুশাক।

গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য দারুণ উপকারী এই শাক হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া রক্তস্বল্পতা সমস্যার সমাধান, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি এবং শরীরের অক্সিজেন সরবরাহ চলমান রাখতে এবং দাঁত ও হাড় ভালো রাখতে কচুশাক বেশ কার্যকর। কচুশাক ভর্তা এবং তরকারি হিসেবে দারুণ সুস্বাদু।

ছবি: উইকিপিডিয়া

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪: ০০
বিজ্ঞাপন