রুপালি সটান দেহ, সাদা ঝিনুকের খোলের মতো আঁশের সুশৃঙ্খল কারুকাজ। কোনোটি আবার আঁশহীন মসৃণ দেহেই উজ্জ্বল। খলবলিয়ে ওঠা ঝকঝকে-চকচকে অসংখ্য জাতের মাছের অনন্য রূপ বাঙালিমাত্রেরই পরম আরাধ্য। রূপসী প্রিয়ার কপোলের লালিমা আর তরতাজা মাছের কানকোর লালচে আভা—বেছে নিতে বললে কিছুটা দ্বিধায় পড়ে যাবে মৎস্যপ্রেমী বাঙালি।
এবার বৃষ্টিবাদলা শরৎকালে এসে যেন আরও জেঁকে বসেছে। রাতদিন বর্ষণ না হলেও খালবিল-নদীনালা ভরভরন্ত। এমন দিনে ঝোলে-ঝালে বা ভুনা-ভাজা করে মাছ হলে বাঙালির পাতে গরম ভাত ছাড়া আর কিছুই লাগে না। তবে শুধু ‘ইলিশ গেল’ রব না তুলে আরও দারুণ সব পুষ্টিকর ও সুস্বাদু মাছের রূপবিভা দেখা যেতে পারে একের পর এক অনবদ্য ছবিতে।
মৃদু অথচ রাজসিক স্বাদের এই রূপসী মাছের ঘ্রাণ বড়ই মনোহর। ভুলেও বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না এ মাছ রাঁধতে। আর অতিরিক্ত সময় ধরে রাঁধলেও এর স্বাদ হারিয়ে যায়। মসলা হালকা হওয়াই কাম্য।
রুপালি ছটায় চোখধাঁধানো এ মাছের অনবদ্য স্বাদ গ্রহণের পথে সত্যিকার অর্থেই কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় এর মিহি সারিবদ্ধ অসংখ্য কাঁটা। সমস্যা সমাধান করতে ফলি মাছের কোপ্তার মতো সুখাদ্যের আবির্ভাব বাঙালির হেঁশেলে। তবে ঝোলেও ফলি মাছের জুড়ি নেই।
চকচকে রুপালি বাটার ঝোল বা ভুনা উপকূলবর্তী অঞ্চলে দারুণ জনপ্রিয়। তাজা বাটা মাছ মিলে যেতে পারে সপ্তাহান্তের সকালে বাজার ঘুরলে। সংগত দিতে বেগুন নেওয়া যায়। নয়তো জিরাবাটায় ঝোলও দারুণ।
দেশের অনেক অঞ্চলেই আইড় মাছের এক অন্য রকম কদর আছে অতিথি আপ্যায়নে। একটু বেশি ঝাল-মসলায় ভুনা করলে আইড় মাছের স্বাদ দারুণ খোলতাই হয়। পোড়া পোড়া করেও ভুনা করা হয় কোনো কোনো এলাকায়।
পুষ্টিগুণ তো বটেই, রূপে আর স্বাদেও শিরোপা পাওয়ার যোগ্য মলা। মাথাসহ বেটে বড়া, চচ্চড়ি বা মাখা ঝোল হতেই পারে; ছোট মাছের মজাই আলাদা। সঙ্গে একটু ধনেপাতা হলে পুরোই সোনায় সোহাগা।
রোগীর পথ্য হিসেবে শিং মাছের ঝোল একচ্ছত্র রাজত্ব করছে যুগ যুগ ধরে। প্রসূতি আর স্তন্যদানকারী মাকেও খাওয়ানো হয় এই মাছ। পেঁপে, কাঁচকলা, আলু—সবকিছুর সঙ্গেই এর বড়ই সখ্য। তবে শিং মাছ তাজা হলে মসলা হালকা হলেই ভালো।
কই মাছের প্রাণ যতই শক্ত হোক, বাঙালি তাকে পেটে চালান করতে বড়ই উদ্গ্রীব। তেলকই কিংবা ফুলকপি দিয়ে ঝোল-তেলতেলে কই মাছের স্বাদ একেবারেই অন্য রকম। তাই তো কইয়ের তেলে কই ভাজার ব্যাপারটি বলা হয়।
খোলসের বর্ম পরা, পা দিয়ে সাঁতার কাটা জলজ এ প্রাণী মৎস্যকুলের কেউ নয়। তবে মাছের বাজারে এনার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। চিংড়ির পদের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তেমনি এর স্বাদ আর টেকশ্চারকে অনির্বচনীয় বলাই যায়। সর্বজনীন ভালোবাসা পেয়ে আসছে চিংড়ি যুগে যুগে।