মিষ্টির প্রতি ভালোবাসা আমাদের কাছে নতুন কোনো বিষয় নয়। উৎসব, অতিথি আপ্যায়ন, সুখবর-সব কিছুতেই যুগ যুগ ধরে বাংলার ঘরে ঘরে মিষ্টির উপস্থিতি অনিবার্য। এমনকি ভরা পেটেও মিষ্টি দেখে লোভ সামলানো দায়। সুকুমার রায় সংগত কারণেই লিখেছেন ‘তেঁতুল লই, চাটনি লই, লই আচার-চানাচুর— শেষে খাই এক হাঁড়ি রসগোল্লা!’
আর সে মিষ্টি হাঁড়ি থেকে নামানো গরমাগরম হলে তো কথাই নেই। মিষ্টির স্বাদ সবচেয়ে বেশি থাকে এমন গরম অবস্থায়। তখন এর টেক্সচারও থাকে নরম, মোলায়েম; আর জিবে দিলেই মিলিয়ে যায়। চিনির সিরাও তখন থাকে পাতলা, পরে যা ঘন হয়ে যায়। অতএব, লোভনীয় স্বাদের জন্যই গরম মিষ্টির এত সুখ্যাতি। এ ছাড়া, গরম মিষ্টি মানেই ফ্রেশ। এই বিষয়টি তো আছেই।
মফস্বলের বাজারগুলোতে এখনো গরম মিষ্টি পাওয়া গেলেও ঢাকায় তা বিরল। আর কিছু জায়গায় মিললেও আছে মান ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন। এই শূন্যস্থান পূরণ করতেই ক্ষীরওয়ালা ঢাকায় নিয়ে এসেছে লাইভ মিষ্টি স্টেশন। এ বছরের ২০ জুন বসুন্ধরা আবাসিক মেইন গেটে (যা যমুনা পকেট গেট নামে বেশি পরিচিত) অবস্থিত রহমান টাওয়ারে, ঢাকায় তাদের যাত্রা শুরু হয়।
ফজলে রাব্বি সিয়াম ও মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ, তাদের এই উদ্যোগ শুরু করেন ২০২০ সালে। চট্টগ্রামের মেহেদীবাগে অল্প কিছু ধরনের মিষ্টি নিয়ে। সেখানেও বেশ জনপ্রিয়তা পায় তাদের এই মিষ্টির উদ্যোগ। চট্টগ্রামে ক্ষীরওয়ালার রয়েছে ৪টি চেইনশপ। চট্টগ্রামে ক্ষীরওয়ালার জনপ্রিয়তার পর, দুই বন্ধু ভাবতে থাকেন নতুন আর কী করা যায়। সেই ভাবনা থেকেই লাইভ মিষ্টির ধারণা। কারণ মানুষকে সবচেয়ে সুস্বাদু মিষ্টির স্বাদ দিতে চাইলে লাইভ মিষ্টির বিকল্প নেই।
ক্ষীরওয়ালার পরিষ্কার ও গোছানো লাইভ স্টেশনে ছানা গোল গোল করে কেটে বড় কড়াইয়ে ভাজা হয়। এরপর তুলতুলে ছানার বলগুলো ডুবানো হয় চিনির শিরায়। সেই গরম মিষ্টি গুলোই পরিবেশন করা হয় ক্রেতাদের। বলা যায় এই ধোঁয়া ওঠা মিষ্টি দেখে যে কারও জিভে জল চলে আসবে। তবে সব মিষ্টি গরম-গরম পরিবেশন করা হয় না। গরম মিষ্টির তালিকায় রয়েছে গোলাপজাম, রসগোল্লা, কমলাভোগ, টার্কিশ লুকুম, রাজমোহন ও রাবড়ি জিলাপির নাম।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে সাড়া ফেলেছে এই মিষ্টির দোকান। গরম মিষ্টি চেখে দেখতে ভিড় করছেন মিষ্টিপ্রেমিরা। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খোঁজ করে আসছেন গরম মিষ্টির স্বাদ নিতে। দোকানে উপস্থিত সাইমার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় বোনের কাছে ক্ষীরওয়ালার লাইভ মিষ্টির কথা শুনে তিনি আজ তাঁর বন্ধুদের নিয়ে এখানে এসেছেন।
ছেলেমেয়েদের জন্য গরম গোলাপজাম আর রসগোল্লা কিনেছেন সাজিদ রহমান। তিনি বলেন, আমরা বাচ্চাদের কাছে এখন গরম মিষ্টির গল্প করি। কিন্তু ঢাকায় তো নেই। ক্ষীরওয়ালার এই অভিনব উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। এখন ইচ্ছে করলেই বাচ্চাদের সঙ্গে এসে উপভোগ করা যাবে গরম মিষ্টি।
অল্প সময়ে এমন জনপ্রিয়তা বেশ উপভোগ করছেন ক্ষীরওয়ালার উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি সুখ্যাতি ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ বলেন, আমি আর আমার পার্টনার চেয়েছিলাম গল্পে শোনা গরম মিষ্টিকে শহুরে মানুষের কাছে নিয়ে আসতে। গরম মিষ্টি শুনলেই কেমন একটা ক্রেভিং হয়। আর আমাদের ইচ্ছে যতরকম সম্ভব আমরা গরম মিষ্টি পরিবেশন করব। এই গরম মিষ্টির স্বাদই অল্প দিনে ঢাকায় আমাদের এত পরিচিত করে তুলেছে।
গরম মিষ্টি ছাড়াও ক্ষীরওয়ালার অন্যান্য নিয়মিত মিষ্টিগুলো পাওয়া যাচ্ছে এই শপে। দুবাই কেক স্মুদি ও কেকসিকলস তাদের ‘হট সেলিং আইটেম’ । ক্ষীরওয়ালার আরেকটি বিশেষত হচ্ছে তাদের অ্যারাবিয়ান মিষ্টিগুলো তৈরি করেন একজন ওমান শেফ। আবার সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে পিস হিসেবে। এ ছাড়াও, ইতালিয়ান তিরামিসু, টার্কিশ শাহাজাদি মালাই, এরাবিয়ান মাহালাবিয়া, বগুড়ার ক্ষীরসা, টার্কিশ মিল্ক কেকসহ অনেক রকম মিষ্টি আছে। সুগার ফ্রি লাড্ডুও করছেন তারা।
ছবি: কানিজ ফাতেমা