কনটেন্ট বানিয়ে মাসে লাখ টাকা আয় করেন পুরান ঢাকার ফুচকাওয়ালা সুলতান
শেয়ার করুন
ফলো করুন

নাম টিপু সুলতান। বর্তমান বয়স মাত্র একুশ বছর। সুলতানের জন্ম হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার করাব গ্রামে। ফুচকা ব্যবসার শুরুটা ২০২২ সালে। তবে তখনও কাজে ঠিক মনে বসেনি তাঁর। ফাঁকি দিতেন প্রায়ই। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি বন্ধুরা সবাই কাজের খোঁজে দেশ ছাড়তে শুরু করেন। সাত বন্ধুর প্রায় সবাই কোনো না কোনো কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেললে একা হয়ে যান তিনি। ভাবতে থাকেন, এবার নিজেও কিছু করে আয় করা দরকার। কাজের খোঁজে ঢাকা আসেন তিনি। সে সময় আর্থিক টানা-পোড়েনে দিন কাটছিল। পুরোদমে ব্যবসা শুরু করেন।

সুলতান ফুচকা বিক্রি করতে আবারও বেরিয়ে পড়েন ঢাকার রাস্তায়
সুলতান ফুচকা বিক্রি করতে আবারও বেরিয়ে পড়েন ঢাকার রাস্তায়
সুলতানের ইন্সটাগ্রাম রিলের স্ক্রিনশট

ব্যবসা শুরু হয় পুরান ঢাকার মকিম বাজারের এক ছোট্ট গলি থেকে। ফুচকা বিক্রি করতে আবারও বেরিয়ে পড়েন ঢাকার রাস্তায়। তবে সুলতান শুধু ফুচকাওয়ালা নন, তিনি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরও। তাঁর অদম্য মনোবল,পড়া ও জানার আগ্রহ আর সৃজনশীলতা তাঁর জীবনের গতিপথ বদলে দেয়।

বিজ্ঞাপন

ইন্সটাগ্রামের জগতের সঙ্গে পরিচিতি ছিল আগেই। ২০২৪ সালের একদিনে কৌতূহলের বশে ভিডিও আপলোড করেন সেখানে। বিশেষ কোনো উপলক্ষ্য ছিল না তাঁর। সারাদিন খেটে ক্লান্ত সুলতান রাত তিনটার সময় ভিডিওটি আপলোড করেই ঘুমিয়ে পড়েন। ভিডিও টির মূল বিষয়বস্তু ছিল ঢাকার একজন ফুচকাওয়ালা হিসেবে তাঁর জীবনের একটি দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে হতবাক সুলতান দেখেন, নেহাতই কৌতূহলের বশে করা ভিডিওটি পাঁচলাখ ভিউ পেয়েছে।

এত মানুষের আগ্রহে আরও উৎসাহ বেড়ে যায়। নিয়মিত অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মেও ভিডিও আপলোড করা শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর ইন্সটাগ্রামের ভেরিফাইড পেইজটিতে ২৬ হাজারেরও বেশি ফলোয়ার। ইউটিউবে 'হিউমার ইউথ সুলতান' নামের চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবারও নেহাত কম নয়।

বিজ্ঞাপন

যাঁদের সাথে তিনি কাজ করেছেন, তাঁরাই সুলতানের কাজের একাগ্রতায় মুগ্ধ হয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে কোলাবোরেশনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এখনো রোজ অনেকেই একসঙ্গে কাজ করার অনুরোধ জানান। তবে ফুচকার ব্যবসাই সুলতানের কাছে সবার আগে গুরুত্ব পায়। কারণ এটিই তাঁর মূল আয়ের উৎস। তাঁর দায়বদ্ধতার জায়গা। পরিচিতি পেয়ে, নিজের কাজকে ভুলে যেতে একেবারেই চান না এই ফুচকাওয়ালা।

খাবারের জনপ্রিয় পেইজ মাহিম মেইকসের সঙ্গে কাজ করেছেন সুলতান
খাবারের জনপ্রিয় পেইজ মাহিম মেইকসের সঙ্গে কাজ করেছেন সুলতান
প্রচুর ইভেন্টে অংশ নেন তিনি
প্রচুর ইভেন্টে অংশ নেন তিনি

তিনি  বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে একের পর এক ইভেন্টের আয়োজন করছেন। এর মধ্যে আছে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, ট্যাপট্যাপ সেন্ড, অপো মোবাইল, বিকাশ। এসব প্রতিষ্ঠানের ইভেন্ট সফলভাবে আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি কাজের মধ্যে সুলতান নতুন কিছু শিখেছেন এবং নতুন সম্পর্ক তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, রোজ নতুন করে কিছু শেখার আগ্রহই তাঁকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় প্রতিনিয়ত।

সুলতান যখন শিখতে শুরু করেন, তিনি শুধু ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিষয়গুলো শিখতে আগ্রহী হন ,তা কিন্তু নয়। শেখার লক্ষ্য ছিল একটিই; নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলা। ইংরেজি ভাষায় বরাবরই আগ্রহ ছিল তাঁর। কারণ জানতেন যে এটি ব্যবসা ও কন্টেন্ট তৈরির কাজে আসবে। জীবনের শুরুতে বেশিদূর পড়ার সুযোগ পাননি। তবে এই সীমাবদ্ধতা দমিয়ে রাখতে পারেনি তাঁকে। তিনি নিজের বড় ভাইদের কাছ থেকে শিখেছেন অনেক কিছু। তাঁদের কাছ থেকে যে জ্ঞান অর্জন করেছেন, তা আজ তাঁর জীবনে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। তাঁর বয়ানে,”জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক ছিলেন তাঁর ভাইয়েরা। তাঁদের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।"

শেখার লক্ষ্য ছিল একটিই; নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলা
শেখার লক্ষ্য ছিল একটিই; নিজেকে আরও দক্ষ করে তোলা
ফুচকা বিক্রি আর কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের দারুন কম্বিনেশনে কাজ করেন তিনি
ফুচকা বিক্রি আর কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের দারুন কম্বিনেশনে কাজ করেন তিনি
সুলতানের ভিডিওর স্ক্রিনশট

যদিও সুলতানের কোনো শিক্ষাগত ডিগ্রি নেই, তবে তাঁর শেখার ইচ্ছাই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই ধরনের শিক্ষার এক অসাধারণ গুণ হলো, এটি শুধু তার ব্যবসায় কাজে লাগেনি, বরং তাঁর কন্টেন্ট ক্রিয়েশনও এতে নতুন মাত্রা পেয়েছে।

জীবন নিয়ে যে পরিকল্পনা তাঁর আছে, সেগুলো তিনি দ্রুত বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেন।আয়ের হিসেবে  সুলতান চমকে দিয়েছেন সবাইকে। মাসিক গড়ে ১ লাখ টাকা আয় তাঁর। এই সংখ্যাও ছাড়িয়ে যায়। ফুচকার ব্যবসা তো আছেই।  তবে তাঁর আয়ের মূল উৎস হলো, ইভেন্ট আর কন্টেন্ট ক্রিয়েশন। এই কাজে তাঁর প্রতিভা তাকে আয়ের পথ দেখিয়েছে। সুলতান জানেন, তাঁর আয়ের পরিমাণ যত বাড়বে, ততই তিনি আরও বেশি মানুষের সাহায্য করতে পারবেন এবং মানুষ তাঁকে চিনবে।

মাসিক গড়ে ১ লাখ টাকা আয় তাঁর
মাসিক গড়ে ১ লাখ টাকা আয় তাঁর
সুলতানের ভিডিওর স্ক্রিনশট

সুলতানের বর্তমান ঠিকানা পুরান ঢাকার মকিম বাজার মকিম বাজার। তাঁর ব্যবসার অবস্থানও একই এলাকায়, নাজিরা বাজারের পাশের গলিতে। আগামসী লেনেও বসতেন আগে। তবে এখন আগের মতো বসা হয়ে ওঠে না। তিনি এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ইভেন্ট আয়োজন, এর পরিকল্পনা ও সেগুলো  বাস্তবায়নে। আজকের সুলতান শুধু পুরান ঢাকার ফুচকাওয়ালা নন, বরং তিনি হয়ে উঠেছেন এমন একজন,যিনি অনুপ্রেরণা যোগান। তিনি সবার জন্য প্রমাণ করেছেন যে, স্বপ্ন দেখতে হলে সর্বদা একটি উদ্দেশ্য প্রয়োজন। শিক্ষার সুযোগ পেলে তা জীবনের যেকোনো পর্যায় থেকেই শুরু করা যায়। একজন সাধারণ ব্যবসায়ী,যিনি শুরু করেছিলেন একটি ফুচকা বিক্রি করে,আজ তিনি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে নিজের পরিচিতি তৈরি করছেন। তার এই সফলতা প্রমাণ করে, প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।

ছবি: টিপু সুলতান

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ০৫: ৩৪
বিজ্ঞাপন