এই লেখাটি শুধুই চাপ্রেমীদের জন্য৷ অন্যরা মনে করবেন, এই গরমে আবার চা কেন! কিন্তু চায়ের নেশা যাঁদের আছে, তাঁদের ইফতারের পর এক কাপ চা তো চাই-ই। সারাদিনের ক্লান্তি অবসাদ দুর করতে এই চা যেন ইঞ্জিনের তেলের মত কাজ করে -শরীরে। পৃথিবীর জনপ্রিয় পানীয়গুলোর তালিকায় শীর্ষেই আছে চা। পানির পরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পান করা হয় এই জাদুকরী তরল। এমনিতে তো সকালে চা, বিকেলে চা, সন্ধ্যায় চা চলতেই থাকে। এদিকে ইফতারি আর সাহরির পরেও চা না হলে কেমন যেন শরীর ও মনে জুত লাগে না।
চা আমাদের জন্য প্রকৃতির এক আর্শীবাদ আসলে। এটি বিষাদ ভুলতে যেমন সঙ্গী হয় তেমনি আবার সুখের সময়কেও আরো উপভোগ্য করে তোলে এক কাপ চা। এটি কখনোই শুধু নিছক এক কাপ পানীয় নয়। এক কাপ চায়ে থাকে এক জীবনের হাজারো আবেগ, অনুভুতির গল্প। চা না থাকলে যেমন বন্ধুদের আড্ডা জমতো না, তেমনি চা না থাকলে পারিবারিক অনেক মধুর স্মৃতির জন্ম হতো না। এক কাপ গরম গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের প্রতিটি চুমুকের মাঝে থাকে এক সমুদ্র ভালোবাসা আর মায়া। এদিকে রান্নাটা শুরু হয় চা দিয়েই। মা-বাবা, মামা-চাচা, নানা-দাদা বা আগত অতিথিদের জন্য চা বানানোর মধ্যে দিয়েই রান্নাঘরে হাতেখড়ি হয় সকলেরই। ইফতারের পরেও সাধারণত ঘরের ছোট সদস্যরাই চা বানায়।
আমাদের পারিবারিক এক মায়ার বন্ধন তৈরিতে এই চায়ের ভুমিকা অনেক। এক কাপ চায়ে শুধু প্রেয়সীকেই নয়, আমরা আমাদের পরিবারকে পাই ও চাই।
আবার শুধু ঘরে কেন! পাড়ার রাস্তার মোড়ে চায়ের টঙে ভিড় জমে ইফতারের পরপর৷ চামচের টুংটাং শব্দে চাওয়ালা মামা নিপুণ হাতে ফরমায়েশ অনুযায়ী রং চা,,দুধ চা, মসলা চা বা বিভিন্ন রকমের আজব আজব চা বানিয়ে কাপ হাতে ধরিয়ে দেন। এসব চায়ের তালিকায় আছে তেঁতুল চা, কাঁচামরিচের চা, মালটা চা, পুদিনার চা, তন্দুরি চা সহ আরো অনেক রকমফের।
অনেকেরই ধারনা, চা পান করলে ঘুম কম হয়। তবে লন্ডনের সারে বিশ্ববিদ্যায়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে রাতে ঘুমানোর সময় কফি পান করা ব্যক্তিদের কিছুটা সমস্যা দেখা দিলেও যাঁরা চা পান করেন তাঁদের ঘুম তুলনামূলক প্রশান্তিদায়ক ও দীর্ঘ হয়।চা আমাদের অনেকের কাছে হয়তো সাধারণ পানীয়। কিন্তু যারা নিয়মিত চা পান করে অভ্যস্ত, তাঁদের জীবনে চা এক নেশার নাম। চা তাদের মনকে চাঙ্গা করে সতেজ রাখে।এমন কি এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা দিনে তিনকাপ চা পান করেন, তাঁদের ডিপ্রেশনের ঝুঁকি চা পান না করা ব্যক্তিদের তুলনায় ৩৭ শতাংশ কম থাকে।
চা পানীয় হিসেবে এমনিতে খুবই স্বাস্থ্যকর। চায়ের পুষ্টি উপাদান বিপাকে সাহায্য করে। শরীরের ইনসুলিনকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে রক্তের গ্লুকোজ দক্ষতার সঙ্গে সামলায়। চায়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় চা পান করলে স্নায়ু আরাম পায়। কিন্তু যখনই চায়ে দুধ মিশিতে লম্বা সময় ধরে ফুটানো হয়, তখন দুধের কেজিন প্রোটিন আর ক্যাটেচিন রিঅ্যাকশন করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের গুণ নষ্ট করে দেয়। চায়ের উপকারিতা পেতে হলে দুধ ছাড়া চাই খেতে হবে। চিনি ছাড়া আদা চা, লেবু চা এবং গ্রিনটিসহ বিভিন্ন হারবাল চা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
এগুলো আমাদের দেহের কোষের ক্ষয় রোধ করে, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। আর সর্বোচ্চ উপকার পেতে চিনি দুধ ছাড়া চায়ের অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।
তবে মাঝেমধ্যে আদা বা অন্যান্য মসলা দিয়ে বিলাসী দুধ চা বানিয়ে আয়েশ করে পান করলে এমন কোনো ক্ষতি হয় না। ইফতার তো করেছেন। এবার মনের মাধুরী মিশিয়ে যেভাবে ইচ্ছা চা বানাতে বানাতে ভাইরাল সেই গানের মতো গেয়ে উঠুন এক কাপ চা বানাই নিজের জন্য!
ছবি: লেখক