দুধের কাপড়
শেয়ার করুন
ফলো করুন
বিজ্ঞাপন

মিল্ক কটন হলো এক ধরনের কাপড় যা দুধে পাওয়া কেসিন পাউডার দিয়ে তৈরি করা হয়। এ ধরনের ফেব্রিককে মিল্ক ফাইবার বা কেসিন ফাইবারও বলা হয়। তুলার মতো টেক্সচার ও প্রসারতা দিতে কেসিন পাউডারের সঙ্গে নানা ধরনের উপাদান মেশানো হয়। বেশিরভাগ কেসিন ফাইবার অ্যাক্রিলোনাইট্রালের সঙ্গে মিশ্রিত হয়। এই একই উপাদান অ্যাক্রিলিক পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর মানে দুধের তুলা একেবারে জৈব ফাইবার নয়, এটি  সিনথেটিক বা আধা  সিনথেটিক।

আঙ্কে ডোমাস্কে ও দুধ দিয়ে তৈরি কাপড়
আঙ্কে ডোমাস্কে ও দুধ দিয়ে তৈরি কাপড়
ছবি: আঙ্কে ডোমাস্কের ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডল

কবে কোথায় কারা প্রথম দুধ থেকে সুতা তৈরির বিজ্ঞান আবিষ্কার করে, তা নিয়ে বেশ কিছুটা মতভেদ রয়েছে। কোথাও বলা হয়েছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানরা নাকি কাপড় তৈরির নতুন উৎস খুঁজছিল। এরপর তারাই নাকি দুধ থেকে কেসিন আলাদা করে এই ফাইবার বানায়। আবার কেউ কেউ বলেন, ইতালি ও আমেরিকাতেই নাকি ৩০ দশকে প্রথম কেসিন ফেব্রিক তৈরি করা হয়। ৩০ ও ৪০ দশকে মিল্ক কটন তৈরির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, মিলিটারি ইউনিফর্মে উলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা। যদিও সেই সময়ের মিল্ক কটনের মান সাধারণ উলের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ ছিল।

বিজ্ঞাপন

দুধ থেকে আসে বলে অনেকে একে অর্গানিক বা টেকসই ভাবতে পারে। ঐতিহ্যবাহী মিল্ক বা কেসিন ফাইবার কিন্তু মোটেও পরিবেশবান্ধব নয়। কারণ, এতে ফরমালডিহাইড ও অ্যাক্রিলোনাইট্রাল ব্যবহার করা হয়। এই উপাদানগুলো বিষাক্ত রাসায়নিক ও কার্সিনোজেন। অর্থাৎ এগুলো মানবদেহে ক্যানসার কোষ তৈরি করতে পারে। তবে এখন নাকি এই তন্তু তৈরির অনেক নতুন পদ্ধতি বের হয়েছে যা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই।

জার্মান অনুজীবজ্ঞিানী ও ফ্যাশন ডিজাইনার আঙ্কে ডোমাস্কে
জার্মান অনুজীবজ্ঞিানী ও ফ্যাশন ডিজাইনার আঙ্কে ডোমাস্কে
ছবি: আঙ্কে ডোমাস্কের ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডল

আঙ্কে ডোমাস্কে নামে একজন জার্মান অনুজীবজ্ঞিানী ও ফ্যাশন ডিজাইনার দাবি করেছেন যে শুধু খাঁটি কেসিন ফাইবার থেকে তৈরি দুধের তুলার একটি ফর্ম তৈরি করেছেন, যার মানে তিনি যে ফেব্রিক তৈরি করেন, তা সম্পূর্ণ জৈব বলে বিবেচিত হতে পারে। ডোমাস্কের কোম্পানির নাম কিউমিল্ক। আঙ্কে ডোমাস্কে একটি ইন্টারভিউতে বলেন, তাঁর পরিবারের একজন সদস্যের বিশেষ ধরনের ক্যানসার হওয়ার পর থেকে প্রায় সব ধরনের পোশাকে অ্যালার্জি হতে দেখা যায়। সেই আত্মীয়ের কথা চিন্তা করে ডোমাস্কে কেসিন ফেব্রিকের একটি সিনথেটিক-মুক্ত সংস্করণ তৈরি করার চেষ্টা করেন এবং সফল হন। তিনি কোনো রকমের বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার না করেই কেসিন ফেব্রিক তৈরির নিজস্ব পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তাঁর কোম্পানি কিউমিল্ক জার্মানির সব ডেইরি খামার থেকে নষ্ট দুধ সংগ্রহ করে মিল্ক ফেব্রিক উৎপাদন করছে। এই ‘জিরো ওয়েস্ট’ মিল্ক ফেব্রিক সম্পূর্ণরূপে জীবাণুবিয়োজ্য ও টেকসই। কিন্তু তারা ঠিক কোন পদ্ধতিতে ফরমালডিহাইড বা অ্যাক্রিলোনাইট্রাল ছাড়া এটি উৎপাদন করে তা এখনো প্রকাশ করেনি।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে, দুধের তুলা প্রাথমিকভাবে তুলা বা সিল্কের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। অনেক ব্র্যান্ড আছে যারা মিল্ক ফেব্রিক ব্যবহার করে নানা ধরনের ফ্যাশনেবল জামাকাপড় তৈরি করছে। এ ছাড়া হোম টেক্সটাইলস যেমন তোয়ালে, বিছানার চাদর, পর্দা ইত্যাদি তৈরিতে এই কাপড় এখন অনেক বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।

দুধ থেকে তন্তু তৈরি করেছেন আঙ্কে ডোমাস্কে
দুধ থেকে তন্তু তৈরি করেছেন আঙ্কে ডোমাস্কে
ছবি: আঙ্কে ডোমাস্কের ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডল

২০০৪ সালে সম্পূর্ণরূপে অর্গানিক মিল্ক ফাইবার শিল্পকে ওয়েকো-টেক স্ট্যান্ডার্ড ১০০ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। অর্থাৎ এই ফাইবারকে ১০০ শতাংশ পরিবেশগতভাবে টেকসই বলে মনে করা হয়। এটিও উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, বিশুদ্ধভাবে অর্গানিক মিল্ক ফাইবারের বৃহত্তম উৎপাদকেরা এখনো তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রকাশ করতে পারেনি। তাই কিসের ভিত্তিতে এই সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে, ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার বা ইইউর জৈব মান সংস্থা কেউই দুধের ফাইবারকে এমন কোনো টেক্সটাইল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, যা জৈব অবস্থা অর্জন করতে পারে। বলা বাহুল্য, কেসিন ফাইবার এবং অ্যাক্রিলোনাইট্রাল মিশিয়ে তৈরি আধা সিনথেটিক কাপড়কে জৈব বা পরিবেশগতভাবে টেকসই বলে প্রত্যয়িত করা যায় না।

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২২, ০৩: ৩০
বিজ্ঞাপন