
বড়দিনে স্ট্রেঞ্জার্স থিংস ভলিউম দুই ফিরেছে তার চিরচেনা আশির দশকের শীতল নস্টালজিয়া নিয়ে। আজ ২৫ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছে স্ট্রেঞ্জার থিংস–এর ভলিউম টু-এর শেষ চারটি পর্ব। বড়দিনের আমেজে শেষ ক্লাইম্যাক্স দেখার অধীর অপেক্ষায় রয়েছে সারা বিশ্বের দর্শক। গত প্রায় এক দশকে শিশুশিল্পী থেকে তারা হয়ে উঠেছেন তরুণ, আর সেই সঙ্গে বদলেছে তাদের লুক ও স্টাইল। সিরিজের বিভিন্ন সময়ে দেখা প্রতিটি পোশাকই পেয়েছে আলাদা জনপ্রিয়তা। ফ্যাশনিস্তা থেকে জেন জি—সবাই মেতে উঠেছেন স্ট্রেঞ্জার থিংস–এর এই আইকনিক স্টাইলগুলোতে, যেখানে প্রতিটি লুকই গল্প বলে, সময়কে তুলে ধরে আর চরিত্রের ভেতরের পরিবর্তনকে প্রকাশ করে।

স্ট্রেঞ্জার থিংস-এর ফ্যাশন মূলত ১৯৮০–এর দশকের স্টাইলকে দারুণভাবে তুলে ধরে। এখানে এইটিজের ফ্যাশনকে অ্যানিমেটেড কার্টুনের মতো অতিরঞ্জিত না করে, বাস্তব জীবনের পোশাক, কাটিং ও সাবকালচারের বৈচিত্র্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাই-ওয়েস্ট ডেনিম, উজ্জ্বল রঙের প্রিন্ট, অ্যাথলেটিক পোশাক থেকে শুরু করে ‘প্রেপি কুল’ বা ‘হেভি মেটাল’ বিভিন্ন চরিত্রে তা ফুটে উঠেছে। কস্টিউম ডিজাইনাররা লেভাইস, মেম্বার্স অনলি-এর মতো সেই সময়ের আসল ব্র্যান্ড ব্যবহার করেছেন। এভাবে সেই সময়ের ফ্যাশনের ট্রেন্ডকে নিখুঁতভাবে ধরেছেন নির্মাতারা।
পুরো সিরিজ জুড়ে ফ্যাশনের নানা এলিমেন্ট আলাদাভাবে আকর্ষণ করেছে ফ্যাশনপ্রেমীদের দৃষ্টি। শুধু রোমাঞ্চকর গল্পই নয়, আশির দশকের কিশোরদের ভাবনা, জীবনযাপন আর পপ কালচারের নানা উপাদানও দারুণভাবে উঠে এসেছে স্ট্রেঞ্জার থিংস জুড়ে।
ডেনিম
স্ট্রেঞ্জার থিংস-এর সবচেয়ে শক্তিশালী ফ্যাশন এলিমেন্ট বলা যায় ডেনিমকে। হাই-ওয়েস্ট জিন্স, ডেনিম জ্যাকেট, এমনকি ডাবল-ডেনিম লুক সবই বারবার দেখা যায়। বিলি হারগ্রোভের পরা ডাবল-ডেনিম আউটফিট হয়ে উঠেছে আইকনিক। এই সময়ের পোশাকের মতোই ফিট ছিল একটু ঢিলেঢালা ও ভলিউমাস।


উজ্জ্বল রঙ ও জ্যামিতিক প্রিন্ট
বিশেষ করে সিজন ৩-এ স্টারকোর্ট মল খোলার পর ফ্যাশনে আসে রঙিন উচ্ছ্বাস। ইলেভেন, মিসেস হুইলারদের পোশাকে দেখা যায় নিয়ন শেড, উজ্জ্বল রং ও ফাঙ্কি জ্যামিতিক প্রিন্ট, যা আশির দশকের ফ্যাশনের চূড়ান্ত সময়টাকে তুলে ধরে।
অ্যাথলেটিক ও ক্যাজুয়াল পোশাক
ছোট চরিত্রগুলোর পোশাকে আরাম ও চলাফেরার সুবিধাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ম্যাক্স মেফিল্ডের ট্র্যাক জ্যাকেট, রিঙ্গার টি-শার্ট, স্ট্রাইপড পোলো আর ক্লাসিক স্নিকার্স (নাইকি, পুমা) সবই আশির দশকের কিশোর জীবনের প্রতিচ্ছবি।

আউটারওয়্যার বা জ্যাকেট
স্ট্রেঞ্জার থিংস-এ জ্যাকেট শুধু পোশাক নয়, চরিত্রের পরিচয়। স্টিভ হ্যারিংটনের ‘মেম্বার্স অনলি’ জ্যাকেট, লুকাসের কর্ডুরয় শার্প-লাইনড জ্যাকেট, আর হপারের ভারী আর কোজি কোট—সবগুলোই চরিত্রকে আলাদা করে চেনায়।
সাবকালচার স্টাইল
সিরিজটি খুব যত্ন নিয়ে আশির দশকের বিভিন্ন সাবকালচার তুলে ধরেছে। এডি মানসন পুরোপুরি হেভি মেটাল সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এখানে দেখা যায় তার ব্যান্ড প্যাচ লাগানো ছেঁড়া ডেনিম ভেস্ট (আয়রন মেইডেন , মেটালিকা), লেদার জ্যাকেট আর আংটিতে ভরা হাত। ম্যাক্স মেফিল্ড নিয়ে আসে ওয়েস্ট কোস্ট স্কেটার ভাইব রেগুলার ওয়্যারের ট্র্যাক জ্যাকেট। সে টমবয়িশ কিন্তু কুল স্টাইল তুলে ধরেছে।

চুল ও অনুষঙ্গ
ভলিউমাস, স্টাইল করা চুল ৮০’s ফ্যাশনের বড় অংশ। ন্যান্সি হুইলার ও বিলি হারগ্রোভের চুল তার সেরা উদাহরণ। বড় সানগ্লাস (স্টিভ), রঙিন স্ক্রাঞ্চি, সাসপেন্ডার—এসব অ্যাকসেসরিজ লুককে আরও সময়সচেতন করে তোলে।
থিম্যাটিক কস্টিউম
স্ট্রেঞ্জার থিংস-এ পোশাক গল্প বলে। ইলেভেনের স্টাইল ধীরে ধীরে বদলায় অন্যের দেওয়া সাধারণ ড্রেস থেকে নিজের পছন্দের রঙিন পোশাকে রূপ নেয়, যা তার আত্মপরিচয়ের বিকাশকে দেখায়। উইল বায়ার্সের আগের সিজনগুলোর মলিন পুরোনো পোশাক তার পরিবারের আর্থিক সংকট ও নীরব স্বভাবের প্রতিফলন।


সব মিলিয়ে, স্ট্রেঞ্জার থিংস–এর ফ্যাশন শুধু নস্টালজিয়া নয়, এটি ১৯৮০-এর দশকের সমাজ, তরুণ সংস্কৃতি এবং চরিত্রগুলোর মানসিক যাত্রার এক দারুণ প্রামাণ্য চিত্র। ২০২৫ সালে এসে এই ফ্যাশন এখন জেন জি থেকে আলফা—সবাই মধ্যে জনপ্রিয়। ফ্যাশন মানেই পুরানো চিন্তাধারার পুনরাবৃত্তি, আর তাই নতুন দশকের ফ্যাশনিস্তারা এটিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে উপভোগ করছেন। এই কারণেই স্ট্রেঞ্জার থিংস দর্শকদের টানে ধরে রাখছে। ২৫ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটায় নেটফ্লিক্সে প্রচারিত হওয়ার কথা শেষ চারটি পর্ব। সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা।
ছবি: ইন্সটাগ্রাম ও এআই