নারী সহায়তা সংস্থা ‘শান্তিবাড়ি’ নারীদের জন্য আয়োজন করেছে ‘ভালো থাকার উৎসব’। ২৭ ও ২৮ জুলাই সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব।
নারীর দক্ষতা ও সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করার চেষ্টা থেকেই শান্তিবাড়ি ছোট ছোট মেলা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে। এই প্রথম তারা বড় পরিসরে এ উৎসবের আয়োজন করে। ‘ভালো থাকার উৎসব’-এ অংশগ্রহণ করেন ২৭ জন নারী উদ্যোক্তা। সেই সঙ্গে ৪১ জন চিত্রশিল্পী ও ১১ জন আলোকচিত্রশিল্পীর শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়।
শান্তিবাড়ির সহপ্রতিষ্ঠাতা মুনমুন শারমিন শামস হাল ফ্যাশনকে জানান, বড় পরিসরে এটাই তাঁদের প্রথম আয়োজন। ‘ভালো থাকার উৎসব’ নামটি ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হলো, ভালো থাকাটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ, সেই বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া।
উৎসবের শেষ দিন, অর্থাৎ ২৮ জুলাই বেলা সাড়ে তিনটার পর থেকে উৎসবে উপস্থিত ছিলেন এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। একে একে সব কটি স্টল পরিদর্শন করেন তিনি। পণ্যের গুণগত মান নিয়ে বাঁধন বলেন, ‘এখানকার সব উদ্যোক্তা দেশি উপকরণ দিয়ে হাতের কাজ করেন। তাই সব কটি পণ্য খুব আলাদা ধরনের হয়।’ তিনি যে শাড়ি ও গয়না পরে এসেছিলেন, সেগুলো এখানকার উদ্যোক্তার কাছ থেকেই নেওয়া।
শান্তিবাড়ির নিয়মিত আয়োজনগুলোয় যেমন মেয়েরা গিয়ে মন খুলে আড্ডা দিয়ে নেচেগেয়ে আনন্দ করে পণ্য বিক্রি করেন, এ উৎসবও তার ব্যতিক্রম ছিল না। নারী উদ্যোক্তারা এখানে এসেছেন তাঁদের পণ্যের প্রচার-প্রসারের জন্য। শুধুই যে প্রচার হয়েছে, তা কিন্তু নয়; দুই দিনে অসংখ্য মানুষের সমাগমে, আড্ডায়, নাচে, গানে উদ্যোক্তাদের পণ্য বিকিকিনিও হয়েছে বেশ।
বরাবরের মতো শান্তিবাড়ির আয়োজনে এবারও দেখা গিয়েছে আর্টোপলিস, রংদারু, টুকরি, কালিন্দী, এথনিক হেরিটেজ, দয়ীতার পসরা। এ ছাড়া অংশগ্রহণ করেছিল কারখানা, ক তে কাপড়, ময়ূরপঙ্খি, মিনডালা, লীলাবালি, পোশাক, আর্নস্ট, সিন্ধু। হাতে তৈরি চমৎকার সব পণ্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন উদ্যোক্তারা।
উল্লেখ্য, শুধু পণ্য বিকিকিনি নয়, পাশাপাশি ছিল মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও আইনি পরামর্শের বুথ। দুই দিনে প্রচুর মানুষ এসেছেন শান্তিবাড়ির এসব সেবা নিতে এবং শান্তিবাড়ি সম্পর্কে জানতে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে জানতে নারীদের পাশাপাশি পুরুষেরাও সমানভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান উৎসবে অংশগ্রহণকারী সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলর ও থেরাপিস্ট রাজিয়া সুলতানা রিমা।
জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বিকেল পাঁচটার সমাপনী আয়োজনে ‘নারীর জীবন ও লড়াই’–এর গল্প সেশনে নিজের জীবনের গল্প শোনান অভিনয়শিল্পী আজমেরী হক বাঁধন। নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন এবং দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন মনোরোগ চিকিৎসক হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
‘মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে নারী ভালো থাকবে কীভাবে’—শান্তিবাড়ির এই প্যানেল আলোচনা করেন ডা. সায়েমা হক বিদিশা, ব্যারিস্টার মিতি সানজানা, ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা প্রমুখ। নির্ঝর চৌধুরীর গান ও জান্নাতুল ফেরদৌসী লিজার আবৃত্তি মুগ্ধ করে দর্শকদের।
ছবি: হাল ফ্যাশন