পুরো ফ্যাশন দুনিয়ার মানচিত্র বদলে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক। এই অ্যাপ ফ্যাশনশিল্প সম্পূর্ণ নতুন ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ করে দিয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ ফ্যাশন ব্র্যান্ড সেলিন টিকটক সেলিব্রিটি নয়িন ইউবাংকসকে তাদের ‘নতুন মুখ’ হিসেবে বেছে নেয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিলান ফ্যাশন উইকে প্রাদার শোয়ের ফ্রন্ট রো-তে বসার নিমন্ত্রণ পান আরেক টিকটক স্টার শারলি ডি’আমেলিও, যার বর্তমান অনুসারীর সংখ্যা কম করে হলেও ১৩৭ মিলিয়ন।
২০২১ সালের বিশ্বের অন্যতম বড় ফ্যাশন ইভেন্ট মেট গালাতে ডেব্যু হয় এডিসন রে ও শারলি ডি’আমেলিওর বোন ডিক্সি ডি’আমেলিওর। বলা যায়, এই ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে টিকটক তারকারা ফ্যাশন জগতে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন।
ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক ব্র্যান্ডগুলো টিকটককে আপন করে নিয়েছে। ফেন্ডি, নাইকি, গুচি, বুহু, ক্রকস, সেলিন, এসোস, প্রিটিলিটিলথিং—এই ব্র্যান্ডগুলোর রয়েছে অফিসিয়াল টিকটক অ্যাকাউন্ট। প্রায়ই তারা এই অ্যাপে নানা রকম ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। যেমন কিছুদিন আগে গুচি করেছিল #গুচিমডেলচ্যালেঞ্জ, যা পেয়েছিল ২১০ মিলিয়নের মতো ভিউ। এরপর জেডব্লিউ আন্ডারসন হ্যারি স্টাইলের পরা তাদের ব্র্যান্ডের কালার ব্লকিং প্যাচওয়ার্ক কার্ডিগান কিভাবে ক্রোশেটিং করা যায়, তার একটা টিউটোরিয়াল পোস্ট করা হয় টিকটকে। পোস্টটি খুব অল্প সময়ে ভাইরাল হয়। এদিকে প্রাদা, লুই ভিতোঁ, সেইন্ট লরেন্টের মতো নামকরা ব্র্যান্ডগুলো ফ্যাশন উইক এবং রিসোর্ট শো টিকটক অ্যাপে লাইভ স্ট্রিমিং শুরু করেছে। টিকটক কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব লাইভ স্ট্রিমিং থেকে ভিউ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়।
ডিজাইনারদের নতুন কাজ প্রকাশের জায়গা এই অ্যাপ। টিকটকের ক্রিয়েটর কমিউনিটির ডিরেক্টর কুডজি চিকুম্বু বলেন, ফ্যাশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এর মাধ্যমে নিজেদের ব্যক্তিত্ব ও সৃজনশীলতা প্রকাশ করছেন। সাইমন পোর্টে জ্যাকেমাস, বালমেইনের অলিভিয়ের রুস্টিংয়ের মতো ডিজাইনাররা টিকটকে আছেন। তিনি বলেন, রুস্টিং নিজের পোশাক দেখানোর পাশাপাশি নতুন স্কেচ, টিমের সঙ্গে মিলে নতুন কালেকশন তৈরি, ঘরে বসে করা তাঁর কাজকর্ম—সবকিছুই শেয়ার করেন। এদিকে জ্যাকেমাস এই অ্যাপ সৃজনশীলভাবে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের টিকটক ভিডিও তৈরি করেন, যা তাঁর ব্র্যান্ডের নান্দনিকতার সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়।
টিকটক অ্যাপকে এখন মডেল সন্ধানালয় বললে খুব একটা ভুল হবে না। আইএমজি মডেলস বিশ্বের সবচেয়ে বড় মডেলিং এজেন্সি, নতুন মুখের সন্ধানে এই অ্যাপে তাদের খোঁজ বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে উইজডম কায়ে এবং কেনেডি খারডিন নামের টিকটক স্টার এই মডেলিং এজেন্সিতে নাম লিখিয়েছেন। আইজিএমের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেনি রোজ বলেন, নেক্সট জেনারেশন আইজিএম স্টার আবিষ্কারের জন্য টিকটক দুর্দান্ত প্ল্যাটফর্ম। এখানের বেশির ভাগ কনটেন্ট আনএডিটেড ও আনফিল্টার থাকে। এর ভিডিও বেজড ফরম্যাট থেকে কারও ব্যক্তিত্ব, তাঁরা অন্যের সঙ্গে কিভাবে ইন্টার্যাক্ট করেন, তাঁদের আগ্রহের বিষয় সম্পর্কে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে অনেক কিছুই জানা যায়।
জেনি রোজ আরও বলেন, ‘টিকটকের জন্য মডেলদের আগের তুলনায় আরও সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। এই অ্যাপের মাধ্যমে ভ্রমণ বা পোর্টফোলিও বা টেস্ট শুটে টাকা খরচ করা ছাড়াই নতুন মডেলদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি। টিকটকের সাহায্যে আমরা নিজের ঘরে বসে স্বাচ্ছন্দ্যে বিশ্বের প্রতিটি কোণ সন্ধান করতে পারছি।’