
ফ্যাশন এখন শুধু স্টাইল নয়, প্রযুক্তির ছোঁয়াতেও বদলে যাচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন লুক। চশমা আর গ্যাজেটের মিশেলে তৈরি হয়েছে এক নতুন ট্রেন্ড রে–ব্যান সানগ্লাস। দেখতে যেমন ক্ল্যাসিক, তেমনি ভেতরে লুকিয়ে আছে স্মার্ট ফিচারের জগৎ। ছবি তোলা, গান শোনা কিংবা রিয়েল টাইম কানেকশন—সবই এখন সম্ভব একটি স্টাইলিশ ফ্রেমের মাধ্যমে।

প্রশ্ন হলো এই গ্লাস কি শুধু ফ্যাশনের অনুষঙ্গ, নাকি সত্যিই উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো কিছু? ২০২৫-এর সবচেয়ে আলোচিত ফ্যাশন-টেক অনুষঙ্গ আসলে কতটা কার্যকর, সেটা জেনে নেওয়া যেতে পারে।

স্মার্ট গ্লাসকে দীর্ঘদিন ধরেই ওয়্যারেবল প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে এত দিন এগুলোর বড় সীমাবদ্ধতা ছিল স্টাইলের অনুপস্থিতি। সেই জায়গায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে রে–ব্যান সানগ্লাস, যেখানে একসঙ্গে মিলেছে প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটা ও আইকনিক আইওয়্যার ব্র্যান্ড রে–ব্যান।
এই গ্লাসে আছে ফ্যাশন ও ফাংশনালিটির দারুণ সমন্বয়—হ্যান্ডস-ফ্রি ভিডিও রেকর্ডিং, ইন-বিল্ট স্পিকার, এআই সহায়তা এবং অবশ্যই সেই ক্ল্যাসিক রে–ব্যান দামও নেহায়ত কম নয়। এ জন্যই প্রশ্ন উঠছে, এই রে–ব্যান–মেটা গ্লাস কি আসলেই এত দামের যোগ্য?
রে–ব্যান–মেটা গ্লাস সংগ্রহটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন এটি সহজেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিশে যায়। আগের স্মার্ট গ্লাসগুলোর মতো ভারী বা অতিরিক্ত ভবিষ্যৎকামী না হয়ে, এই ফ্রেমগুলো ধরে রেখেছে রে–ব্যানের পরিচিত স্টাইল, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সূক্ষ্ম স্মার্ট ফিচার।

যুক্তরাজ্যে রে–ব্যান–মেটা গ্লাসের মূল মডেলের দাম ২৯৯ পাউন্ড থেকে শুরু, তবে পোলারাইজড বা পাওয়ার লেন্স নিলে খরচ আরও বাড়ে। তুলনামূলকভাবে সাধারণ রে–ব্যান চশমার দাম ১৫০ থেকে ২০০ ইউরোর মধ্যে, অর্থাৎ বাড়তি দামটা মূলত প্রযুক্তিগত ফিচারের জন্যই।
এখন প্রশ্ন হলো এই অতিরিক্ত ফিচারগুলো কি সত্যিই রে–ব্যানের ঐতিহ্যবাহী চশমার অতি উচ্চ দাম কি যৌক্তিক?
স্টাইল নিঃসন্দেহে বড় একটি দিক, কিন্তু এর আসল আকর্ষণ লুকিয়ে আছে প্রযুক্তির ভেতরে। রে–ব্যান-মেটা গ্লাস এসেছে নানা আধুনিক ফিচার নিয়ে।
ক্যামেরা কোয়ালিটি: ফ্রেমের পাশে থাকা ১২ মেগাপিক্সেলের গোপন ক্যামেরা দিয়ে আপনি সহজেই হ্যান্ডস-ফ্রি ছবি তুলতে বা ১০৮০ পিক্সেল ভিডিও রেকর্ড করতে পারবেন। আকস্মিক মুহূর্ত বা সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য পয়েন্ট অব ভিউ ক্লিপ ধারণে এটি একদম পারফেক্ট।
অডিও ও কল পারফরম্যান্স: গ্লাসের ডাঁটি বা টেম্পলে বিল্ট–ইন ওপেন ইয়ার স্পিকার থাকায় আপনি হেডফোন ছাড়া গান শুনতে বা কল রিসিভ করতে পারবেন। বেশির ভাগ পরিবেশে সাউন্ড পরিষ্কার থাকে, যদিও খুব নীরব স্থানে কিছুটা সাউন্ড লিক হতে পারে।

ভয়েস কন্ট্রোল ও এআই ইন্টিগ্রেশন: মেটা এআই ও মাইক্রোফোন অ্যারের মাধ্যমে ভয়েস কমান্ডে ফাংশন নিয়ন্ত্রণ, প্রশ্ন করা, এমনকি মেসেজ পাঠানোও সম্ভব, একদম হ্যান্ডস-ফ্রি অভিজ্ঞতা।
লাইভস্ট্রিমিং ও সোশ্যাল শেয়ারিং: কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচার হলো সরাসরি ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে লাইভস্ট্রিম করার সুবিধা। মেটা ভিউ অ্যাপ ব্যবহার করে কনটেন্ট শেয়ার করা হয় একদম দ্রুত ও সহজে।
প্রতিদিনের ব্যাবহারের জন্য রে ব্যান কতটা স্বাচ্ছন্দ্যের
যদিও চশমার ডাঁটিতে চিপ লুকানো আছে, তবুও এগুলো তুলনামূলকভাবে হালকা রাখা হয়েছে। সাধারণ রে–ব্যানের চশমার চেয়ে একটু ভারী হলেও ওজন পুরো ফ্রেমে সমানভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ মানুষের জন্য এগুলো কয়েক ঘণ্টা পরে থাকলেও অস্বস্তি লাগবে না। অবশ্য আপনি ভারী চশমার প্রতি সংবেদনশীল হলে হালকা পার্থক্য অনুভব করতে পারেন।

সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় প্রাইভেসি নিয়ে। বিল্ট–ইন ক্যামেরাযুক্ত চশমা পরলে চারপাশের মানুষদের অস্বস্তি হতে পারে। যদিও ভিডিও রেকর্ড করার সময় একটি এলইডি লাইট জ্বলে ওঠে, সবাই তা লক্ষ করবে না বা প্রশংসা করবে না। ইনফ্লুয়েন্সার বা নতুন প্রযুক্তি গ্রহণকারীদের জন্য এটি হয়তো আকর্ষণীয় লাগতে পারে। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য পাবলিক জায়গায় ক্যামেরাযুক্ত চশমা পরার সামাজিক অস্বস্তি লাগার মতো বিষয়।
রে–ব্যান চশমা মূলত এই তিন ধরনের মানুষের জন্য উপযুক্ত—
• কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও ইনফ্লুয়েন্সার: ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকের জন্য লাইভস্ট্রিমিং গেম-চেঞ্জার।
• নতুন প্রযুক্তিতে আগ্রহীরা: যাঁরা নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য এই রোদচশমা উপযুক্ত। কারণ, কেবল স্টাইলিশ নয়, ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাও অন্য রকম।
• স্টাইল সচেতন প্রফেশনাল: এমন প্রযুক্তি ফ্যাশনের আবেদনকে কোনোভাবেই কমায় না।
অবশ্য দৈনন্দিন ব্যবহার ও ভালো অডিওর হলে এই চশমার আরও বিকল্প বাজারে আছে।
রে–ব্যান চশমার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর ফ্লেক্সিবিলিটি। রে–ব্যান এখন প্রেসক্রিপশন লেন্স আকারেও পাওয়া যায়। তাই এটি দৈনন্দিন চশমার বিকল্পও হতে পারে। পাশাপাশি আউটডোর ব্যবহারের জন্য পোলারাইজড লেন্সও পাওয়া যায়। ফলে এই চশমা স্টাইলিশ হওয়ার পাশাপাশি ব্যবহারিকও বটে।
সূত্র: এলডিএন ফ্যাশন