ধরো, তুমি একটা জমকালো অনুষ্ঠানে ঢুকলে আর মুহূর্তেই কয়েকজনের চোখ তোমার দিকে ঘুরে গেল। বলতে পারবে কেন এমন হয়?
পারলে না?
আসলে তুমি যে পোশাকটি পরেছ, সেটা কেবল একটা পোশাক নয়, এর মধ্য দিয়ে তুমি একটা ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছ। আর সেই অবয়বকে পূর্ণতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে রং।
ফ্যাশনে রঙের ব্যবহার শুধু ভালো লাগা, ম্যাচ করা বা খাপ খাওয়ানোর বিষয় নয়; বরং এটা একটা কৌশল, একধরনের মনস্তাত্ত্বিক খেলা। আর এই খেলাটা তুমি ঠিকঠাক খেলতে পারলে রং দিয়ে নিজের স্টাইলকে করে ফেলতে পারবে সবার চেয়ে আলাদা। তোমার ব্যক্তিত্বের একটা অনিন্দ্যসুন্দর ইমেজও তৈরি করে ফেলতে পারবে; যেটা সবার চোখে পড়বে।
এ তো জানা কথাই যে কালো পরলে মানুষকে আত্মবিশ্বাসী আর শক্তিশালী লাগে; তাই বেশির ভাগ পুরুষই কালো রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করেন। লাল রং আগ্রাসনের প্রতীক, অপর দিকে নীল হলো বুদ্ধিমত্তার। এসব ছোট ছোট বিষয় তোমার পোশাককে কেবল ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবেই গড়ে তোলে না, বরং একধরনের শক্তিশালী মেসেজও দেয়।
রঙের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়টি আসে, তা হলো কোন রং কী প্রকাশ করে। কালো মানে শক্তি, আধিপত্য আর রহস্য যারা সিম্পল অথচ প্রভাবশালী লুক চায়, তাদের জন্য পারফেক্ট চয়েস। সাদা পরিচ্ছন্নতা, মিনিমালিজম আর নতুনত্বের প্রতীক। নেভি ব্লু আত্মবিশ্বাস আর নেতৃত্বের প্রতীক, যা অফিস বা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের জন্য একেবারে পারফেক্ট।
লাল উপলক্ষভেদে শক্তি আর সেনশুয়ালিটির ভাষা বহন করে; ফলে ডেট কিংবা স্পেশাল ইভেন্টে লালের অতএব ছোঁয়া চাই-ই চাই। সবুজ স্থিতিশীলতা আর ভারসাম্যের রং আর বারগান্ডি হচ্ছে এমন একটা রং, যা ম্যাচিউরিটি আর বিলাসিতার কথা বলে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে কোন রং তোমার ব্যক্তিত্ব অনুসারে তোমার সিগনেচার। একজন ফ্যাশনিস্তা জানেন, নির্দিষ্ট কিছু রঙের পোশাক দীর্ঘদিন পরলে, সেটা ধীরে ধীরে তাঁর পরিচয়ের অংশ হয়ে যায়। বেশ সিরিয়াস অথচ আধুনিক লুক চাইলে কালো, নেভি ব্লু আর ধূসর বেছে নিতে পারো। তবে এগুলো কিন্তু তোমার লুকে বিষাদের ভাবও এনে দিতে পারে।
আবার তুমি সৃজনশীল ও খানিকটা অন্য রকম হতে চাও? তাহলে বেগুনি, ব্রাউন কিংবা অলিভ গ্রিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারো। আত্মবিশ্বাসী আর ক্যারিশমাটিক ইমেজ চাইলে লাল, বারগান্ডি বা গাঢ় কমলা অবশ্যই তোমার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা উচিত।
আবার যদি এমন হয়, তুমি চাইছ খুবই মনোরম দেখাক তোমাকে, সে ক্ষেত্রে ওভার-দ্য-টপ নয়, বরং প্যাস্টেল ব্লু, অফ-হোয়াইট কিংবা ওয়ার্ম আর্থ টোনস তোমার জন্য হবে দারুণ মানানসই।
তবে জানো, কেবল রং নির্বাচন করাই যথেষ্ট নয়, বরং কোন স্টাইলে পোশাকটি পরবে, সেটাও কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ধরো, মোনোক্রোম লুক, যেখানে একই রঙের বিভিন্ন শেড ব্যবহার করা হয়, সেটা মার্জিত ও স্ট্রাকচার্ড ভাব এনে দেয়।
আবার গাঢ় ও হালকা রঙের কনট্রাস্ট, হতে পারে কালো সুটের সঙ্গে সাদা শার্ট, ক্ল্যাসিক; তবে প্রভাবশালী স্টাইলের দিকে ইশারা করে। আবার এই ক্ল্যাসিক লুকে তোমার রুচিরও প্রশংসা পেতে পারো! যারা শান্ত অথচ বেশ গোছানো লুক চায়, তারা লো-কনট্রাস্ট টোনস, যেমন নিউট্রাল বা আর্থ টোনস বেছে নিতে পারে।
চোখ বন্ধ করে ট্রেন্ড অনুসরণ করে গেলে তা ফ্যাশন হয় না। তুমি যা পরো, যেটা দিয়ে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে পারো, সেটাই হয়ে ওঠে তোমার ফ্যাশন, তোমার স্টাইলও। ফ্যাশনে রঙের খেলা বেশ মজার। ট্রেন্ডেও। তবে সঠিক রংকে সঙ্গী করতে পারলে, তোমাকে একজন প্রভাবশালী নেতা থেকে রোমান্টিক প্রেমিক, সবই বানিয়ে দিতে পারে!
আচ্ছা, লেখাটা পড়তে পড়তে কি ঠিক করলে, আজ তুমি কোন রং পরবে?
লেখক: দেশের এই সময়ের শীর্ষ সারির মডেল
ছবি: পেকেজলসডটকম