ভারতীয় অভিনেতা রাজকুমার রাওয়ের বিয়েতে তাঁর স্ত্রী যে ওড়না পরেছিলেন, সেখানেই ফুটে উঠেছিল সোনালি সুতায় এমব্রয়ডারি করে লেখা, ‘আমার পরাণ ভরা ভালোবাসা আমি তোমায় সমর্পণ করিলাম’। তাঁদের বিয়ের ছবিগুলো ভাইরাল হওয়ার পর ফ্যাশন জগতে আরেকটি ট্রেন্ড যোগ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার চরখালী গ্রামের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস উৎসাহ পান বিয়েতে এমন কাস্টমাইজ ওড়না তৈরির।
জান্নাতুল ফেরদৌসের বেড়ে ওঠা ঢাকার মিরপুরে। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন তিনি। করোনা–পরবর্তীকালে অনলাইনে নেহাল’স নামের পেজ দিয়ে ছোট একটি ব্যবসা শুরু করেন এই উদ্যোক্তা। এরপর পণ্যের মান ও দেশীয় ব্যবসায়িক নীতি ভালো না লাগার কারণে এমন পণ্য নিয়ে কাজ করার চিন্তা করেন, যা অন্য কেউ করছে না। তখনই রাজকুমার রাওয়ের বিয়েতে তাঁর স্ত্রীর ওড়নাটা চোখে পড়ে। সেটা বেশ পছন্দও হয় জান্নাতুল ফেরদৌসের। তাঁর মতে, ‘ভাইরাল সেই ওড়নাটা আমাদের দেশের মেয়েরা খুব পছন্দ করেছে। এটা বুঝে এ ধরনের সৃজনশীল ওড়না তৈরির পদক্ষেপ নিই, যা দেশেই তৈরি হবে।’
ওড়না তৈরির উদ্যোগে প্রথম থেকেই জান্নাতুল ফেরদৌস তাঁর এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সাহায্য নেন। প্রথমে ২৭টি ওড়না দিয়ে নতুন এই উদ্যোগ শুরু হয় তাঁর। জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তাঁর তৈরি ওড়নাগুলোর বিশেষত্ব হলো, এগুলো সুন্দর নকশার পাশাপাশি ব্যক্তির মনের ভাব লেখার মাধ্যমে তুলে ধরা যায়; যা এ সময়ের নতুন বউদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।
কোনো ওড়নার বর্ডার লাইনে এমব্রয়ডারিতে ফুটে উঠেছে প্রিয়তমকে জানানো, ‘আমি বারবার হাজারবার তোমাকে চাই’ গানের লাইনটি। কোনো ওড়নায় রবীন্দ্রনাথের কথা ‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবো না’। আবার একজন লিখিয়ে নিয়েছেন হিন্দু বিয়ের মন্ত্র ‘যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব’। মূলকথা হলো কাস্টমাইজ যাবে বিয়ের এই ওড়না।
নিজের কাজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে গিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমার পরিবার কাজ করার অনুপ্রেরণা দিয়েছে এবং এখনো সঙ্গে আছে। আমার ভাই আমার কাজের সিংহভাগ দেখাশোনা করে। কিছু ক্ষেত্রে আব্বু–আম্মুও কাজে নেমে পড়েন। তবে এখন কাজ করার মূল অনুপ্রেরণা আমাদের সঙ্গে অন্য যাঁরা কাজ করেন তাঁরা। ভাবতেই ভালো লাগে এই উদ্যোগের জন্য আরও কয়েকটা পরিবার সামান্য হলেও আর্থিকভাবে সহায়তা পাচ্ছে।’
জান্নাতুল ফেরদৌস আরও বলেন, ‘ওড়না নিয়ে এই প্রায় এক বছরের কাজে এখনো আমরা তেমন বাধার সম্মুখীন হইনি, কেবল দুই–একজন অসৎ ক্রেতা ছাড়া। তবে কিছু সীমাবদ্ধতা থেকেই যায়। চাইলেই আমাদের মতো ছোট উদ্যোক্তা সহজেই প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে পারে না।’
তবে তিনি তাঁর ব্যবসা বা ক্ষুদ্র উদ্যোগের ভালো দিকও জানিয়েছেন। জানান, ‘আমরা ক্রেতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ বজায় রেখে কী পণ্য দিচ্ছি, সেটা সবার আগে বুঝিয়ে বলি। এরপর অর্ডার নিয়ে থাকি। যার ফলে পণ্য ফেরত আসে না।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হলে জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, এই উদ্যোগকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা, যেন অনেকগুলো পরিবার সহায়তা পায়। সঙ্গে দেশীয় বিভিন্ন কাঁচামাল নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। তাতে করে আমাদের দেশীয় উপকরণে তৈরি দেশীয় পণ্য হয়ে ওঠে বিয়ের জন্য প্রথম পছন্দ।’
ছবি: জান্নাতুল ফেরদৌস