আজ মহান বিজয় দিবস। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫১তম বছর পূর্ণ হলো। ৫১ বছরে এই দেশের সংস্কৃতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে ফ্যাশনে। গত দুই দশকে দিবসভিত্তিক সাজপোশাকের বিষয়টি আমাদের দেশের ফ্যাশনের একটি বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে বিজয় দিবস—সব জাতীয় দিবসকে কেন্দ্র করে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো সেজে ওঠে নানাভাবে। সংগতকারণেই বিজয় দিবসের পোশাকে উঠে আসে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রং। শিশু থেকে তরুণ-তরুণী ও বয়োবৃদ্ধ সবাই দেশীয় চেতনার ছোঁয়ায় এই রঙের পোশাক পরে নিজেদের রাঙিয়ে তোলেন নিজেদের।
তবে দেখা যায় এই দিবস উপলক্ষে কেনা পোশাকগুলো একবারই পরা হয়। সারা বছর বা বছরের পর বছর পোশাকগুলো আলমারির কোণায় পড়ে থাকে। অন্য কোনো সাধারণ দিন বা বিশেষ উপলক্ষেও এ ধরনের পোশাক কেউ পরতে চায় না। এর একটা কারণ অবশ্যই ডিজাইনে একঘেমেয়ি। রং দুটি ব্যবহারে প্রকৃত সৃজনভাবনার দৈন্যতা। এমন কি কাপড় ব্যবহারেও এক ধরনে স্টেরিওটাইপ মেরাভাব কাজ করে। ফলে পোশাকগুলোও ঠিক হয়ে ওঠে না অন্য উপলক্ষের।
অথচ সময় এখন টেকসই ফ্যাশনের। মন্থর ফ্যাশনের। ফলে কোনো পোশাক এমন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকাটা মোটেও পরিবেশবান্ধব নয়।
সবকিছু চিন্তা করেই এই বিজয় দিবস উপলক্ষে ফ্যাশন ব্র্যান্ড আনদিম একদম ভিন্ন ধারার একটি সংগ্রহ এনেছে। যেখানে রয়েছে এমন কিছু শাড়ি, যা শুধু বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবস নয়, অন্য যেকোনো উৎসব ও ফরমাল ইভেন্টে পরা যাবে। এমনকি পার্টিওয়্যার হিসেবেও বেশ মানিয়ে যাবে।
আনদিমের যাত্রা শুরু ২০১১ সালে। ডিজাইনের প্রতি আলাদা ভালোবাসা থেকেই দুই বন্ধুকে নিয়ে এই ফ্যাশন ব্র্যান্ড চালু করেন ঈমান আহমেদ। বর্তমানে অবশ্য একাই সামলাচ্ছেন সবকিছু। আগে বেশ কয়েকটা শো-রুম থাকলেও, এখন অনলাইনেই ব্র্যান্ডটির সব কার্জকম চলছে। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ঈমান আহমেদ এমন ডিজাইন করেন, যা সচারচার দেখা যায় না। তিনি রং নিয়ে খেলতে বেশ পছন্দ করেন। তাঁর ডিজাইন করা শাড়িতে সেই ছাপ স্পষ্ট।
বিজয় দিবস উপলক্ষে ডিজাইন করা শাড়িতে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙের পাশাপাশি আছে কালো, সাদা ও কমলারও নিপুণ সমন্বয়। ফ্যাব্রিক হিসেবে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ক্রেপ সিল্ক ও হ্যান্ডলুম কটন বা হাতে বোনা সুতি কাপড়।
আন্দিমের বিশেষত্ব হলো টাই-ডাই। বলতে গেলে ব্র্যান্ডটির বেশির ভাগ পোশাকেই গতানুগতিক ধারার বাইরের টাই-ডাই প্যাটার্ন ব্যবহার করতে দেখা যায়। ঈমান জানান, আনদিমের নিজস্ব বাটিকের কারখানা আছে। বিজয় দিবসের কয়েকটি শাড়িতেও লাল-সবুজ ও কালোর বাটিক প্রিন্ট করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই শাড়িগুলো বেশ প্রশংসিত হয়েছে। ঈমান আহমেদ ভবিষ্যতে এমন আরও অনেক ‘আউট অব দ্য বক্স’ কালেকশন আনার আশা ব্যক্ত করেন।
এ বছর বিজয় দিবস উপলক্ষে ফ্যাশন হাউস কে ক্র্যাফট তাদের সংগ্রহ নিয়ে এসেছে। সালোয়ার–কামিজ ও পাঞ্জাবি। রঙের ব্যবহার আর ডিজাইনে রয়েছে গতানুগতিকতা থেকে বের হয়ে আসার প্রয়াস। বিশেষ করে সবুজ জমিনের একটি পাঞ্জাবি শুধু বিজয় দিবস নয়, হয়ে উঠতে পারে, যেকোনো উৎসব আর অনুষ্ঠানের পরিধেয়।