আচার–অনুষ্ঠান ষষ্ঠী থেকে শুরু হলেও মূলত সপ্তমী থেকেই পূজার হইচই শুরু হয়। আগামীকাল সপ্তমী। আর এর আসল মজাই হচ্ছে, মন্দির ও প্যান্ডেলে ঘুরে ঘুরে দেবী দর্শন আর ভোগ খাওয়া। তবে এর সঙ্গে বিশেষ আকর্ষণ যোগ করে পছন্দসই পোশাক ও অনুষঙ্গ। সপ্তমীর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনায়াসে পরা যেতে পারে ট্রেন্ডের তুঙ্গে থাকা ইন্দো–ওয়েস্টার্ন ফিউশন আউটফিট। কিন্তু কেমন সেটা? এ প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে ফ্যাশন ডিজাইনার অনুশ্রী মালহোত্রার কাছ থেকে।
অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুশ্রী পরিয়েছেন অসাধারণ তিনটি ভিন্ন স্টাইলের ইন্দো–ওয়েস্টার্ন পোশাক। এর সঙ্গে সাজ আর অনুষঙ্গ কেমন হতে পারে, সে ব্যাপারেও চমৎকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সপ্তমীর সাজের এসব পোশাকে ওয়েস্টার্ন কাটিং কিন্তু ফেব্রিক আর ম্যাটেরিয়াল সবকিছুতেই রয়েছে ভারতীয় ছোঁয়া। এককথায় ডিজাইনার এর নাম দিয়েছেন, পশ্চিমা পোশাকের ভারতীয়করণ। এখানে কৃত্রিম তন্তু এড়িয়ে অরগ্যানিক ফেব্রিক ব্যবহারে জোর দিয়েছেন তিনি। ভারতীয় সাজ আর পশ্চিমা ছাঁটের এই সংমিশ্রণকে দুই সংস্কৃতির গাঁটছড়া বললেও ভুল হবে না। তবে এই পোশাকের সঙ্গে ভিন্ন আবেদন যোগ করতে সঠিক অনুষঙ্গের ব্যবহার আর স্টাইলিংটাও মুখ্য বলে জানান ডিজাইনার।
সপ্তমী থেকে যেহেতু মণ্ডপে ঘোরার আসল আনন্দটা শুরু হয়ে যায়, তাই যতটা ছিমছাম থাকা যায়, ততটাই ভালো লাগবে দেখতে। হেমন্তকাল চলে এলেও গরম তো আছেই। তাই বেছে নিতে হবে আরামদায়ক আর একই সঙ্গে স্টাইলিশ পোশাক। সে ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হতে পারে হ্যান্ডলুম বা তাঁতের কাপড়ের পোশাক। অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে পরেছেন খুব সুন্দর একটি সবুজ হ্যান্ডলুম জামদানির জামা।
এটার প্রধান ও অন্যতম বিশেষত্ব হলো, নেকলাইনের সামনে কুইল্টিং করা কাজ, যা বর্ডারের মতো একটা লুক দিয়েছে। এই নেকলাইন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইয়কের মতো সাদা কুরুশের লেস বসিয়ে। পোশাকটির নিচেও রয়েছে কুরুশের কাজ। তবে জামার আসল সৌন্দর্য এর কোয়ার্টার স্লিভে। ভারতের কর্ণাটক অঙ্গরাজ্যের ঐতিহ্যবাহী খুন ফেব্রিক দিয়ে তৈরি হয়েছে এই পোশাকের স্লিভ। এর ওপর হাতের কাজ করা হয়েছে রঙিন সুতা দিয়ে। পোশাকটির পেছন দিকটা বেশ সুন্দর। এর শো বোতাম যোগ করেছে ভিন্ন আবেদন।
খুবই আরামদায়ক এই লম্বা জামাকে চাইলে ফ্রকের মতো করেও পরা যায়, আবার বটম হিসেবে স্ট্রেট কাটের প্যান্ট দিয়েও টিউনিং করা যায়, জানিয়েছেন ডিজাইনার। কনীনিকা কানে পরেছেন হাতে তৈরি সুন্দর এক জোড়া রঙিন ঝুলানো পমপম দুল। হাতে শোভা পাচ্ছে হলুদ কাগজে তৈরি ফ্লোরাল নকশার চুড়ি। সাজে একদম বাড়াবাড়ি নেই। সফট গ্ল্যাম মেকআপে প্রাধান্য পেয়েছে ন্যুড গোলাপি লিপস্টিক। হেয়ারস্টাইলে ফুটে উঠেছে ফিউশন ঢং। ভিন্নতা আনতে পাশ-সিঁথিতে যুক্ত হয়েছে ছোট্ট বিনুনি। শেষে সবুজ জামার সঙ্গে জুটি বেঁধেছে সাদা লোফার স্টাইলের ফ্ল্যাট জুতা।
এদিন আরাম বিবেচনায় পরা যেতে পারে হালকা রঙের জুতসই কাটের পোশাক। যেহেতু পূজা, তাই উৎসবের আমেজটা যেন অক্ষুণ্ণ থাকে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। কনীনিকা এখানে তাঁর দ্বিতীয় সাজে পরেছেন একটা ডাস্টি পিঙ্ক শার্ট ও পাশে স্লিট দেওয়া অ্যাঙ্কেল প্যান্ট। একই রঙের ব্যবহার থাকায় কো–অর্ডও বলা যায় একে।
স্টাইলিশ এই আউটফিটের কাপড় হলো ভারতীয় খাদি।কনুই হাতার শার্টের সামনে ও পেছনে রয়েছে মনোমুগ্ধকর আর নিরীক্ষাধর্মী নকশা। নানা ধরনের মজাদার মোটিফ আর লেখা শার্টের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে দ্বিগুণ। আর বটমে পরা প্যান্টের স্লিট প্যাটার্নও ইন্দো–ওয়েস্টার্ন পোশাকটিকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। তবে এই আউটফিটের সঙ্গে সাজ ও অনুষঙ্গে মিনিমাল অথচ ট্রেন্ডি ছোঁয়া থাকলে পূজা জমে যাবে নিশ্চিত। চোখে থাকতে পারে পছন্দের রোদচশমা, যেহেতু সারা দিন বন্ধুদের সঙ্গে মণ্ডপে ঘোরার একটা পরিকল্পনা থাকেই। আর সাজের ক্ষেত্রেও হালকা মেকআপ মানাবে।
অনুষঙ্গে কিছুটা কারিশমা যোগ করা যেতে পারে। অভিনেত্রী তাঁর সাজ পরিপূর্ণ করতে চুলের সাজে এনেছেন কিছুটা ভিন্নতা। চুলগুলো কোঁকড়া করে মাথায় পরেছেন হাতে তৈরি বিডসের খুব সুন্দর একটা হেডব্যান্ড। ডিজাইনার জানিয়েছেন, এর সঙ্গে ফ্ল্যাট কোনো জুতা দিয়ে স্টাইল করলে বেশ ভালো লাগবে। কারণ, পূজার সময় বেশ অনেকটা পথ হাঁটতে হয়।
তৃতীয় সাজে কনীনিকা পরেছেন লাল খাদির ড্রেস। সামনের ইয়কে রয়েছে হলুদ সূর্যমুখী ও সবুজ পাতার মোটিফের পার্সি হ্যান্ড এমব্রয়ডারির নিখুঁত কাজ। চাইলে এভাবেও পোশাকটি পরা যায়। তবে ডিজাইনার জানিয়েছেন, এর ওপর লেয়ারিং স্টাইল যোগ করবে ভিন্ন মাত্রা। এতে স্টাইলের পাশাপাশি সারা দিনের রোদটাও শরীরে লাগবে না।
স্প্যাগেটি স্লিভসের জামার ওপর অভিনেত্রী পরেছেন খুব সুন্দর আর স্নিগ্ধ রঙের জ্যাকেট। এটি তৈরি করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ধনেখালি শাড়ির ফেব্রিক দিয়ে। তাই এর নামও ধনেখালি জ্যাকেট। কলকাতা কিংবা বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য পোশাকটি বেশ আরামদায়ক ও স্টাইলিশ সাজ দেবে। এই আউটফিটের সঙ্গেও মানিয়ে যাবে ফ্ল্যাট জুতা বা স্যান্ডেল। পূজায় মণ্ডপে ঘোরার জন্য হিল না পরাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
এর সঙ্গে অনুষঙ্গ হিসেবে কনীনিকা পরেছেন খুব সুন্দর একটা মাছ মোটিফের স্টেটমেন্ট নেকপিস, যা তাঁর সাজের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। যেকোনো রুপালি গয়না দিয়ে স্টাইল করলেও ভালো লাগবে। আর নেকপিসের ওপর গুরুত্বটা রাখার জন্য আর কোনো গয়না না পরলেও চলবে। তবে হাতে বেশ কিছু লাল গামছার চুড়ি পরলে চমৎকার একটা লুক আসবে। চুলের সাজের ক্ষেত্রে কোঁকড়া করা চুলে শোভা বাড়াতে পারে মুক্তা বসানো ক্লিপ। আর মিনিমাল মেকআপে সাজটা হবে পরিপূর্ণ।
ছবি: সুপ্রতিম চ্যাটার্জী
মেকআপ: সমিতাভ দেব
হেয়ারস্টাইল: বিথী রয়