বসন্তের মধুর সমীরণ পার করেই দরজায় উঁকি দিচ্ছে উষ্ণ দিনেরা। প্রকৃতির এই আবর্তনে আমাদের কোনো হাত না থাকলেও আরামদায়ক পোশাক নির্বাচনে নিজস্ব মতামতই চূড়ান্ত। যদিও মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের পোশাক নিয়ে নিরীক্ষায় ফ্যাশন ডিজাইনারদের আগ্রহ কিছুটা কম লক্ষ করা যায়। বলা চলে কিছুটা সাহস লাগে ছেলেদের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট নিয়ে ভাবতে বসতে। যুগ যুগ ধরে ফর্মাল প্যান্ট কিংবা জিনস—এ দুইয়ের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে ছেলেদের ফ্যাশন। লিখেছেন সাবরিনা মুন্নি।
ক্যাজুয়াল গাব্যার্ডিন প্যান্ট হাল ফ্যাশনে বেশ দাপটের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছিল। তবে বর্তমানে এর বাইরেও প্যান্টের স্টাইল কিংবা কাটিংয়ে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। তরুণদের এখন পছন্দ আরামদায়ক ঢিলেঢালা কাটছাঁট ও প্যাটার্নের প্যান্ট। প্যান্টের কাট ও কাপড়ে ভিন্নতাও তাই চোখে পড়ছে। তেমনি কিছু প্যান্টের স্ট্যাইল জানা যাক।
ফ্যাশনে হারেম প্যান্টের যাত্রা বিশ শতকের দিকে শুরু হলেও বাংলাদেশে এর যাত্রা বিগত কয়েক বছরে। ষাট ও সত্তরের দশকে হারেম প্যান্টগুলো প্রতি সংস্কৃতি ও হিপ্পি আন্দোলনের মুক্তপ্রাণ নীতির সমার্থক হয়ে উঠেছিল। সেই যুগের অন্য প্রভাবশালী সেলিব্রিটিদের সঙ্গে জিমি হেনড্রিক্স এবং মিক জ্যাগারের মতো মিউজিক্যাল কিংবদন্তিরা মঞ্চে এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায়ই হারেম প্যান্ট পরিধান করতেন, যা এ প্যান্টের জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে। বাংলাদেশে শুরুর দিকে এ প্যান্টের প্রতি আগ্রহ তরুণীদের হলেও বর্তমানে ধীরে ধীরে তা তরুণদের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সমানভাবে। গ্রীষ্মের খরতাপে ঢিলেঢালা এ প্যান্ট যেন ফ্যাশনের পাশাপাশি যাপিত জীবনে অনেকটা স্বস্তি দেয়।
জগার্স কয়েক বছর ধরে ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে স্বমহিমায়। জগার্স, জগিং বটম কিংবা সোয়েট প্যান্ট—নাম যা-ই হোক না কেন, মূলত ট্র্যাডিশনাল স্টাইলের স্পোর্টস প্যান্ট হিসেবে পরিচিত। ব্যায়ামের সময় পরার কারণে পোশাকটি অ্যাথলেটিক লুক দেয়। ক্যাজুয়াল ও আরামদায়ক হওয়ায় প্রতিদিন পরছেন এখনকার তরুণেরা।
পাঞ্জাবির সঙ্গে চুড়িদারের প্রচলন তো অনেক দিন চলেছে। তবে ইদানীং ৭০–এর দশকের ঢোলা পায়জামা আর শর্ট পাঞ্জাবি কিংবা ফতুয়ার কম্বিনেশন বেশ নজর কাড়ছে। ঢিলেঢালা পায়জামা প্যান্ট আরামদায়ক হওয়ায় যেকোনো ঘরোয়া অনুষ্ঠানে কিংবা আড্ডায় গরমের স্বস্তি মিলছে বলে এর চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জিনসের কোনো বিকল্প নেই। যুগ যুগ ধরে ছেলে-বুড়ো সবার কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো জায়গায় জিনস একদম পারফেক্টলি মানানসই একটি প্যান্ট। জিনসের বিকল্প হিসেবে যা–ই ধরা যাক না কেন, ঘুরেফিরে জিনস তার অবস্থান অক্ষুণ্ন রেখে টিকে যাবে আরও বহু যুগ। তাই বরাবর জিনস নিয়ে হয়েছে নানা নিরীক্ষা। বর্তমানে বাংলাদেশের উষ্ণ আবহাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্কিনি কিংবা পেনসিল জিনসের জায়গায় তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে ব্যাগি জিনস। অনেক বেশি কমফোর্টেবল হওয়ায় সারা দিনের জন্য ব্যাগি জিনস ফ্যাশনে এখন তুঙ্গে।
নব্বইয়ের দশকের ঐতিহ্যবাহী ফ্যাশন আবার ফিরে এসেছে। সেই ফ্লেয়ার্ড জিনস, ব্যাগি জিনস আবার ট্রেন্ডিং। সে সময়ের ফ্যাশন আইকনদের ধারা বজায় রেখে আমাদের হাল ফ্যাশনের তরুণেরা নিজের ফ্যাশন ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে বেলবটম স্টাইলে ফিরে যাচ্ছেন। ফ্যাশনের এ আবর্তন নানা পথ ঘুরে বারবার ফিরে আসে ফ্যাশন প্রিয় মানুষের ওয়ার্ডরোব।
ছেলেদের নানা আকৃতির ফুলপ্যান্ট ছাড়াও থ্রি–কোয়ার্টার ও খাটো প্যান্টগুলোর কাটেও নতুনত্ব যোগ করা হয়েছে। ফুলপ্যান্টের বিকল্প হিসেবে আড্ডা বা ঘোরাঘুরির সময় সহজে বেছে নিতে পারবেন প্যান্টের থ্রি–কোয়ার্টার ভার্সন। গরমে আরামের সঙ্গে ফ্যাশনও মিলবে। সামার কালেকশনে, ফেব্রিকের ভিন্নতায় নানা ডিজাইনের শর্টস, কার্গো, থ্রি–কোয়ার্টার প্যান্টের চাহিদাও ফ্যাশনে বেশ জনপ্রিয়।
ছবি : হাল ফ্যাশন ও ইনস্টাগ্রাম