
২০২৫ সালের উৎসব শুরুর ঠিক আগেই কান কর্তৃপক্ষ এক বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। উৎসবের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে একটি নতুন নিয়ম সংযোজন করা হয়েছে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: ‘লাল গালিচাসহ উৎসবের অন্য কোনো স্থানে অশালীনতা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।’ আয়োজকেরা বলছে নিয়মটি যুক্ত করা হয়েছে ‘শালীনতা বজায় রাখার কারণে’।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানে তারকারা স্বচ্ছ পোশাক পরায় শালীনতা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে পৌঁছায়। বেলা হাদিদ, কেন্ডাল জেনার ও এল ফ্যানিং সহ বহু তারকা স্বচ্ছ পোশাকে অংশ নিয়েছেন। এমনকি ২০২২ সালে এক ইউক্রেন-সমর্থনকারী নারী যুদ্ধের প্রতিবাদে নগ্ন হয়ে পড়লে তাকে লাল গালিচা থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এছাড়া গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডসে বায়াঙ্কা সেনসোরি তার স্বামী কানিয়ে ওয়েস্টের সঙ্গে একটি স্বচ্ছ শিয়ার জাতীয় পোশাক পরে উপস্থিত হন। অনেক ফ্যাশন বিশ্লেষকদের মতে যা ছিলো কার্যত সম্পূর্ণ অশালীন। এমন ঘটনার এড়াতে কান কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত।
এই সিদ্ধান্ত সরাসরি প্রভাব ফেলবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর জনপ্রিয় ‘ন্যুাড বা নেকেড ড্রেস’ বা ‘শিয়ার’ ট্রেন্ডের ওপর। বেলা হাদিদের ইভ সা লোর-এর সম্পূর্ণ স্বচ্ছ পোশাক, নাদিয়া লি কোহেনের সূক্ষ্ম বুননের শিয়ার পোশাক, কিংবা ভিকি ক্রিপসের থিমড আর্মানি প্রিভে গাউন — এগুলো কি একেবারে হারিয়ে যাবে।
সমস্যা হলো, ‘ন্যুাড ড্রেস’ নামে একরকম হলেও, এ ধরনের প্রতিটি পোশাকের প্রকাশভঙ্গি একেক রকম। কেউ হয়তো শিয়ার বা স্বচ্ছ কাপড়ে আবৃত করে নিজেকে। কেউ হয়তো কৌশলে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলে। আবার প্রতিবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রেও অনেকে ‘ন্যুাড ড্রেস’ এর দ্বারস্থ হন। এমন পোশাকের ক্ষেত্রে অশালীনতার সংজ্ঞা কি হবে? এই প্রশ্ন এখন ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মুখে মুখে। অনেকে উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ১৯৯০-এর দশকের জ্যঁ-পল গলতিয়ে এক ফ্যাশন শোতে শরীরের প্রিন্ট করা পোশাক উপস্থাপন করেন। এখন সেটাও কি নিষিদ্ধ হবে।

হলিউড রিপোর্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নতুন ড্রেস কোড কেবল নতুন কোনো বিধিনিষেধ নয়, বরং আয়োজকদের মতে এটি ‘আগেই প্রচলিত নিয়মের আনুষ্ঠানিক রূপ’। উৎসবের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘উদ্দেশ্য পোশাক নিয়ন্ত্রণ করা নয়, বরং সম্পূর্ণ অশালীনতা নিষিদ্ধ করা।’

কান-এর অফিশিয়াল চার্টার অনুযায়ী:
* লাল গালিচা এবং উৎসব এলাকার কোথাও অশালীন পোশাকে উপস্থিত হওয়া চলবে না।
* অতিরিক্ত বড় ট্রেন বা বিশালাকৃতির পোশাক, যা চলাচলে বাধা দেয় বা আসনে বসতে সমস্যা সৃষ্টি করে, সেটিও নিষিদ্ধ।
লাল গালিচার প্রবেশপথে নিরাপত্তাকর্মীরা এ নিয়ম না মানা ব্যক্তিদের আটকে দেবেন।

এই নিষেধাজ্ঞা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ফ্যাশন কি সব সময়ই সাহসী হতে হবে? নাকি উৎসবের মতো একটি সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্মে শালীনতাই মুখ্য হওয়া উচিত? ফ্যাশন ডিজাইনাররা মনে করছেন, সীমাবদ্ধতা কখনো কখনো সৃজনশীলতার জন্ম দেয়। অর্থাৎ ‘ন্যুড ড্রেস’ বা বিশাল ট্রেন না থাকলেও লাল গালিচায় চোখধাঁধানো পোশাক সম্ভব।
আবার অনেকে বলছেন, শালীনতা ও শিল্পের সীমারেখা কোথায়? ‘ন্যুড ড্রেস’ কি সত্যি শিল্প, না কি মনোযোগ আকর্ষণের এক পন্থা মাত্র? কান-এর এই সিদ্ধান্তে হয়তো ‘ন্যুড ড্রেস’ ট্রেন্ড বন্ধ হয়ে যাবে না, তবে তা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত হওয়ার পথে খুলে দেবে। যেখানে হয়তো শরীরের আবেদন থাকবে, কিন্তু তা আরও সুন্দর ও রুচিশীল ভাবে।
শুধু সময়ই বলে দেবে, ফ্যাশন ও চলচ্চিত্রের এই টানাপোড়েন কোনো দিকে মোড় নেয়। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই বছর কান-এর লাল গালিচা দেখতে যাচ্ছে এক নতুন চেহারায়। আর তা হয়তো কম অশালীন, কিন্তু সমান গ্ল্যামারাস।
ছবি: কান চলচ্চিত্র উৎসব–এর অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম