জানেন কি, আজকের হিলওয়ালা জুতার উদ্ভাবন পারস্যের অশ্বারোহী সৈন্যদের  সুবিধার জন্য
শেয়ার করুন
ফলো করুন

প্রাচীন পার্সিয়াই বা পারস্যই বর্তমানের ইরান। খ্রিষ্টপূর্ব দশম শতাব্দী থেকে শুরু করে ইসলামিক স্বর্ণযুগ পর্যন্ত পারস্য সাম্রাজ্যে অশ্বারোহী সৈন্যরা এমন জুতা পরতেন, যাতে তাঁদের পা সহজে রিকাব বা রিস্টারাপে আটকে থাকে। তাঁদের সুবিধার জন্যই আবিষ্কৃত হয় ‘উঁচু হিল’; এই হাই হিল জুতা আদতে তখনকার দিনে পুরুষদের যুদ্ধের জুতা ছিল। এই উঁচু অংশটিকে ফার্সি ভাষায় বলা হয় ‘গালেশ’। ঐতিহাসিক সূত্র বলছে, সামানি সাম্রাজ্যে (৮১৯–৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দ) এই ধরনের জুতার প্রচলন ছিল। মানে সেখানেই প্রথম উৎপত্তি। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বলছে, এই ধারা পরেও অব্যাহত ছিল সাফাভি সাম্রাজ্যেও (১৫০১–১৭৩৬ খ্রিষ্টাব্দ)। এই শাসনামলে ঘোড়সওয়ারদের এই ধরনের জুতা পরতে দেখা যায়।

পারস্য সাম্রাজ্যে অশ্বারোহী সৈন্যরা এমন জুতা পরতেন
পারস্য সাম্রাজ্যে অশ্বারোহী সৈন্যরা এমন জুতা পরতেন

ষোড়শ শতকের দিকে পারস্যের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হওয়ায় প্রচুর পর্যটক ইউরোপ থেকে পারস্য ভ্রমণে আসতে থাকে। পারস্যের কূটনীতিক, পর্যটক ও বণিকদের মাধ্যমে এই হিল পৌঁছায় ইউরোপে। ইউরোপের অভিজাতদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই জুতা। কারণ, এটি শুধু যুদ্ধের স্মারক নয়, বরং তখন এটি হয়ে উঠেছিল সামাজিক মর্যাদার প্রতীকও।

একসময় কেবল অভিজাতরাই লাল হিল পরতে পারতেন
একসময় কেবল অভিজাতরাই লাল হিল পরতে পারতেন

ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই এই জুতা দেখে দারুণ মুগ্ধ হয়ে আদেশ জারি করেন, কেবল অভিজাতরাই লাল হিল পরতে পারবে। বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা পোট্রেটে চতুর্দশ লুইকে লাল হিল পরিহিত দেখা যায়। ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের হিলের উচ্চতা ছিল প্রায় চার ইঞ্চি। এটা আজও আইকনিক ‘Red Bottom Heels’ হিসেবে পরিগণিত। এই লাল হিলের ফ্যাশনকে পরে টিকিয়ে রাখেন বিখ্যাত শু ডিজাইনার ক্রিশ্চিয়ান লুবুতাঁ। সারা বিশ্বেরই আজ পরিচিত জুতার ব্র্যান্ড লুবুতাঁ।  

বিজ্ঞাপন

অষ্টাদশ শতকের দিকে ইউরোপে রাজনৈতিক পরিবর্তন ও ফ্যাশন সচেতনতা বাড়তে থাকলে হিলের ব্যবহার পুরুষদের মধ্যে কমে আসে। নারীরা তখন একে ফ্যাশনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেন। স্লিম হিল, স্টিলেটো, কিটেন হিল ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের হিল ফ্যাশন–জগতের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে হিল হয়ে ওঠে নারীত্বের অন্তর্ভুক্তির প্রতীক।

ধীরে ধীরে হিল হয়ে ওঠে নারীত্বের অন্তর্ভুক্তির প্রতীক
ধীরে ধীরে হিল হয়ে ওঠে নারীত্বের অন্তর্ভুক্তির প্রতীক

হাই হিল আভিজাত্য ও ফ্যাশনের প্রতীক হিসেবে শতাব্দীজুড়ে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকলেও বিগত বছরগুলোতে হাই হিলের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে ছিল নানা বিতর্ক। সেই আলোচনা আজও অব্যাহত আছে। অনেকেই মনে করেন, এই জুতা নারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, নিজস্ব ফ্যাশন প্রকাশ করে। আবার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন দীর্ঘ সময় হিল পরার নেতিবাচক দিক নিয়ে। তাঁরা বলেছেন, অনেকক্ষণ হাই হিল পরে থাকলে মেরুদণ্ড, হাঁটু ও পায়ের ক্ষতি হতে পারে। অন্যদিকে মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত, হাই হিল নারীদের অধিক কর্তৃত্বপূর্ণ ও আবেদনময়ী মনে করেন।

হাই হিলে নারীদের অধিক কর্তৃত্বপূর্ণ ও আবেদনময়ী মনে করেন অনেক মনোবিজ্ঞানী
হাই হিলে নারীদের অধিক কর্তৃত্বপূর্ণ ও আবেদনময়ী মনে করেন অনেক মনোবিজ্ঞানী

জুতার এই বিবর্তনের ইতিহাস জানতে আগ্রহীরা পড়তে পারেন ‘শু: আ হিস্ট্রি ফ্রম স্যান্ডালস টু স্নিকারস’ বইটি। যে জুতা একসময় পারস্যের অশ্বারোহী সৈনিকদের কাজের জন্য আবষ্কৃতি হয়েছিল, আজ সেটাই নারীদের ফ্যাশনের অনুষঙ্গ। ইতিহাস আর ফ্যাশনের এই অসাধারণ রূপান্তর আমাদের শেখায় যা আজ আমরা ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবে ভাবি, তা একসময় অন্য কোনো উদ্দেশ্যে উৎপত্তি হয়েছিল।

ছবি: উইকিপিডিয়া, পেকজেলসডটকম ও ইনস্টাগ্রাম

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৮: ৩৫
বিজ্ঞাপন