আর্কা ফ্যাশন উইক: দেশি নীলের নকশিকাঁথা, শাড়ি ও পোশাক
শেয়ার করুন
ফলো করুন

একটি সামাজিক ব্যবসায় উদ্যোগ হচ্ছে লিভিং ব্লু। বর্তমানে নীলের রং ব্যবহার করে কাঁথা, ওড়নাসহ নানা পোশাক বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। রাজধানীর মানুষের জন্য এবার এই নীলের পোশাকগুলো পাওয়া যাচ্ছে আর্কা ফ্যাশন উইক ২০২৫–এ। লিভিং ব্লুর ডিজাইনার মাসুদ রানা জানান, ‘নীলের ব্যবহার নিয়ে নবীন ফ্যাশন ডিজাইনাররা আগ্রহ প্রকাশ করার পাশাপাশি এর ব্যবহারও শিখছেন। আবার অনেকেই জেনে অবাক হচ্ছেন, এই নীল আমাদের দেশেই উৎপাদন হয়।’

কাথা স্টিচ করা  জ্যাকেট
কাথা স্টিচ করা জ্যাকেট

নকশিকাঁথা ছাড়া ওড়না, শাল ও ব্যাগ তৈরি করে লিভি ব্লু। শালের এক স্তরে থাকে প্লেইন ডাই, আরেক স্তরে থাকে শিবরির ডিজাইন। এ ছাড়া লিমিটেড এডিশন কালেকশনে তৈরি হয় শাড়িও। শাড়ির অর্ডার পেলেই তবে বানিয়ে দেওয়া হয়। লিভিং ব্লুর কারখানা রংপুরে। নীল আর পণ্য তৈরির বেশির ভাগ কাজই হয় সেখানে। ডায়িং, শিবরি স্টিচিং, ফেব্রিক কাটিংসহ প্রায় সব করা হয় এখানকার অ্যাটিলিয়ারে।

শিবরি ও অন্যান্য ডায়িং–এর স্কার্ফ
শিবরি ও অন্যান্য ডায়িং–এর স্কার্ফ

কাঁথা সেলাইয়ের কাজ আর্টিজানরা ঘরে বসে করলেও শিবরি স্টিচিং আর ডায়িংয়ের কাজ হয় অ্যাটিলিয়ারেই। শাল ও ওড়নায় ৯ থেকে ১১ স্টিচ আর নকশিকাঁথায় প্রতি ইঞ্চিতে ৭ স্টিচের কাজ করা হয়। একটি নকশিকাঁথা বুনতে একজন আর্টিজানের মোটামুটি সাড়ে তিন মাস সময় লাগে। এসব কাঁথার দাম শুরু হয় ২৩ হাজার টাকা থেকে।

বিজ্ঞাপন

কাঁথার আরেকটি স্টিচের ধরন হলো লহরী। একটি লহরী কাঁথা বানাতে সময় লাগে ছয় মাস। মূলত হ্যান্ডলুম ফেব্রিক, দুই ধরনের কটন, সিল্ক, খদ্দর ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় পণ্য উৎপাদনে। বিক্রি হয় নীল রঙের গুঁড়াও।

শিবরি নকশিকাঁথা
শিবরি নকশিকাঁথা

উত্তরবঙ্গে যে সময়টাতে ফসল হয় না, সে সময় জমিতে নাইট্রোজেনের জোগান দিতে নীলগাছ লাগান স্থানীয় কৃষকেরা। গাছের পাতা-ডালপালা দিয়ে মেটান সার-জ্বালানির প্রয়োজন। নীলগাছের মাথা থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত ডাল–পাতাসহ কাটতে হয়। পাতা কাটার পর সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যে পানিতে জাগ দিতে হয়। বড় চৌবাচ্চায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পাতা জাগ দেওয়ার পর একটি নির্যাস পাওয়া যায়। পরে আরেক চৌবাচ্চায় পাতার সবুজ রঙের গাদকে আড়াই থেকে চার ঘণ্টা অক্সিডাইজেশন করতে হয়।

 কেক ও গুঁড়া আকারে নীল পাওয়া যায়
কেক ও গুঁড়া আকারে নীল পাওয়া যায়

এ সময় সবুজ রঙের গাদ বাতাসের সঙ্গে বিক্রিয়ায় নীল রঙের গাদে পরিণত হয়। সেটি সাদা মার্কিন কাপড়ে ছেঁকে নেওয়া হয়। এরপর এই নীল গাদ রোদে শুকানো হয় অথবা জ্বাল দেওয়া হয়। এখান থেকে কেক ও গুঁড়া আকারে নীল পাওয়া যায়। এই নীল তৈরিতে বিভিন্ন ধাপে সময়ের হেরফের হলে নীলের গুণগত মানের তারতম্য ঘটে। নীলগাছের আড়াই শ কেজি সবুজ পাতা থেকে এক কেজি নীল পাওয়া যায়, যা রপ্তানি হচ্ছে সাতটি দেশে। দেশগুলো হলো ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, জাপান ও কানাডা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয় লিভিং ব্লুর পণ্য।

কাঁথা সেলাইয়ের কাজ আর্টিজানরা ঘরে বসে করলেও শিবরি স্টিচিং আর ডায়িংয়ের কাজ হয় অ্যাটিলিয়ারেই
কাঁথা সেলাইয়ের কাজ আর্টিজানরা ঘরে বসে করলেও শিবরি স্টিচিং আর ডায়িংয়ের কাজ হয় অ্যাটিলিয়ারেই

বিভিন্ন বিদেশি বুটিকস ব্র্যান্ডগুলো লিভিং ব্লুর প্রধান কাস্টমার। তাদের বেশির ভাগ পণ্য বিক্রি হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। পরিচিতিটা ছড়ায়ও সেভাবেই। প্রথম সারির অনেক ব্র্যান্ডের সঙ্গেও কাজ করেছে লিভিং ব্লু।

দেশি গ্রাহকদের কাছে সেভাবে লিভিং ব্লুর পণ্য বিক্রি হয় না। তবে কেউ কিনতে চাইলে ব্র্যান্ডটির ফেসবুক পেজের (https://www.facebook.com/livingbluebd/?ref=hl ) মাধ্যমে অর্ডার করেই কিনতে পারবেন পছন্দসই পণ্য।

ছবি: লিভিং ব্লু

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৫১
বিজ্ঞাপন