দেশের শীর্ষ ব্র্যান্ড এপেক্সের মৌচাক শাখায় ঘুরে দেখা গেল জাঁকজমকের চেয়ে সাদামাটা কালেকশন বেশি। পুরো এপেক্সে ১৫০৬টি ডিজাইনের মধ্যে মৌচাক শাখায় রয়েছে ৬০০টি। এর মধ্যে বেশি চলছে এপেক্সের সাব ব্র্যান্ড নিনো রসির ব্লক হিল। অ্যাশ এবং হালকা গোলাপি ব্লক হিলের ওপরের অংশে অল্প পাথর বসিয়ে ভ্যালু অ্যাড করা হয়েছে। এ ছাড়া আরামের জন্য সবচেয়ে বেশি চলছে স্লিপার। ব্ল্যাক ও ব্রাউন পাম শু বেছে নিচ্ছে কমবয়সী মেয়েরা। এপেক্স হিলের জন্যে বিখ্যাত হলেও এই শাখায় এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। ছিমছাম কম কাজের জুতা বেছে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
বহুজাতিক ব্র্যান্ড বাটার মৌচাক শাখায় নারী ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও চাহিদা পার্টিওয়্যার থেকে কমফিটে বেশি। ক্রেতাদের মধ্যে একজন জানান, এই গরমে কমফিটের চেয়ে আরামদায়ক জুতা আর কিছু হতে পারে না। এই এলাকার একাধিক আউটলেট ঘুরে বোঝা গেল মেয়েরা বেশি কিনছেন গরমে আরাম দেওয়ার মতো জুতা। যেন উৎসব এবং আরাম দুটিই হয় একসঙ্গে।
অন্যদিকে আরেকটি ব্র্যান্ড ভাইব্র্যান্টে ঢুকে দেখা গেল, মেয়েদের বেল্ট স্যান্ডেল এবং স্লিপার বেশি বিক্রি হচ্ছে। ফ্ল্যাট স্যান্ডেলগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে ওপরের দুই ফিতায় কোনোটায় জরি লাগানো, কোনোটায় পার্লের কাজ। নেভি ব্লু, মেরুন এবং গোল্ডেন বেশি পছন্দ করছে মেয়েরা। বিক্রেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ঈদে ক্রেতাদের আনাগোনা খুব কম, তাই বিক্রিও তেমন হচ্ছে না।
জুতার ব্র্যান্ড স্টেপের সব সময়ের সিগনেচার পণ্য ইভা সোলের জুতা। এই সোলের বিশেষত্ব হলো, এটি অন্যান্য সোলের চেয়ে খুবই আরামদায়ক। যেহেতু এখন গরম বেশি পড়েছে, তাই মেয়েরা দুই ফিতার স্যান্ডেল শু বেশি কিনছেন। ডিজাইনও একঘেয়ে নয়। কোনো কোনো জুতায় ক্র্যাফট সোলের ওপর ব্যাম্বু ক্র্যাফটের ব্যবহার রয়েছে, কোনোটায় আবার পাটের বুনন। স্যান্ডেল শুতে স্টোন ও পুঁতির কাজ রয়েছে, তবে দেখতে খুবই সিম্পল। বেশি গুরুত্ব পেয়েছে কালো, বাদামি এবং সোনালি। ঈদের পাশাপাশি রেগুলার ওয়্যার হিসেবে পরা যাবে এই জুতাগুলো।
পিওর লেদারের জন্য পরিচিত ক্রিসেন্ট ব্র্যান্ড। এখানে স্লিপারের চাহিদা বেশি। স্লিপারগুলোতে নানা ধরনের বৈচিত্র্য রয়েছে। কোনোটায় রয়েছে স্টোন, কোনোটায় লেদারের বেল্টের ওপর নকশা করা। এ ছাড়া মিডিয়াম ব্যালান্সড হিলের মধ্যে বাদামি এবং কালো বেশি চলছে বলে জানান বিক্রেতারা।
এদিকে মৌচাক মার্কেটের অন্যান্য জুতার দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় এখন। এখানে সব ধরনের ক্রেতাই আসেন। ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে ফিক্সড প্রাইস থাকে, অনেক সময় সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু নন-ব্র্যান্ডের দোকানে দামাদামি করার সুযোগ থাকে। জানালেন মৌচাক মার্কেটে জুতা কিনতে আসা একজন ক্রেতা। এখানে মেয়েদের সব ধরনের জুতাই পাওয়া যাচ্ছে। তবে বেশিরভাগ মেয়েরাই বেছে নিচ্ছেন পাথর ও পুঁতি বসানো অনুষ্ঠানে পরার জুতা।
বাটার মৌচাক শাখায় সবচেয়ে বেশি চলছে সামার স্যান্ডেল এবং পাঞ্জাবির সঙ্গে পরার জন্য লোফার। অন্যদিকে এপেক্সের সাব-ব্র্যান্ড ভেঞ্চুরিনির চামড়ার স্যান্ডেল এবং হাফ শু বেশি চলছে। বয়স্করা বেছে নিচ্ছেন সাব-ব্র্যান্ড ডক্টর মক-এর স্যান্ডেল। যাঁদের পায়ে সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য এই জুতা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া বেল্ট স্যান্ডেলও কিনছেন ছেলেরা।
মৌচাকের স্টেপে ছেলেদের স্লাইড স্যান্ডেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ক্রেতাদের ভাষ্য, স্টেপের স্লাইড স্যান্ডেলে নানা ধরনের ডিজাইন রয়েছে যা অন্য ব্র্যান্ডগুলোতে খুবই কম। এটি বেশ আরামদায়ক। এ ছাড়া ইভা এবং ক্র্যাফট সোলে তৈরি স্টারলাইন, নো মেডের চাহিদাও রয়েছে মৌচাকের স্টেপে। কিছু জুতা পিওর লেদারের, নিচে রবার দেওয়া। এই লেদার পানি শোষণ করে না, তাই খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়।
ক্রিসেন্টে ঘুরে দেখা গেল, ছেলেরা স্যান্ডেল শু, বেল্ট জুতা এবং স্লিপার কিনছেন বেশি। কালো, চকোলেট ও বাদামি রঙের প্রাধান্য এখানে।
ভাইব্র্যান্টে কালো রঙের হাফ লোফারের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া স্লিপারও রয়েছে বিভিন্ন দামের।
অন্যদিকে মৌচাক মার্কেটের চিত্র একেবারে উল্টো। এখানে সব ধরনের ক্রেতা রয়েছেন। উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যেই চলছে জুতা কেনার প্রতিযোগিতা। একেকজনের পছন্দ একেক রকম। কেউ বেছে নিচ্ছেন লোফার, কেউ বেল্ট স্যান্ডেল, কেউ আবার নাগরা। দামও থাকছে তাঁদের সাধ্যের মধ্যে।
বাচ্চাদের জুতা সাধারণত মা-বাবা কিংবা পরিবারের সদস্যরাই পছন্দ করে কেনেন। তবে যারা একটু বড় হয়ে গেছে বা টিনএজার, তাঁরা নিজেরাই পছন্দ করতে পারে। মৌচাক এলাকার বাটার শোরুমে ঢুকে বোঝা গেল, বাচ্চাদের জুতা বিক্রি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। অনেক কালেকশন প্রায় শেষের দিকে। মেয়ে বাচ্চাদের বেল্ট স্যান্ডেল সবচেয়ে বেশি চলছে। লাল, কমলা, বেগুনি ও গোলাপি রঙের জুতাগুলোতে রয়েছে নানা ধরনের ফুল, পুঁতি কিংবা জরির কাজ। অন্যদিকে ছেলে বাচ্চাদের মধ্যে বেশি চাহিদা বাটার সাব-ব্র্যান্ড বাবল গামারের স্যান্ডেল শুর। টিনএজাররা পছন্দ করছে ক্যানভাস।
মৌচাকের এপেক্সে ৫-৬ বছরের মেয়ে বাচ্চাদের প্রথম পছন্দ স্টোন বসানো পাম শু। ১২-১৩ বছর বয়সের মেয়েরা বেশি কিনছে স্যান্ডেল শু এবং পাম শু।
স্টেপে শিশুদের সংগ্রহ কিছুটা কম হলেও রেগুলার ওয়্যার হিসেবে অনেক বাবা-মা ছোট বাচ্চার জন্য কিনছেন ইভা সোলের জুতা। আরামদায়ক বলে বাচ্চাদের সব জুতাতেই ইভা সোলের ব্যবহার রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।
অন্যদিকে জুতার ব্র্যান্ড ক্রিসেন্টে বাচ্চাদের জুতার কালেকশন তেমন নেই বললেই চলে। কিন্তু মৌচাক মার্কেটে রয়েছে বৈচিত্র্য। শুধু ধৈর্য সহকারে, দেখেশুনে কিনলেই হবে।
ছবি: লেখক