‘লেস ইজ মোর’, অর্থাৎ ‘কমই বেশি’ নীতিতে চলছে এখন ফ্যাশনজগৎ। স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করতে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য আর আরামকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন ফ্যাশনসচেতন ব্যক্তিরা। একুশ শতকের ফ্যাশনে মূলমন্ত্র এটাই। সেদিক থেকে যেকোনো পোশাকের সঙ্গে আরাম নিশ্চিত করে এক জোড়া জুতা। ঘর থেকে বের হতে গেলে যেমন সবার আগে ভাবতে হয়—কোন পোশাকটি পরব, তেমন গুরুত্ব পায় জুতাও। স্টাইলের সঙ্গে আরামটাও যেন হয়, শতভাগ সেদিকে লক্ষ রাখছেন তরুণ ফ্যাশনিস্তারা। এদিক থেকে বেশ স্টাইলিশ একটি জুতা হলো ক্রকস। একদল একে খুব একটা পছন্দ না করলেও ক্রকসের রাজত্ব কিন্তু এখন সারা বিশ্বে। তরুণ থেকে বৃদ্ধ—সবারই এর প্রতি আস্থা তৈরি হয়েছে। এর অন্যতম কারণ, আরাম ও বহুমুখিতা।
ক্রকসের ইতিহাস অবশ্য বেশি দিনের নয়। আরামদায়ক, মজবুত আর বোটিং করার জন্য যথেষ্ট হালকা জুতার চাহিদা থেকেই এর উদ্ভাবন। ২০০২ সালে মার্কিন কোম্পারি ক্রকস ইনকরপোরেট প্রথম ক্রকস বাজারে নিয়ে আসে। মূলত ডেনমার্কের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের একটি ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জুতাটি তৈরি হয়। স্বাচ্ছন্দ্য ও বহুমুখিতার কারণে বাজারে আসার পর খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর এর ডিজাইন আরও পরিবর্তিত হয়। ইভা ফোম থেকে তৈরি ক্রকস, যা খুব হালকা ও জলপ্রতিরোধী। তবে এখন এই জুতা রাবার ও প্লাস্টিকেরও হয়। ক্রকসের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকলে এটি বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে পরিচিতি পায়।
বর্তমানে ক্রকস ব্র্যান্ড বিভিন্ন ধরনের জুতা তৈরি করে, যা সব বয়সের মানুষের জন্য উপযোগী। তাদের স্টাইলিশ ডিজাইন এবং অনন্য কার্যকারিতার কারণে ক্রকস এখনো বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। তবে মার্কিন এই ব্র্যান্ডের পর এখন বাটার মতো অনেক জনপ্রিয় ব্র্যান্ড এই জুতা নিয়ে এসেছে। দেশের বাইরে জনপ্রিয়তা থাকলেও আমাদের দেশে এই জুতার ট্রেন্ড শুরু হয়েছে বছর দুয়েক হলো। এ বছর ক্রকসের জনপ্রিয়তা যেন সব জুতাকে ছাড়িয়ে গেছে। যাবেই–বা না কেন, ক্রকসের বহুমাত্রিকতাই এর কারণ। তাই তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু বড়রাও বেছে নিচ্ছেন এই জুতা।
ক্রকসের প্রথম মডেল বাজারে আনা হয় ২০০২। তৈরি করা হয়েছিল মাত্র ২০০ জোড়া জুতা। সেই সংগ্রহের নাম ছিল ‘দ্য বিচ’। ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেলের একটি বোট শোতে উপস্থাপনের সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয়ে যায় সব জুতা। ২০০৫ সালে তারা রিব্র্যান্ডিং করে। সে বছরই তাদের লোগো নিবন্ধন করা হয় এবং তারা নতুন প্রচারণা শুরু করে। এর শিরোনাম ছিল ‘দ্য আগলি ইজ বিউটিফুল’।
ক্রকস জুতার বিভিন্ন স্টাইলের মধ্যে জনপ্রিয় হলো, ক্রকসের ক্ল্যাসিক ডিজাইন। সবার পরিচিত এই জুতার ডিজাইনটি খুব সাধারণ আর পাওয়া যায় বিভিন্ন রঙে। অন্যদিকে ক্রকস স্লিপারস খুব সহজেই পরিধানযোগ্য আর খোলামেলা ডিজাইনের। সাধারণত বাড়িতে বা স্নান করতে এটা ব্যবহার করা হয়। বৃষ্টির দিন বা জলাভূমির জন্য উপযুক্ত হলো ক্রকস বুট। আর ক্রকস ফ্লিপ-ফ্লপস মানানসই গ্রীষ্মকালে ব্যবহার উপযোগী।
পায়ের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে জুতা সব সময় আরামদায়ক হওয়া উচিত। এদিক থেকে ক্রকসকে দশে দশ দেওয়াই যায়। শক্ত কোনো উপকরণে এই জুতা তৈরি হয় না বলে পরেও আরাম পাওয়া যায়। বিশেষ করে সারা দিন পরে থাকার জন্য এই জুতার তুলনা নেই। যেকোনো পোশাকের সঙ্গেও আজকাল তরুণ থেকে বৃদ্ধ—সবাই পরছেন।
ক্রসলাইট ফোম, ইভা ফোম, রাবারের মতো উপাদানে তৈরি ক্রকসের অন্যতম সুবিধা হলো এগুলো সহজেই পরিষ্কার করা যায়। অন্যসব জুতা যেমন ধুয়ে শুকাতে সময় লাগে, এই জুতায় সেটা একদম উল্টো। তবে সরাসরি রোদের তাপে নয়, ক্রকস শুকাতে হবে বাতাসে। সম্ভব হলে মৃদু সাবান আর পানি ব্যবহার করে নিয়মিতভাবে এই জুতা পরিষ্কার করা উচিত। হালকা ডিটারজেন্ট দিয়ে কিংবা শুধু ঠান্ডা পানি ও সাবান দিয়েও পরিষ্কার করা যাবে। এ ছাড়া কাদা বা ময়লা দাগ লাগলে মুছে ফেলা যাবে ভেজা কাপড় দিয়ে। তবে হালকা রং বা সাদা ক্রকসের ক্ষেত্রে বেকিং সোডা ও ভিনেগার ব্যবহার করলে ভালো। ক্রকসের ভেতরের ময়লা পরিষ্কার করতে লিন্ট রোলার বেশ কার্যকর। আর আলগা ময়লা পরিষ্কার করতে সফট ব্রাশ ভালো।
এ জুতার সবচেয়ে সুন্দর আর উপকারী দিক হলো, এটি ইউনিসেক্স। ছেলে ও মেয়ে—উভয়েই পরতে পারবে। ওয়েস্টার্ন থেকে শুরু করে ট্র্যাডিশনাল পোশাকের সঙ্গেও চোখ বন্ধ করে পরা যায়। নিত্যদিনের ব্যবহারে যেমন সেরা, তেমনই ভ্রমণে আর পার্টিতেও পরা যাবে। পপিং বা উজ্জ্বল রঙের ক্রকস এখন বেশ ট্রেন্ডি। একটি সাধারণ আউটফিট কিংবা মনোক্রোম পোশাকের সঙ্গে নতুনত্ব যোগ করতে বেছে নেওয়া যায় রঙিন ক্রকস। অন্যদিকে জেন-জিদের মধ্যে বেশ ট্রেন্ডি এখন বড় মোজার ফ্যাশন।
তবে এ সময় নয়, শীতে ক্রকসের সঙ্গে একজোড়া প্রিন্টেড মোজা বেশ আরামদায়ক আর স্টাইলিশ লুক দেবে। এ ছাড়া ফ্রক স্টাইলের জামা, স্কার্ট, ব্যাগি জিনস বা কার্গো প্যান্টের সঙ্গে ক্রকস পরলে ট্রেন্ডি লুক আসবে।
ক্রকস জোড়াকে চাইলে আপনি নিজের মতো সাজাতেও পারেন। এ জন্য ব্যবহার করতে পারেন পছন্দের জিব্বিটজ বা ক্রকস চার্মস। দারাজের মতো অনেক লাইফস্টাইল ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সব চার্মস পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে এই ট্রেন্ডি জুতা আজকাল আরামের পাশাপাশি একটি ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছে আমাদের দেশে।
ছবি: পেকজেলসডটকম