মার্ভেল অব টুমরোর চতুর্থ আসরে লোকাল রুটস, গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট–থিমে নিজের বৈচিত্র্যময় সংগ্রহ উপস্থাপন করেন দেশের সুপরিচিত ডিজাইনার সাফিয়া সাথী। স্থানীয় কাপড়ে বৈশ্বিক মানের পোশাক ডিজাইন করার মাধ্যমে বাংলাদেশের ফ্যাশনকে তুলে ধরাই ছিল এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
‘ফ্যাশন ফরোয়ার্ড’ শিরোনামে ফ্যাশন শোর মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। ডিজাইনার সাফিয়া সাথীর তৈরি পোশাকে শো স্টার্টার হিসেবে র্যাম্প মাতান জনপ্রিয় অভিনেতা আরিফিন শুভ। আর চমক হিসেবে শো স্টপার হয়ে বাজিমাত করেন কনটেন্ট নির্মাতা ও অভিনেতা সালমান মুক্তাদির। র্যাম্পে আরো আলো ছড়িয়েছেন মডেল ও উপস্থাপিকা নীল হুরেরজাহান, সংগীতশিল্পী সুনিধি নায়েক, ইনস্টাগ্রাম কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্বপ্নিল তাজরিন ইচ্ছা ও পেশাদার মডেল নেহা, আরনিরা, স্বাধীন, নিহাফ, সৌরভ, প্রমা, ফাবলিহা ও মেহেরিন। কোরিওগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন ইমু হাশমি আর জুয়েলারি স্পনসর ছিল ‘ড্যাজল বাই সোনিয়া’। দেশীয় কাপড় আর বৈচিত্র্যময় নকশায় রঙিন হয়ে ওঠে পুরো র্যাম্প, যেখানে একঝাঁক জনপ্রিয় মুখের উপস্থিতি এনে দেয় নতুন মাত্রা।
ডিজাইনার সাফিয়া সাথী বলেন, ‘ আমি সারা বছরই লোকাল কাপড় নিয়ে কাজ করি। এবারের থিম আমার কাজের সঙ্গে দারুণভাবে মিশেছে। প্রতিটি পোশাকে দেশীয় ফেব্রিক ব্যবহার করেছি; আর আমাদের নিজস্ব কারিগরেরাই সব কাজ করেছেন। আমাদের বাংলাদেশে উপকরণেও বিশ্বমানের ফ্যাশন তৈরি সম্ভব।’
'সাসটেইনেবল ফ্যাশন এখন আলোচিত, সেটাকেও তুলে ধরা হয়েছে এই শোতে। আমার এই সংগ্রহের সব পোশাক আন্তর্জাতিক বাজার মাথায় রেখেই তৈরি। এসব পোশাকে ব্যবহার হয়েছে র সিল্ক ও সিল্ক', বলেছেন সাফিয়া সাথী। উল্লেখ্য, এই মেধাবী ডিজাইনার মার্ভেল অব টুমরোর চতুর্থ আসরে ক্রিটিকস চয়েস বেস্ট ফ্যাশন ডিজাইনার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
শো স্টার্টার হিসেবে আরিফিন শুভ পরেছিলেন কো-অর্ড স্টাইলের সবুজ হাফহাতা শার্ট ও ট্রাউজার। সিল্কে টাইডাই করার ফলে সবুজে গোলাপি আভা ফুটে উঠেছে। শার্টের সঙ্গে গাঢ় সবুজ পাথর বসানো নেকলেস আর সবুজ রেট্রো সানগ্লাস তাঁর লুককে করেছে আরও আকর্ষণীয়।
চমক হিসেবে শো স্টপার হয়ে সালমান মুক্তাদির পরেছিলেন অল-হোয়াইট কনটেম্পোরারি আভাঁ–গার্দ কো-অর্ড সেট। রাউন্ড নেক জিপার দেওয়া শার্টের সঙ্গে ছিল ওয়াইড লেগ ট্রাউজার, যা তাঁকে দিয়েছে ঝলমলে অথচ আধুনিক এক উপস্থিতি। পুরো লুকের সঙ্গে মানিয়ে যায় এমব্রয়ডারি কাজ করা স্বচ্ছ কেপ, যা যুক্ত করেছে বিশেষ নাটকীয়তা। পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে র সিল্ক।
সাবেক মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ শিরিন শিলা পরেছিলেন কফি রঙের ডিপ কাটের স্লিভলেস ব্লাউজ ও সি-থ্রু ব্রোঞ্জ শেডের শাড়ি। ব্লাউজে ছিল পাখির মোটিফে ভরাট জারদৌসি কাজ, যা লুকে এনেছে এক রাজকীয় সৌন্দর্য। শাড়ি ও ব্লাউজের রং ও ডিজাইনের ভারসাম্য তাঁকে করে তোলে নজরকাড়া। কানে ও হাতে দেখা ছিল ম্যাচিং জুয়েলারি।
উপস্থাপিকা নীলকে দেখা গেছে মিন্ট গ্রিন ওয়ান শোল্ডার স্লিভলেস লম্বা গাউনে, যা তাঁকে দিয়েছে এক অনন্য এলিগ্যান্ট লুক। সঙ্গে পরেছেন পাথরের লম্বা ঝোলানো দুল, সাদা পাথরের ব্রেসলেট ও আংটি পুরো সাজের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়েছে এবং তার উপস্থিতিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
সুনিধি নায়েক মুগ্ধ করেছেন ঝলমলে সোনালি আভায়। তিনি পরেন স্লিভলেস ক্রপড টপ, সঙ্গে ছিল সিয়ার ওভারলে ও একটি আঁটসাঁট পেনসিল স্কার্ট। পোশাকের প্যাটার্ন ও টেক্সচার ছিল দারুণ আকর্ষণীয়।
ফুলেল মোটিফের লুজ ফিট অফ-হোয়াইট শার্টের সঙ্গে মানানসই লুজ ফিট ট্রাউজার এনেছে এক আরামদায়ক অথচ স্টাইলিশ উপস্থিতি। ক্লাসিক হলুদ সানগ্লাস যোগ করেছে দারুণ এক ফিউশন লুক, যা পুরো আউটফিটকে করেছে অনন্য ও নজরকাড়া।
ট্রপিক্যাল রঙের ব্যবহার পোশাকটিকে করেছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। সবুজ আর কমলার উজ্জ্বলতা ফ্রেমে নিখুঁতভাবে ধরা পড়েছে। ফ্লোরাল প্রিন্টের ব্রালেটে ফুসিয়ার সঙ্গে সবুজ পাতার সমন্বয় দিয়েছে প্রাণবন্ত রূপ। সঙ্গে রিল্যাক্সড ফিট প্যান্টের কো-অর্ড সেটে বেশ মানিয়েছে। লালচে কমলা ও সাদা রঙের চেক প্যাটার্নের হল্টারনেক টপ ও কমলা রঙের লম্বা স্কার্টে সবুজ টাইডাইয়ের ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে ভিন্টেজ অ্যাসথেটিক।
ক্রপ টপের সঙ্গে ম্যাচিং স্কার্ট ও লং স্লিভ লুজ কলারের শার্ট ও ট্রাউজারে দেখা যাচ্ছে ফ্লোরাল, ট্রপিক্যাল পাতার মোটিফের আধিপত্য। রঙের প্রাণবন্ত ব্যবহার ও নকশার বৈচিত্র্য পুরো লুকটিকে করেছে উজ্জ্বল, ছন্দময় ও গ্রীষ্মময় আবহে ভরপুর। এই স্টাইলিংয়ে ফুটে উঠেছে একাধারে আরাম, স্টেটমেন্ট ও ট্রেন্ডের নিখুঁত মিশেল।
ক্যাজুয়াল লং স্লিভ শার্ট ও লুজ ফিট ট্রাউজারে ফুটে উঠেছে বোহেমিয়ান লুক।
গোলাপি, হলুদ, বেগুনি ও সোনালি—উজ্জ্বল সব রং একসঙ্গে একই ফ্রেমে এনে দিয়েছে এক প্রাণবন্ত ও চোখধাঁধানো আবহ। রঙের এই বৈচিত্র্য শুধু পোশাকেই নয়, পুরো আয়োজনের উৎসবমুখরতায় যোগ করেছে বিশেষ মাত্রা।
ছবি: আয়োজক