
বলিউডে যতই চকচকে রোমান্স, নিখুঁত হিরো-ইমেজ বা সেলিব্রেটির সাজসজ্জা নিয়ে আলোচনা হোক না কেন ২০২৫ সালে এসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে এক নতুন নান্দনিকতা: ‘মেন’স ওয়াইল্ড বিউটি’।

আর এই সৌন্দর্যের নতুন সংজ্ঞাকে সবচেয়ে শক্তিশালীভাবে সামনে এনেছে বলিউডের নতুন সিনেমা ‘ধুরন্ধর’।
রাগড, র-এন্ড-রিয়েল লুক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুরুষ সৌন্দর্যের নতুন ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধুরন্ধরের ফাস্ট লুক চমকে দিয়েছে দর্শকদের। শক্তিশালী পুরুষ চরিত্রগুলোকে প্রথম দেখাতেই মনে হবে এদের কারও লুকই নিখুঁত নয়, অর্থাৎ “পারফেক্ট হিরো” লুক নয়। বরং দাঁড়ি-গোঁফের আনস্টাইলড গ্রোথ, রোদে পোড়া গভীর ট্যান, চোখের নিচে ক্লান্তির ছাপ, ধুলো, ঘাম, অর্ধভাঙা জ্যাকেট বা রাফ পোশাক, অগোছালো চুল।

শরীরে আঘাতের চিহ্ন এসব মিলেই তৈরি হয়েছে এক নতুন ধরনের আকর্ষণ ওয়াইল্ড মাস্কুলিনিটি। এ সৌন্দর্য “কৃত্রিম গ্ল্যামার” নয়, বরং শক্ত ব্যক্তিত্ব আর অন্য এক স্বাধীনতার সম্মেলন।

সময়য়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান দর্শক আর নিখুঁত, অবাস্তব নায়কের গল্পে আটকে নেই। তারা চায় বাস্তব চরিত্র, রাগড অথচ পরিণত উপস্থিতি। ‘ধুরন্ধর’ ঠিক এই জায়গাতেই বাজিমাত করেছে। পুরুষ চরিত্রদের দেখানো হয়েছে ঠিক জীবনযুদ্ধের মাঝে, অসম্পূর্ণ অথচ শক্তিশালী প্লটে।

কাকটি ওয়েলনেসের প্রতিষ্ঠাতা কিরা জোন্স মনে করেন, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে ফুটিয়ে তোলার এই প্রবণতা মূলত “ওয়েলনেস-ফার্স্ট বিউটি” অর্থাৎ সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া সৌন্দর্যচর্চা বলা যেতে পারে, যা একধরনের নতুন কনসেপ্ট । এটি বেশি কার্যকর, দীর্ঘস্থায়ী এবং পরিবেশবান্ধব। এল্পাইন বিউটির (Alpyn Beauty) প্রতিষ্ঠাতা কেন্ড্রা বাটলার মনে করেন ‘ওয়াইল্ড’ হচ্ছে ন্যাচারাল বিউটি জগতের পরবর্তী ফ্রন্টিয়ার। কারণ প্রকৃতিতে নিজের মতো বেড়ে ওঠা গাছপালা অনেক বেশি টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে।

এই রেজিলিয়েন্স বা জীবনীশক্তি থেকেই তৈরি হয় বেশি কার্যকর, শক্তিশালী স্কিনকেয়ার উপাদান।
সৌন্দর্যের নান্দনিকতায় বড় পরিবর্তন আনছে ওয়াইল্ড বিউটি। এ ধারণা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে নতুন বিউটি-ট্রেন্ডে ক্লিন, ডিউই স্কিন, ন্যাচারাল স্টাইলের চুল, মিনিমাল মেকআপ, ন্যাচারাল স্টোন, গুয়া শা ও ফেস-লিফটিং টুলস, প্রাকৃতিক আভা ও কম প্রসেসড লুক। ২০২৫ জুড়েই এসব নান্দনিকতা জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং নতুন বছরেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ধারা অব্যাহত থাকবে।

ছবির প্রথম লুকে রণবীর সিং হাজির হয়েছেন হেভি স্টাবল ভঙ্গিমায়, বিস্কুট রঙা রোদপোড়া ত্বক, ধুলোমাখা চামড়ার জ্যাকেট, গভীর বন্য চোখ আর শরীরে কাটাছেঁড়ার দাগ নিয়ে। তাঁর এই লুক বার্তা দেয় যে পুরুষ সৌন্দর্য মানে শুধু চকচকে চেহারা নয়; সাহস, অভিজ্ঞতা আর অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিত্বই আসল সৌন্দর্য। উপস্থিতি যেন পাহাড়, জঙ্গল ও পথ হারানো ট্রেইলের একজন যোদ্ধার মতো।
বলিউডের প্রখ্যাত মেকআপ ও চরিত্র ডিজাইনার প্রীতিশীল সিং ডি’সুজা বলেছেন, “ম্যান অব দা আওয়ার - রণবীর সিং। তুমি কখনোই অবাক করা বন্ধ করো না!” তিনি আরও জানান, রণবীরের সঙ্গে বহু বছরের কাজের অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তাঁর নিবেদন, একাগ্রতা ও চরিত্রে পুরোপুরি ঢুকে যাওয়ার ক্ষমতা প্রতিবারই নতুন করে অনুপ্রাণিত করে।

আর. মাধবন অজয় সান্যাল চরিত্রে স্টাইলিশ ও প্রফেশনাল লুকের সঙ্গে পরিপাটি পোশাক এবং শান্ত কিন্তু কড়া ভঙ্গিতে চরিত্রের গভীরতা ফুটিয়ে তুলেছেন।
অর্জুন রামপাল মেজর ইকবাল চরিত্রে ডার্ক ও কঠোর উপস্থিতি প্রদর্শন করেছেন। পেশি, চোখের হিমশীতলতা ও পোশাকের টোনে ‘পারফেক্ট ওয়াইল্ড বিউটি’ ফুটে উঠেছে।
সঞ্জয় দত্ত এস.পি. চৌধুরী আসলাম চরিত্রে মার্জিত লুকে দেখানো হয়েছে। টুপি বা ক্যাপের সঙ্গে ফরমাল পোশাক চরিত্রে বাস্তবতার ছোঁয়া যোগ করেছে।
অক্ষয় খান্না- রহমান ডাকাত চরিত্রে বিপজ্জনক ও প্রভাবশালী মাফিয়ার ছাপ রেখে গেছেন। তাঁর লুক ও কায়িক ভাষা চরিত্রের বন্য আবহকে আরও জীবন্ত করেছে।
প্রতিটি চরিত্রের লুক শুধুই সাজসজ্জা নয়; এটি তাদের ব্যক্তিত্ব, মনোভাব এবং গল্পের আবহকে আরও প্রাঞ্জল ও বাস্তবসম্মত করে তুলে। সিনেমা মুক্তির পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে গেছে— #DurandarLook, #WildManTrend, #RuggedIsReal হ্যাস ট্যাগ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে পুরুষেরা এখন আগের মতো নিখুঁত ট্রিমড দাঁড়ি নয় অগোছালো, ন্যাচারাল দাঁড়ির ছবিই পোস্ট করছেন বেশি।
ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোও বিগত কয়েক বছরে আনছে— রাফ ডেনিম, ডার্ক আর্থ-টোন আউটফিট, লেদার অ্যাকসেসরিজ, ট্রেকিং-ইনস্পায়ার্ড জুতো, স্টেবল-হেভি গ্রোমিং লাইন। বলা যায় নেচার-টাচড ও র’ লুকই এখন মেন’স বিউটির নতুন ন্যারেটিভ। এই ওয়াইল্ড বিউটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি বাহ্যিক সাজের নয়, বরং পুরুষের মানসিক, আবেগীয়, ও বেঁচে থাকার শক্তির প্রতিফলন।

এই লুক সরবে বলে যায়, আমি পারফেক্ট নই কিন্তু আমি বাস্তব জগতের এবং আমি অপ্রতিরোধ্য। মেনস ওয়াইল্ড বিউটি এমন এক সৌন্দর্য, যা শিল্প, সিনেমা এবং সামাজিক ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে।
‘ধুরন্ধর মুভির লুকগুলো’ শুধু সিনেমা নয়; এটি পুরুষ সৌন্দর্যের নতুন দর্শন। এখানে সৌন্দর্য মানে নিখুঁত নয় বরং বেঁচে থাকার চিহ্নই সৌন্দর্য।
ছবি: আইএমডিবি