অনন্য বয়নে জামদানি উৎসবে পর্দা নেমেছে গতকাল শনিবার। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় ১১ দিনের এই প্রদর্শনী দেশব্যাপী জামদানি-অনুরাগীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আয়োজকদের তরফে জানানো হয়েছে যে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি দর্শনার্থী এসেছেন প্রকৃত জামদানির বয়ন আর নকশার শুদ্ধতা সংরক্ষণের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানাতে। কাল সমাপনী অনুষ্ঠানে সবার বক্তব্যের মধ্যে বিদায়ের সুরের সঙ্গে সঙ্গে তাই এই উদ্যোগ সার্থক হওয়ার ফলে একধরনের তৃপ্তিবোধ অনুভূত হয়েছে।
জাতীয় চিত্রশালার গ্যালারি ৭ সংলগ্ন অডিটরিয়ামে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন প্রদর্শনীর কিউরেটর, দেশের প্রখ্যাত ডিজাইনার চন্দ্রশেখর সাহা। বয়নশিল্পীদের যথাযথ মূল্যায়ন, জামদানি বয়নশিল্পে তাঁদের ক্র্যাফটসম্যানশিপের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে সবাই মিলে কাজ করা আর বয়নশিল্পীদের ভালো থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করায় জোর দেন তিনি।
আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ফ্যাশন সাংবাদিক শেখ সাইফুর রহমান জামদানিকে বিশ্বজনীন করার জন্য এর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা ও এর সঙ্গে জড়িত পরিবেশবিষয়ক বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তরুণ প্রজন্মের কাছে জামদানির ইতিহাস ও সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে পারলে তাঁরাই আমাদের দেশের এই অনন্য কারুশিল্পকে রক্ষা করে এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী আজমেরী হক বাঁধন। তাঁর পরা বেইজ শেডের নিখুঁত নকশার জামদানিটি এই আয়োজনের মূল সুরের সঙ্গে একেবারে মিলে যায়। এমনিতেও বাঁধনকে আমরা জামদানিপ্রেমী বলেই জানি। কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর সাড়াজাগানো জামদানি শাড়ির সাজ থেকে শুরু করে বেশির ভাগ বিশেষ অনুষ্ঠানেই বাঁধনকে জামদানিতে দেখা যায়।
তাঁর বক্তব্যেও সে কথা উঠে আসে প্রাসঙ্গিকভাবে। দেশি শাড়িতে নিজেকে উপস্থাপন করে ভক্ত ও অনুরাগীদের দেশের বস্ত্রশিল্পের ধারক ও বাহক হিসেবে দেখতে চান বাঁধন। জামদানিশিল্পে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও আসে তাঁর বক্তব্যে। আর এই উৎসবে অংশগ্রহণ করার ধারাবাহিকতায় সেবা নারী ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র জামদানির বয়নশিল্পীদের নিয়ে কীভাবে কাজ করছে, তা জেনে আপ্লুত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন বাঁধন।
সমাপনী অনুষ্ঠানের সবচেয়ে মনোগ্রাহী পর্বটি ছিল এই প্রদর্শনীর জন্য অক্লান্ত পরিশ্রমে শাড়ি বুনেছেন যাঁরা, সেই সব বয়নশিল্পীর সম্মাননা জানানো। ২২ জন হারকিত বা শাগরেদ বয়নশিল্পীকে মঞ্চে ডেকে সনদ প্রদান করা হয়। এরপর আসেন পাঁচজন ওস্তাদ বয়নশিল্পী মো. এনামুল হক, মো. সজীব, মো. আবু সিদ্দিক, মো. রাজন মিয়া ও মো. জামাল হোসেন।
এরপর পুরো আয়োজনের ভিডিওগ্রাফি ও ডকুমেন্টেশনের দায়িত্বে থাকা বুলবুল আহামেদ জয় টেলিভিশন, প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যমের সব সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এই প্রদর্শনীর সংবাদ যথাযথভাবে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
পরিশেষে সেবা নারী ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সাইদা রোকসানা খান এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ও সেবা কীভাবে জামদানি বয়নশিল্প ও বয়নশিল্পীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। সবার বক্তব্য শেষে সেবার সদস্যদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আফরোজা বিনতে ইলিয়াস।
উল্লেখ্য, এই প্রদর্শনী ও সেমিনারের পুরো আয়োজন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন পিকেএসএফের সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রকল্পের অধীন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের মাধ্যমে হয়েছে। আর এতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে সেবা নারী ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র। সার্বিক তথ্য, পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ।
এখন থেকে এই প্রদর্শনীর সংক্ষিপ্ত আকারে দেখার সুযোগ থাকবে সেবা পরিচালিত জামদানি প্রচার ও বিক্রয়কেন্দ্র টানাপোড়েনে (ফ্ল্যাট ২বি, বাড়ি ১৩ই, রোড ১০৮, গুলশান)।
ছবি: সেবা নারী ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র