বাঁধনিতে বাঁধা পড়েছে নাইকি ও নরব্ল্যাক নরহোয়াইট
শেয়ার করুন
ফলো করুন
বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় স্পোর্টস ব্র্যান্ড নাইকি প্রথমবারের মতো একটি ভারতীয় ফ্যাশন লেবেলের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে। দিল্লিভিত্তিক এই ব্র্যান্ডের নাম ‘নরব্ল্যাক নরহোয়াইট’। ব্র্যান্ডটির নামের বাংলা করলে দাঁড়ায়: সাদাও না, কালোও না। এই নামের সঙ্গে মিল রেখে নাইকি নিয়ে এসেছে রঙিন ও নিখুঁত নকশার খেলাধুলার পোশাক ও স্পোর্টস শুয়ের সংগ্রহ। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, এই সংগ্রহের প্রেরণা হয়েছে ভারতের প্রাচীন ‘বাঁধনি’ নকশা।

বাঁধনি প্রাচীন টাই–ডাই কৌশল
বাঁধনি প্রাচীন টাই–ডাই কৌশল

বাঁধনি প্রাচীন ভারতে প্রচলিত একটি টাই-ডাই কৌশল। এই প্রাচীন পদ্ধতি চার হাজার বছরের বেশি পুরোনো। মূলত ভারতের গুজরাট ও রাজস্থানে এর জন্ম। কথিত আছে, রাজপুত রানিরা যখন বর্ষাকালে একরঙা শাড়ি পরতেন, তাঁদের শাড়িতে বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়লে দাগ হয়ে নকশা তৈরি হতো। এই নকশাকে দীর্ঘস্থায়ী করে রাখার ইচ্ছা থেকেই বাঁধনি নকশার জন্ম। একরঙা কাপড়কে বেঁধে বেঁধে, রঙে চুবিয়ে, রোদে শুকিয়ে কাপড়ে নকশা আনা হতো। অন্যদিকে সিন্দু সভ্যতায় এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল বলেও উল্লেখ মেলে।

বিজ্ঞাপন

নরব্ল্যাক নরহোয়াইট ব্র্যান্ডটি বেশ কয়েক বছর ধরেই তাঁদের নকশায় ‘বাঁধনি’কে যুক্ত করছে। নাইকির প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নারীদের খেলাধুলায় আরও উৎসাহিত করা এবং তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো এই রঙিন সংগ্রহের উদ্দেশ্য। এই প্রচারণাকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছেন এর মডেলরা। ছবিগুলোতে দেখা যায় ভারতের নারী খেলোয়াড়দের। এর মধ্যে আছেন ক্রিকেটার জেমিমা রড্রিগেজ ও শেফালি ভার্মা, রেসলার অংশু মালিক ও স্প্রিন্টার প্রিয়া মোহন। ছবি তুলেছেন জনপ্রিয় ফ্যাশন ফটোগ্রাফার ভারত সিক্কা। রাজস্থানের ‘পিংক সিটি’ জয়পুরের বিখ্যাত ‘স্টেপওয়েল’ ছবিগুলোর লোকেশন হিসেবে নজর কাড়ে।

বেশ কয়েকজন নারী ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছেন এই ক্যাম্পেইন শুটে
বেশ কয়েকজন নারী ক্রীড়াবিদ অংশ নিয়েছেন এই ক্যাম্পেইন শুটে
প্রচারনায় আছেন শেফালি ভার্মা
প্রচারনায় আছেন শেফালি ভার্মা

১৯৯৫ সালের পর থেকে এটি নাইকির একটি ‘স্মার্ট মুভ’ বলে মনের করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি সরবরাহের মাধ্যমে ব্র্যান্ডটি প্রথম ভারতে প্রবেশ করে। এ তকিছুর পরেও দেশটিতে তাঁদের বাণিজ্যিক সাফল্য উল্লেখ করা মতো নয়। ২০১৯ সালের এক রিপোর্টের বলছে, ভারতে নাইকির স্টোরের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়। বর্তমান স্টোরের সংখ্যা মাত্র ৯৩টি। অনেকে আবার বলছেন, এই স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ডটি নারীদের জন্য পণ্য তৈরিতে বেশি ঝুঁকেছে। এতে করে পুরুষ অ্যাথলেটরা ব্র্যান্ডটির মনোযোগ হারাচ্ছেন।

এই যৌথ উদ্যোগের অন্য অংশে আছে  ব্র্যান্ড ‘নরব্ল্যাক নরহোয়াইট’। তাঁদের সংগ্রহে আছে হুডি, ট্যাংক টপ, টি-শার্ট, স্পোর্টস ব্রা, ক্রস-বডি ব্যাগ ও স্নিকারস। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘এয়ার ম্যাক্স’–এর নতুন সংস্করণ। প্রতিটি পোশাকে ফুটে উঠেছে বাঁধনিশিল্পের নান্দনিক ছাপ। এই ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুই কানাডিয়ান ডিজাইনার মৃগ কাপাডিয়া ও অমৃত কুমার।

ছবি তোলা হয়েছে জয়পুরে
ছবি তোলা হয়েছে জয়পুরে
অংশ নিয়েছেন প্রিয়া মোহন
অংশ নিয়েছেন প্রিয়া মোহন

২০১০ সালে ভারতে আসার পর তাঁরা স্থানীয় কারুশিল্প, রং ও কাপড়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরির কথা ভাবেন, যার লক্ষ্য হবে পশ্চিমা স্ট্রিটওয়্যারের সঙ্গে ভারতীয় হস্তশিল্পের মিশেল ঘটানো। এই স্বপ্নেরই প্রতিফলন নরব্ল্যাক নরহোয়াইট ব্র্যান্ডটি। এই উদ্যোগ নিয়ে উচ্ছ্বসিত মৃগ কাপাডিয়া বলেন, ‘ফ্যাশনের সঙ্গে আমাদের পরম্পরাগত জ্ঞানের সম্মিলন ঘটেছে এ উদ্যোগে। আশা করছি, প্রত্যেক ফ্যাশনপ্রেমী ও নারী ক্রীড়াবিদ একে সাদরে গ্রহণ করবেন।’

নাইকি ও নরব্ল্যাক নরহোয়াইটের এই কোলাবরেশন ভারতের ফ্যাশনপ্রেমীদের জন্য সুখবর। তবে ফ্যাশনের পাশাপাশি এই উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়নের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আছেন কুস্তিগীর অংশ মালিক
আছেন কুস্তিগীর অংশ মালিক

বাঁধনির কারিগর হিসেবে আজও অনেক নারী কাজ করেন। তবে টাই-ডাইয়ের জনপ্রিয়তার যুগে নারী শ্রমিকেরা তাঁদের কারিগরির গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছিলেন। নাইকির এই সুপরিকল্পিত ‘ব্যবসাকৌশল’ তাঁদের জন্য নতুন করে কাজের সুযোগ করে দেবে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ছবি: নরব্ল্যাক নরহোয়াইটের ইন্সটাগ্রাম হ্যান্ডল

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১০: ০০
বিজ্ঞাপন