একঝাঁক ফ্যাশনেবল তরুণ। দারুণ সব স্টাইলিশ সাজপোশাক আর জুতার সঙ্গে পরেছেন আল্ট্রা মডার্ন ডিজাইনের লুঙ্গি। দেশের জনপ্রিয় ‘আমানত শাহ্ লুঙ্গি’র ঈদ ক্যাম্পেইনে দেখা যাচ্ছে এ রকমই চমক। দৈনন্দিন পরিধেয়র পাশাপাশি লুঙ্গি যেন নতুন প্রজন্মের ফ্যাশনসঙ্গী হতে পারে, এটাই ছিল ব্র্যান্ডটির মূল লক্ষ্য।
লুঙ্গি পরে ফাইভ স্টার হোটেলে যাওয়া বা বন্ধুরা মিলে হ্যাংআউট করা ইত্যাদি ব্যাপার চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে করা হয় মাঝেমধ্যে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায়ও আসে। আবার লুঙ্গি পরা বলে কোন কোন জায়গায় প্রবেশাধিকার নেই, এ রকম বিতর্কেরও অবতারণা হয়েছে। অথচ এ দেশে সব শ্রেণি ও পেশার পুরুষদের সর্বজনীন পোশাক লুঙ্গি। অবশ্য এশিয়া মহাদেশের অনেক দেশে লুঙ্গি পরার চল রয়েছে। মূলত বার্মিজদের হাত ধরে এদিকে আসার কথা জানা গেলেও লুঙ্গি এখন বাঙালিয়ানার প্রতীক। আমাদের দেশেও পুরুষের আরামের পোশাক বলতে সবার আগে আছে লুঙ্গি।
লুঙ্গির আরামের ব্যাপারে একেবারেই আপসহীন এর অনুরাগীরা। আদিবাসীদের পোশাকের অনুপ্রেরণায় অনেক মেয়েও লুঙ্গি পরতেন, এখনো পরেন। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও হাই ফ্যাশনে লুঙ্গি যেন ব্রাত্য। অথচ দক্ষিণ ভারতীয়রা সুপারস্টার শাহরুখ খানের লুঙ্গি ড্যান্সের মতো সদর্পে পরেন লুঙ্গি সব জায়গায়।
দেশীয় পোশাকের ঐতিহ্যের বড় অংশ হলেও লুঙ্গিকে কখনো স্টাইল বা ফ্যাশন হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি এ দেশে। আবার লুঙ্গিতে কেবল কয়েকটা সনাতনী ডিজাইনের সঙ্গেই আমরা পরিচিত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আমানাত শাহের নতুন এই ঈদ সংগ্রহে ডিজাইনের ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে বহুদূর। গতানুগতিক চেক, স্ট্রাইপ বা বাটিক প্যাটার্নের বাইরে গিয়ে ফ্যাশনপ্রেমীদের কিছুটা অন্য রকম আমেজ দেবে এবারের নিরীক্ষাধর্মী নকশাগুলো। গরমের কথা মাথায় রেখে শতভাগ সুতি কাপড়ে তৈরি করা হয়েছে লুঙ্গিগুলো। শতাধিক ডিজাইনের লুঙ্গি রয়েছে এই সংগ্রহে। কালো, লাল, কমলা, হলুদ, সাদার মতো রঙের জমিনে ফুটে উঠেছে বাহারি নকশা। আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী ডিজাইন তো রয়েছেই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুনত্বও।
ব্র্যান্ডটির তরফ থেকে জানানো হয়, এই লুঙ্গির কাঁচামাল, তৈরির পদ্ধতি সবই দেশীয়। নিজস্ব স্পিনিং মিলস থেকে উৎপাদিত সুতা থেকেই তাদের সব পণ্য তৈরি হয়। এ ছাড়া লুঙ্গি তৈরিতে উন্নত মানের পাকা রং ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিএসটিআই অনুমোদিত। রং ও নকশায় দেশি সংস্কৃতির পাশাপাশি পশ্চিমা ছোঁয়াও রেখেছে ব্র্যান্ডটি। রিকশা, সিএনজি, আলপনা, দেশীয় সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রাণিত মোটিফ, দিনে ও রাতে শহরের রূপের মতো ডিজাইনগুলোকে ফোকাস করা হয়েছে।
রং নির্বাচন বেশ বুদ্ধিদীপ্ত বলা চলে, যা যেকোনো শার্ট, টি–শার্ট বা পাঞ্জাবির সঙ্গে পরা যাবে। যেকোনো উৎসবে বটম হিসেবে লুঙ্গির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে ওপরের অংশে কী পরা হবে, এই বিষয়ও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনতে ফিউশনধর্মী স্টাইল বেছে নিতে পারেন তরুণেরা।
লুঙ্গিসহযোগে একটি সম্পূর্ণ লুক তৈরি করতে এই ঈদে পাঞ্জাবি ও লুঙ্গির সঙ্গে পরা যেতে পারে কনভার্স বা কালো চামড়ার জুতা। যেকোনো আউটফিট সাহসের সঙ্গে ধারণ করতে পারলে, ইংরেজিতে যাকে বলে ক্যারি করতে পারলেই ফ্যাশন পায় পরিপূর্ণ রূপ। তাই ব্লেজারের সঙ্গেও কিন্তু চাইলে লুঙ্গি পরা যায়। এ ক্ষেত্রে স্টাইলের দৌড়ে একধাপ এগিয়ে থাকতে লুঙ্গির সঙ্গে একটি কালো রঙের বেল্ট কোমরে বেশ মানাবে। আর ব্লেজারের নিচে অনায়াসে পরা যায় পছন্দের একরঙা শার্ট বা টিশার্ট।
আমানত শাহ গ্রুপের পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এই লুঙ্গিশিল্প দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে লুঙ্গি পরা স্বভাবের বাইরের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, লুঙ্গি পরাকে হেয় করেও দেখা হয়।
রেজাউল করিম জানান, তরুণদের কাছে লুঙ্গিকে জনপ্রিয় করার জন্যই তাঁদের এই উদ্যোগ। ভবিষ্যতে কীভাবে লুঙ্গির জনপ্রিয়তা বাড়ানো যায়, তাঁরা তা নিয়ে আরও কাজ করছেন।
ছবি: আমানত শাহ গ্রুপ