বার্লিনে পূর্ণার উপস্থাপনা হেরিটেজ ইন মডার্ন আই
শেয়ার করুন
ফলো করুন

গেল ৩০ অক্টোবর বার্লিনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল বার্লিনে অনুষ্ঠিত হয় ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: বাংলাদেশ-জার্মানি ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৩’। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) এই যৌথ আয়োজনে সহযোগী হিসেবে ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুই দেশের দূতাবাস। ইভেন্টটির অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘হেরিটেজ ইন মডার্ন আই’ শিরোনামে ফ্যাশন শো।

‘হেরিটেজ ইন মডার্ন আই’ শিরোনামে পূর্ণার সংগ্রহ
‘হেরিটেজ ইন মডার্ন আই’ শিরোনামে পূর্ণার সংগ্রহ

ডিজাইন ইন গ্লোবাল ফাউন্ডেশনের ব্যানারে ডিজাইন ইন বাংলাদেশ টিম আয়োজন করে এই ফ্যাশন শো। এই সংগ্রহ মূলত ছিল বাংলাদেশের হেরিটেজের প্রতি তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার রোকাইয়া আহমেদ পূর্ণার বিশেষ ট্রিবিউট। এই বিশেষ ফ্যাশন শোয়ের মধ্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে বাংলাদেশ কেবল পোশাক তৈরি ও রপ্তানির কেন্দ্রবিন্দু নয়, ডিজাইনের জন্য একটি সৃজনশীল কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।

বিজ্ঞাপন

‘হেরিটেজ ইন মডার্ন আই’ ফ্যাশন শো নিয়ে বলার আগে ‘ডিজাইন ইন গ্লোবাল (ডিআইজি)’ নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন। বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য মোহাম্মদ জুবায়ের হোসেন ২০২২ সালে এই অলাভজনক সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের সাব-চেইন ডিজাইন ইন বাংলাদেশ (ডিআইবি)। সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য হলো এ দেশে ফ্যাশনের ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কাজ করা। ডিজাইন ইন গ্লোবালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নতুন প্রজন্মের মেধাবী ফ্যাশন ডিজাইনার রোকাইয়া আহমেদ পূর্ণা।

শো শেষে মডেলদের সঙ্গে নিয়ে অভিবাদন গ্রহণ করছেন ফ্যাশন ডিজাইনার পূর্ণা (মাঝে কালো পোশাকে)
শো শেষে মডেলদের সঙ্গে নিয়ে অভিবাদন গ্রহণ করছেন ফ্যাশন ডিজাইনার পূর্ণা (মাঝে কালো পোশাকে)

২০১৫ সালে পূর্ণার ফ্যাশন ডিজাইনিং ক্যারিয়ার শুরু হয়। আট বছরের ক্যারিয়ারে অংশগ্রহণ করেছেন ফ্যাশনের অনেক আন্তর্জাতিক ইভেন্টে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০১৭ সালে উহান ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন উইক, ২০১৮ আইডি ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন উইক, ২০১৯ সালে রাশিয়ায় মার্সিডিজ বেঞ্জ ফ্যাশন উইক ইত্যাদি। এ ছাড়া তাঁর পোশাক প্রদর্শিত হয়েছে নিউজিল্যান্ডের ওটাগো মিউজিয়ামে।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরের শুরুতে ফ্রাঙ্কফুর্টভিত্তিক পরিবেশবান্ধব ফ্যাশন ব্র্যান্ড দ্য ইকেএন বাজারে এনেছিল সীমিত সংস্করণের ভিগান স্নিকার দ্য ইকেএন কামথালা বা কাঁঠাল, যা ডিজাইন করেন পূর্ণা। স্নিকার ডিজাইনের মধ্য দিয়ে পূর্ণা ও বাংলাদেশের নাম আরও ভালোভাবে ছড়িয়েছে ফ্যাশন–দুনিয়ায়। তাঁর এই সাফল্য দেখেই বাংলাদেশ সরকার ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: বাংলাদেশ-জার্মানি ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৩’-এ ফ্যাশন শোর জন্য ডিজাইন ইন বাংলাদেশকে নির্বাচন করেন।

‘হেরিটেজ ইন মডার্ন আই’ শিরোনামে পূর্ণার সংগ্রহ ২
‘হেরিটেজ ইন মডার্ন আই’ শিরোনামে পূর্ণার সংগ্রহ ২

‘হেরিটেজ ইন মডার্ন আই’ ডিজাইন ইন বাংলাদেশ টিমের হৃদয়ের কাছের একটি থিম। সংগঠনের সবাই অনেক আগে থেকে এই থিম নিয়ে কাজ করছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’-এ ডিআইবি তাদের উদ্ভাবিত অনেক ফ্যাশনেবল পণ্য প্রদর্শন করে। সেই পণ্যগুলো দেশীয় সব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরে। এবারের সামিটেও পূর্ণার ডিজাইনে টিম ডিআইবি এই থিমে একটি অসাধারণ সংগ্রহ উপস্থাপন করে।

এই সংগ্রহের মূল অনুপ্রেরণা ছিল বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। ছয় ঋতু এর একটি। বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এত বেশি ঋতু নেই। কিন্তু সেই ঋতুবৈচিত্র্য আমরা এখন হারাতে বসেছি। ডিআইবি ছয় ঋতু ও দেশের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর রং ও থিম নিয়ে কালেকশন দাঁড় করিয়েছে। ফ্যাশন শোতে সবার আগে বাংলাদেশের চারটি ঐতিহ্যবাহী শাড়ি—জামদানি, বেনারসি, মণিপুরি ও আদিবাসী পিনন থামির সঙ্গে সিল্ক প্রদর্শিত হয়।

‘হেরিটেজ ইন মডার্ন আই’ শিরোনামে পূর্ণার সংগ্রহ ৩
‘হেরিটেজ ইন মডার্ন আই’ শিরোনামে পূর্ণার সংগ্রহ ৩

এরপর দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হয় সমসাময়িক ভাবনার একটি ফিউশনধর্মী কালেকশন। এই সংগ্রহে ছিল লুঙ্গি, ব্লেজার, প্যান্ট, শার্ট, মিডি ড্রেস ইত্যাদি। পোশাকে সব এমব্লিশমেন্ট কাঁথা স্টিচে করা হয়। পোশাকের জমিনে কাঁথা স্টিচ দিয়ে দেশীয় মোটিফ যেমন দোয়েল, এক টাকার কয়েনের শাপলা ফুল, বাঘ, টিয়াপাখি, নারিকেলগাছ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ফেব্রিক হিসেবে সিল্ক বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। এই সংগ্রহের কালার প্যালেট ষড়্‌ঋতু, আর সে সময়ে ফোটা ফুল ও ফলের রং থেকে সাজানো হয়েছে। রানওয়ে শোতে হাঁটা মডেলদের মেকআপের আউটলাইনও ষড়্‌ঋতুকেন্দ্রিক।

ডিজাইন ইন বাংলাদেশ টিমের দীর্ঘদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে ‘হেরিটেজ ইন মডার্ন আই’ সংগ্রহটি দাঁড় করানো সম্ভব হয়। এখানে পূর্ণা ছাড়াও আরও ফ্যাশন ডিজাইনার কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিজাইনার কামরুল ইসলাম মিশু, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ জুবায়ের হোসেন, রানওয়ে শো ডিরেকশন করেছেন যাহা মার্টিন অপ্সরা, কোরিওগ্রাফার ছিলেন ড্যানিয়েল। ডিজাইন ইন বাংলাদেশ অনেক আগে থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রান্তিক কারুশিল্পীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার কাজ করছে। এই সংগ্রহ তৈরিতে এমন ১৫ জন কারুশিল্পী আলাদাভাবে দক্ষতার সঙ্গে পোশাকগুলো তৈরি করেছেন।

ছবি: ডিজাইন ইন গ্লোবাল

প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ০০
বিজ্ঞাপন